শিরোনাম
◈ মালয়েশিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য, কেউ কেউ আইএসের সঙ্গে যুক্ত (ভিডিও) ◈ এনসিপির ছায়ায় ফিরছে আওয়ামী লীগ : সাবেক এমপি কায়কোবাদ ◈ জমি অধিগ্রহণের পর সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল: চীনা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ (ভিডিও) ◈ সার্ক অচল: চীন-পাকিস্তানের বিকল্প জোট গঠনের ভাবনা, বাংলাদেশ জানালো অংশ নেয়ার পরিকল্পনা নেই ◈ দে‌শি আম্পায়ার‌দের দক্ষতা বাড়া‌তে ৩ বছরের জন্য অ‌স্ট্রেলিয়ান সাইমন টাফেলকে নিয়োগ দিচ্ছে বিসিবি ◈ বিপিএল শুরু হ‌বে জানুয়া‌রি‌তে, দল এখ‌নো চূড়ান্ত হয়‌নি  ◈ আর্জেন্টিনার ফুটবল ম্যাচে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: পতাকা, কফিন, ড্রোন—৫ সমর্থক গ্রেপ্তার, নিষেধাজ্ঞা জারি ◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০১ জুলাই, ২০২৫, ০২:৫০ রাত
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০২৫, ১১:৪২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?"

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন অপরিহার্য। কিন্তু প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতিতে অনেক সময় ভোটের পরিসংখ্যান এবং সংসদীয় আসনের মধ্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা যায়। সামান্য কিছু বেশি ভোট পেয়ে কোনো দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, আবার কাছাকাছি ভোট পেয়েও অন্য দল নামমাত্র আসন পায়। এই ব্যবস্থার একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি।

এই প্রতিবেদনে পিআর পদ্ধতির ধারণা, এর প্রয়োজনীয়তা, বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পিআর পদ্ধতি কী?

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা জোট প্রাপ্ত ভোটের হারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা আনুপাতিক হারে আইনসভায় আসন লাভ করে। অর্থাৎ, কোনো দল যদি নির্বাচনে মোট ভোটের ২০% পায়, তবে আইনসভার মোট আসনের প্রায় ২০% তাদের প্রাপ্য হবে।

উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞা অনুযায়ী, "আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে ভোটারদের রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট প্রাপ্তির হার অনুযায়ী।" এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভোটের অপচয় রোধ করা এবং সংসদে সব মতের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

কেন প্রয়োজন? প্রচলিত পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ (FPTP) বা ‘সরাসরি সংখ্যাগরিষ্ঠের’ পদ্ধতি প্রচলিত। এই পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনী এলাকায় যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পান, তিনিই নির্বাচিত হন, भले তিনি মোট ভোটের একটি ক্ষুদ্র অংশই পান। এর ফলে তৈরি হয় নানা অসামঞ্জস্য।

বাংলাদেশের নির্বাচনের উদাহরণ:

  • ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন: বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ৪০.৮৬% ভোট পেয়ে ১৯৩টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে, প্রায় সমান ভোট (৪০.২২%) পেয়েও আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২টি আসনে জয়ী হয়। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

  • ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ৪৮.০৪% ভোট পেয়ে ২৩০টি আসন অর্জন করে। অন্যদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ৩২.৫০% ভোট পেয়ে মাত্র ৩০টি আসন পায়। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, FPTP পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ভোট এবং আসনের মধ্যে কোনো আনুপাতিক সামঞ্জস্য নেই। পিআর পদ্ধতি চালু থাকলে ভোটের এই বিশাল ব্যবধান দূর হতো এবং সংসদ আরও প্রতিনিধিত্বমূলক হতো।

একটি বাস্তব উদাহরণ: ধরা যাক, কোনো আসনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ‘ক’ প্রার্থী ২৫% ভোট পেয়ে জয়ী হলেন। বাকি তিনজন প্রার্থী মিলে যে ৭৫% ভোট পেলেন, FPTP পদ্ধতিতে সেই বিপুল সংখ্যক ভোটের কোনো মূল্য থাকে না। অর্থাৎ, ওই আসনের ৭৫% ভোটারের মতামতের কোনো প্রতিফলন সংসদে ঘটে না। পিআর পদ্ধতি এই "হারানো ভোট" (Lost Votes) বা ভোটের অপচয়ের সমস্যা সমাধান করে।

পিআর পদ্ধতির বিশ্বজুড়ে প্রয়োগ ও ইতিহাস

  • প্রথম প্রচলন: আধুনিক বিশ্বে সর্বপ্রথম ১৮৯৯ সালে বেলজিয়ামে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

  • বর্তমান চিত্র: বর্তমানে বিশ্বের ১৭০টি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ৯১টি দেশ, অর্থাৎ প্রায় ৫৪% রাষ্ট্র, তাদের আইনসভা নির্বাচনে কোনো না কোনো ধরনের পিআর পদ্ধতি ব্যবহার করে।

  • উন্নত বিশ্বে জনপ্রিয়তা: অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি (OECD)-এর ৩৬টি সদস্য দেশের মধ্যে ২৫টি, অর্থাৎ প্রায় ৭০% দেশ, এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন এবং লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশেই এই ব্যবস্থা প্রচলিত।

পিআর পদ্ধতির প্রধান ধরন

পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের একাধিক উপায় রয়েছে। প্রধান কয়েকটি হলো:

১. বদ্ধ তালিকা পদ্ধতি (Closed List PR): ভোটাররা শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলকে ভোট দেন। দলগুলো নির্বাচনের আগে তাদের প্রার্থীদের একটি তালিকা জমা দেয়। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে তালিকার ক্রম অনুযায়ী প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।
২. মুক্ত তালিকা পদ্ধতি (Open List PR): ভোটাররা দলকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি পছন্দের প্রার্থীকেও বেছে নিতে পারেন। দলের প্রাপ্ত আসনের সাথে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।
৩. মিশ্র সদস্য আনুপাতিক পদ্ধতি (Mixed-Member Proportional - MMP): এই পদ্ধতিতে কিছু আসনে সরাসরি FPTP পদ্ধতিতে এবং বাকি আসনগুলো পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডে এই মিশ্র ব্যবস্থা বেশ সফলভাবে কার্যকর রয়েছে।

বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির পক্ষে তাদের মতামত জানিয়েছে। তাদের যুক্তি হলো, এর মাধ্যমে ছোট দলগুলোরও সংসদে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি কেবল একটি বিকল্প নির্বাচন ব্যবস্থা নয়, এটি গণতন্ত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য এবং কার্যকর করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে আইনসভায় জনগণের প্রকৃত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়ে এবং উগ্রপন্থা হ্রাস পায়। উন্নত বিশ্বের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে, দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে আরও অর্থবহ করতে পিআর পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে।

সূত্র:

  • প্রদত্ত প্রাথমিক তথ্য।

  • উইকিপিডিয়া (বিভিন্ন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও ফলাফল সংক্রান্ত তথ্য)।

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়