ভারত থেকে বাংলাদেশে জোরপূর্বক ঠেলে পাঠানো ২৫ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা নারী সুনালি খাতুন। গত জুনে তাকে বাংলদেশে পাঠানো হয়। বিবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি ভয়ে ছিলাম, বাংলাদেশে সন্তান জন্মালে ওর নাগরিকত্ব বদলে যাবে। নিজ দেশে চাপের মুখে এই নারীকে এ মাসের শুরুতে ফিরিয়ে নিয়েছে ভারত।
বিবিসির খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ও দিল্লিতে গৃহপরিচারিকার কাজ করা সুনালি খাতুনকে তার স্বামী দানিশ শেখ ও আট বছরের ছেলেকে নিয়ে জুনে দিল্লি পুলিশ আটক করে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষও তাদের জেলেও পাঠায়।
সুনালির এই নির্বাসনের ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কড়া ভাষায় এর নিন্দা জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, যথাযথ কোনো কারণ ছাড়াই বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার সুনালি ও পরিবারকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। তার সঙ্গে গত কয়েক মাসে অবৈধ অভিবাসনের সন্দেহে কয়েকশত মানুষকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
দিল্লি এ বিষয়ে কোনো সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ না করলেও, বাংলাদেশের শীর্ষ সরকারি সূত্র আগে বিবিসিকে জানিয়েছে, শুধু মে মাসেই প্রায় ১২০০ জনকে অবৈধভাবে জোরপূর্বক সীমান্ত পার করানো হয়েছে। একই সময়ে অল ইন্ডিয়া রেডিও জানায়, দিল্লি থেকে প্রায় ৭০০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৪০৯৬ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। বহু বছর ধরেই এই অঞ্চলে কাজের সন্ধানে বা ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে মানুষের যাতায়াত হয়ে আসছে। তবে মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক অভিযানে মূলত বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের লক্ষ্য করা হচ্ছে এবং কোনো আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না।
দিল্লির ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস দাবি করে যে তাদের কাছে ভারতে বৈধভাবে বসবাসের প্রয়োজনীয় নথি নেই। কিন্তু সুনালি খাতুন জানিয়েছে এই অভিযোগ মিথ্যা। তারা বৈধ ভারতীয়। তার সাত বছরের মেয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে থাকায় আটক হওয়ার সময় পরিবারের সঙ্গে ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী, সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসীর দাবি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে যাচাই করার কথা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সমীরুল ইসলাম জানান, সুনালির ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট মানবিক কারণে সুনালি খাতুন ও তার ছেলেকে ভারতে ফেরার অনুমতি দেয়। যদিও তাদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তদন্ত এখনও চলছে। বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গে তার বাবার বাড়িতে রয়েছেন। জামিনে মুক্তি পেলেও তার স্বামী এখনও বাংলাদেশে আটক আছেন।
সুনালি জানান, ভারতে ফিরতে পেরে তিনি স্বস্তি পেলেও স্বামীকে নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছেন। তিন মাসের বেশি সময় ধরে তিনি স্বামীর মুখ দেখেননি। ভিডিও কলে স্বামী প্রায়ই ভেঙে পড়েন এবং দেশে ফিরতে চান বলে জানান। তিনি অভিযোগ করেন, আটক হওয়ার এক সপ্তাহ পর বিএসএফ সদস্যরা তাদের সীমান্তবর্তী একটি জঙ্গলে নামিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে জোরপূর্বক ঠেলে পাঠান। পরে ভারতে ফেরার চেষ্টা করলে তার স্বামীসহ কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে স্থানীয়দের সহায়তায় তারা ঢাকায় পৌঁছালেও পরে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। সুনালির দাবি, গর্ভবতী অবস্থায় জেলের খাবার ছিল অপর্যাপ্ত এবং সেলে কোনো শৌচালয়ও ছিল না। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের একটি একচালা ঘরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকছেন সুনালি। দুই সন্তান ও অনাগত শিশুকে নিয়ে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে জানান তিনি। এখানে না খেয়ে থাকলেও দিল্লিতে আর কখনও ফিরব না, বলেন সুনালি খাতুন।