এক বছর বিলম্বের পর ঢাকা বিমানবন্দরের নতুন থার্ড টার্মিনাল চলতি বছরের শেষ নাগাদ চালু করতে চায় সরকার। তবে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি পেতে যাওয়া জাপানি কনসোর্টিয়াম প্রস্তুতির জন্য আরও দুই মাস সময় চাইছে।
তবে এই নতুন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই টার্মিনাল পুরোদমে চালু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ বছরের জুনের মধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর তারা প্রস্তুতির জন্য ছয় থেকে আট মাস সময় চেয়েছে। আমরা বলেছি, পাঁচ-ছয় মাসের বেশি দিতে পারব না।'
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল আংশিক করেন। এবং প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ২০২৪ সালেই এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে।
কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, প্রকল্পের নেতৃত্বে ঘন ঘন পরিবর্তন ও বিদেশ থেকে বিশেষ কিছু সরঞ্জাম—বিশেষ করে ভিভিআইপি টার্মিনালের জন্য—বিলম্বে আসায় সময়সীমা পিছিয়ে যায়।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, 'থার্ড টার্মিনালে আমাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে। শুধু ভিভিআইপি টার্মিনালে কিছু কাজ বাকি আছে। এটা শেষ হতে জুন-জুলাই লেগে যাবে। কারণ এখানে চুক্তিগত কিছু জটিলতা ছিল।'
মঞ্জুর কবীর আরও বলেন, 'আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে এগুলোকে স্ট্রিমলাইন করে সিস্টেমের মধ্যে আনতে একটু সময় লেগেছে। এখন নিয়মানুযায়ী কাজ হচ্ছে। যেহেতু কিছু সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আসবে, সে কারণে একটু সময় লাগছে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের টার্গেট হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা। কোনো কারণে যদি একেবারেই না পারি, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।'
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে থার্ড টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এই কনসোর্টিয়ামে রয়েছে জাপান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কোম্পানি, সুমিতোমো কর্পোরেশন, সোজিৎস ও নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট করপোরেশন। কনসোর্টিয়ামটি অপারেশনাল কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকবে, আর নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে বেবিচক।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর জাপানি অংশীদারদের জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করতে হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, 'তাদেরকে প্রত্যেকটা সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখতে হবে এগুলো ঠিকঠাক চলছে কি না। ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম থেকে শুরু করে স্ক্যানিং মেশিন, ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম) ইত্যাদি একটি নির্দিষ্ট সময় রান করে দেখতে হবে।'
মঞ্জুর কবীর আরও বলেন, 'ট্রায়াল রান তারা করবেন, আমরা এগুলো দেখব। পরে আমার সঙ্গে কনসোর্টিয়ামের একটি কনসেশন এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর হবে। এগুলো করতে কিছু সময় লাগবে। এরপর যখন সব চালু হবে, আমরা পুরো কার্যক্রম শুরু করব।'
একটি পৃথক সার্ভিস-লেভেল এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী পরের দুই বছর জাপানি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে গ্রাউন্ড সার্ভিস পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ডেটা নিরাপত্তা বেবিচকের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
প্রি-বিড আলোচনা অনুযায়ী, টার্মিনালের কার্যক্রম থেকে আসা আয়ের বড় অংশ পাবে বেবিচক, আর রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আয়ের একটি অংশ পাবে জাপানি কনসোর্টিয়াম।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) পাওয়ার পর এবং আলোচনা শেষে আয় ভাগাভাগির হারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নতুন টার্মিনালটি চালু হলে বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১২ মিলিয়নে উন্নীত হবে। পাশাপাশি কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতাও অনেকটা বাড়বে—২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭০ টন আমদানি ও ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪১ টন রপ্তানি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম হবে। উৎস: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।