বিবিসি খবর: উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের জলরাশি চলতি গ্রীষ্মে রেকর্ড উষ্ণতা অর্জন করেছে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় সামুদ্রিক তাপপ্রবাহকে নিয়ে বেশ ধাঁধায় পড়েছেন। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা ২০২২ সালের পূর্ববর্তী রেকর্ডের চেয়েও দশমিক ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। ভূমধ্যসাগরের প্রায় দশ গুণ আকারের এত বিশাল অঞ্চলে তাপমাত্রার এ বৃদ্ধি বিজ্ঞানীদের কাছে 'বিশাল’।
এ বিশাল উষ্ণ এলাকা ‘ওয়ার্ম ব্লব’ নামে পরিচিত। গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন সমুদ্রের তাপপ্রবাহ বাড়ালেও, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা এখনো ব্যাখ্যা করা কঠিন। বার্কলে আর্থ-এর জলবায়ুবিজ্ঞানী জিক হাউসফাদার বলেন, ‘এত বড় অঞ্চলে এমন তাপমাত্রা বৃদ্ধি সত্যিই অভাবনীয়।‘
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২০ সালের পর থেকে জাহাজে ব্যবহৃত জ্বালানির পরিবর্তনের ফলে বাতাসে সালফার ডাই–অক্সাইড কমেছে। এই গ্যাস আগে সূর্যের তাপের একটি অংশ প্রতিফলিত করত, ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ কিছুটা শীতল থাকত।
এখন সেই শীতলতা না থাকায় সমুদ্রের উপরিভাগের পানি আরো দ্রুত গরম হচ্ছে। একইভাবে, চীনের নগরাঞ্চলে বায়ুদূষণ কমানোর প্রচেষ্টাও প্রশান্ত মহাসাগরকে বাড়তি উষ্ণতা দিয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকেরা। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অতিরিক্ত গরম গ্রীষ্ম এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল ঝড়ের সঙ্গে এই তাপপ্রবাহকে সম্পর্কিত বলে মনে করা হচ্ছে।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমান্ডা মেকক বলেন, ‘উষ্ণ সমুদ্র থেকে প্রচুর আর্দ্রতা উঠে বায়ুমণ্ডলে জমে, যা ঝড়-বৃষ্টিকে তীব্র করে তোলে।‘ এমনকি ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের আবহাওয়াতেও এই উষ্ণতা প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের এই তাপীয় তরঙ্গ আর্কটিকের ঠান্ডা বাতাসকে ইউরোপে টেনে আনতে পারে, ফলে শীতের শুরুটা হতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে ঠান্ডা।
একই সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে লা নিনা অবস্থা তৈরি হচ্ছে— যেখানে সমুদ্রের পানি অস্বাভাবিকরকম ঠান্ডা থাকে। সাধারণত লা নিনা ইউরোপে শীতের শুরুতে ঠান্ডা এবং শেষে তুলনামূলক উষ্ণ আবহাওয়া আনে।
তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ বছর লা নিনা দুর্বল হবে, তাই উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণতাই শীতের ধারা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।