জ্যামাইকার হলিসে গত ১৮ জুলাই, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানির উপস্থিতিতে ফান্ড রেইজিংয়ের আয়োজন করা হয়। মূলত এই ফান্ড রেইজিং ছিলো পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামসের জন্য। উল্লেখ্য নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়াম একই পদে পুণরায় প্রার্থী হয়েছেন। গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়েছেন জুমানী উইলিয়ামস। আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রিপাবলিকান প্রার্থী-গণজালু ডোরানের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম মঞ্জুর নিজ বাসভবনে আয়োজন করেন ব্যতিক্রমধর্মী ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানটি। মনিরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার স্ত্রী শাহানা ইসলাম এবং তাদের পারিবারিক বন্ধু অপর ব্যবসায়ী হাসিন আরমান ও তার স্ত্রী ফারজানা লাভলী ছিলেন এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। ঘরোয়া এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেনী পেশার শতাধিক অতিথি। ম্যাসভোট সহযোগিতা করে ফান্ড রেইজিংয়ে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালক ইমাম শামসী আলী। তিনি মামদানীর সম্পর্কেও বক্তব্য রাখেন। শাহারিয়ার নবীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে জোহরান মামদানিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান মনিরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিবার। এসময় তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা উপস্থিত ছিলেন। জুমানে উইলিয়ামসকে স্বাগত জানান হাসিন আরমান ও তার স্ত্রী ফারজানা লাভলী। জোহরান মামদানি তার বক্তব্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে তার বিজয় ঠেকাতে দলের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান তিনি। জোহরান মামদানি বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা তার পক্ষে প্রতিটি ভোটারের ঘরে গেছেন বলেই মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। নিউইয়র্ক সিটির চূড়ান্ত নির্বাচনে বাংলাদেশি আমেরিকানদের পাশে চেয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি জয়ী মেয়র পদপ্রার্থী জোরান মামদানি। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা তার পক্ষে প্রতিটি ভোটারের ঘরে গেছেন বলেই মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মামদানি। সিটির ভোটের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করেন জুমানে উইলিয়ামস। এ লড়াইয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান মামদানী। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মনিরুল ইসলাম পরিবারের প্রতি। জোহরান মামদানি ও জুমানে উইলিয়ামসের পক্ষে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান শাহারিয়ার রহমান স্বাগত বক্তব্যে। তিনি ম্যাসভোটের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, শুধু নিউইয়র্ক নয় গোটা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছেন জোহরান মামদানি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী মামদানি গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয়লাভ করেন। তার এই অভাবনীয় বিজয় নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সৃষ্টি করেছে অনন্য নজির। বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত করেছেন শক্তিশালী রাজনীতিক, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে।
মাত্র ৩৩ বয়সী মুসলিম তরুণ মামদানির বিজয়কে ক্যুমো প্রাথমিকভাবে মেনে নিলেও পরবর্তীতে তিনি সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন মামদানির বিপরীতে। শুধু তাই নয় বর্তমান মেয়র এরিক এডামস ও রিপাবলিকান প্রার্থী একাট্টা হয়েছেন মামদানীকে হটাতে। তারা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যেকোন মূল্যে রুখে দিতে মামদানীকে। নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি কমিউনিটির অকৃত্রিম বন্ধু জোহরান মামদানী।
গত প্রাইমারীতে তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ দৃষ্টি কাড়ে অন্যান্য কমিউনিটির। মামদানির পক্ষে বাংলাদেশিদের ভোট প্রদানের হার ছিলো রেকর্ড সংখ্যক। জোহরান মামদানি এজন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। নানা প্রতিকূলতার কারণে আগামী ৪ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তাকে। এমন একটি অবস্থায় বাংলাদেশি কমিউনিটি নির্মোহভাবে দাঁড়িয়েছে মামদানীর পাশে। এজন্য তারা মামদানীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বিভিন্নভাবে।
এদিকে নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট জুমানে উইলিয়াম ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। জুমানে উইলিয়ামস ২০১৯ এর মার্চ থেকে পাবলিক এডভোকেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিউইয়র্ক সিটিতে। এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৯ এর মার্চ পর্যন্ত তিনি সিটি কাউন্সিল মেম্বার ছিলেন ব্রুকলিন ডিস্ট্রিক্ট-৪৫ এর।
সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক হিসেবে পরিচিত জুমানে উইলিয়ামস বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটির সাথে কাজ করছেন নিবিড়ভাবে। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে তার প্রতি ব্যাপক সমর্থন ছিলো বাংলাদেশি কমিউনিটির। প্যালেস্টাইন ইস্যুতে তার প্রতিবাদী ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। তার নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহে ভূমিকা রেখে চলেছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। এরই অংশ হিসেবে গত ১৮ জুলাই আয়োজন করা হয় ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানান মনিরুল ইমলাম মঞ্জু।