মানুষ স্বভাবতই দুর্বল। জীবন সংগ্রামের প্রতিটি মুহূর্তে সে অন্যের সহায়তা কামনা করে। দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ কিংবা আনন্দ-উল্লাস; সব ক্ষেত্রেই মানুষ তার পাশে চায় একটি সহানুভূতির হাত। এ জন্যই ইসলামের শিক্ষা হলো সমবেদনা, সহযোগিতা আর ভ্রাতৃত্ব।
রাসুলুল্লাহ (সা.)এক হাদিসে বলেছেন:
عَنْ عَبْد اللهِ بْنَ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাز) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে,আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন।
যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২ )
সংক্ষিপ্ত ব্যাখা
হাদিসের মূল বাণী হচ্ছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
যা বাস্তবায়ন করা গেলে একটি সমাজ হবে পারস্পরিক হৃদ্যতা আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ভরপুর। বিরাজ করবে অনাবিল শান্তি। বিদূরিত হবে একে অন্যের প্রতি হিংসা আর বিরোধিতার মানসিকতা।
প্রথম শিক্ষা: মুসলিম মুসলিমের ভাই
এখানে ভাই বলতে কেবল রক্তের সম্পর্ক নয়, বরং ঈমানের বন্ধনে আবদ্ধ সব মুসলিমকে বোঝানো হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ঈমানের বন্ধন রক্তের বন্ধনের চেয়েও শক্তিশালী। আল্লাহ বলেন-
إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ
“নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পরের ভাই।” (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১০)
দ্বিতীয় শিক্ষা: জুলুম না করা
একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমের উপর জুলুম করতে পারে না। অর্থ, মান-সম্মান, সম্পদ কিংবা কোনো অধিকার হরণ করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
তৃতীয় শিক্ষা: যালিমের হাতে সোপর্দ না করা
এখানে বোঝানো হয়েছে; যদি একজন মুসলিমকে কোনো যালিম আক্রমণ করে বা তার উপর অন্যায় চাপায়, তবে অন্য মুসলিম চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে পারবে না। বরং তার সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।
চতুর্থ শিক্ষা: ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করা
নবী (সা.) বলেছেন, যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটায়, আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটান।
অর্থাৎ পারস্পরিক সহযোগিতা শুধু দুনিয়াতেই শান্তি আনে না, বরং আখিরাতে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ারও মাধ্যম হয়।
পঞ্চম শিক্ষা: বিপদ দূর করলে আল্লাহও সাহায্য করবেন
যে মুসলিম তার ভাইয়ের দুঃখ-কষ্ট দূর করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিনের ভয়াবহ বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। কিয়ামতের দিন মানুষের সবচেয়ে বেশি দুঃখ-ভয় থাকবে; তখন আল্লাহ তার জন্য সহজ করে দেবেন।
ষষ্ঠ শিক্ষা: দোষ গোপন করা
মানুষের দুর্বলতা আছে। কেউ যদি কোনো মুসলিমের ব্যক্তিগত দোষ গোপন রাখে এবং সমাজে তা ছড়িয়ে না দেয়, আল্লাহও কিয়ামতের দিন তার দোষগুলো গোপন করবেন। তবে শর্ত হলো—দোষটি এমন হতে হবে যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর নয়; সমাজ ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ালে প্রকাশ করা জায়েজ।
হাদিদের আলোকে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে-
১. ইসলামি ভ্রাতৃত্ব নিছক তত্ত্ব নয়, বরং বাস্তব দায়িত্ব। তা সকলের বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে।
২. মুসলমানদের পারস্পরিক সহযোগিতা দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর সাহায্য আনয়ন করে। কাজেই যে নিজের জন্য আল্লাহর সাহায্য চায় সে যেনো অপর ভাইকে সাহায্য করতে সচেষ্ঠ হয়।
৩. অন্যের দোষ খোঁজা নয়, বরং তা ঢেকে রাখা ইসলামের সৌন্দর্য।
৪. অন্যায়-অত্যাচার দেখেও চুপ থাকা ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের পরিপন্থী।
৫. দুনিয়াতে মানুষের প্রতি যে আচরণ করা হয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহও বান্দার প্রতি তদ্রূপ আচরণ করবেন। সূত্র: কালের কণ্ঠ