এবার অনেকেই মনে করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হয়তো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবেন। পাকিস্তান সহ কয়েকটি দেশ তাকে মনোনয়নও দিয়েছিল। এমনকি ট্রাম্প নিজে অনেকবার দাবি করেছিলেন, তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। কারণ, তিনি কমপক্ষে ৭টি যুদ্ধ থামিয়েছেন। কিন্তু তাকে হতাশ করে দিয়ে শুক্রবার শুক্রবার নোবেল কমিটি ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদোকে এবারের নোবেলের জন্য বেছে নেয়। এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রতিক্রিয়ায় দাবি করেন, তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত মাচাদোকে একাধিকবার সহায়তা করেছেন। সূত্র: মানবজমিন
ট্রাম্প বলেন, ভেনেজুয়েলার ওই নেত্রী তাকে ফোন করে জানিয়েছেন যে তিনি এই পুরস্কার ‘তার (ট্রাম্পের) সম্মানে’ গ্রহণ করেছেন। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি আজ আমাকে ফোন করে বললেন, আমি এই পুরস্কারটা আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি, কারণ সত্যিকারের প্রাপ্য আপনি। আমি কিন্তু বলিনি, ‘আমাকে দাও’। মনে হয় তিনি হয়তো তাই ভেবেছিলেন। আমি ওকে (মাচাদোকে) সাহায্য করে আসছি দীর্ঘদিন। ভেনেজুয়েলায় ভয়াবহ সংকটের সময় ওদের অনেক সহায়তা দরকার ছিল। আমি খুশি, কারণ আমি লক্ষ লক্ষ প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি।’ এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
উল্লেখ্য, ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ও একনায়কতন্ত্র থেকে শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য রূপান্তরের সংগ্রামের জন্য ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পান মারিয়া করিনা মাচাদো। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ‘সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন’। তিনি বলেন, তিনি এজন্যও নোবেল পাওয়ার যোগ্য। তার ভাষায়- ‘আমি বলেছিলাম, ‘ওই সাতটা যুদ্ধের কী হবে? প্রতিটির জন্য একটা নোবেল তো পাওয়া উচিত।’ তারা বলল, ‘আপনি যদি রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে পারেন, তবে নোবেল পাবেন।’ আমি বললাম, আমি সাতটা যুদ্ধ থামিয়েছি। এটাও একটা যুদ্ধ, আর বড়সড় একটা।’
তিনি আরও দাবি করেন, তার নেতৃত্বে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, কসোভো-সার্বিয়া, ইসরাইল-ইরান, মিশর-ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা-কঙ্গো এই সংঘাতগুলোর অবসান ঘটেছে। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও বৃহস্পতিবার এক্সে পোস্ট করে ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়ার আহ্বান জানান। বলেন, তিনি এর যোগ্য!
অন্যদিকে নোবেল কমিটি মাচাদোকে বর্ণনা করেছে ‘শান্তির সাহসী ও নিবেদিতপ্রাণ রক্ষক’ হিসেবে। কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্রই স্থায়ী শান্তির পূর্বশর্ত। কিন্তু আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে গণতন্ত্র পশ্চাদপসরণ করছে, একের পর এক কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে। মাচাদো বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলার জনগণের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কমিটি আরও জানায়, ভেনেজুয়েলার শাসকদের কঠোর ক্ষমতাকাঠামো ও দমননীতি বিশ্বে অনন্য নয়।
আজ বিশ্বজুড়ে একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে- আইনের শাসন শাসকের হাতে অপব্যবহার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস, সমালোচকদের কারাবন্দি করা, ও সমাজকে সামরিকীকরণ ও কর্তৃত্ববাদের দিকে ঠেলে দেয়া। ২০২৪ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও, তার অনেকগুলোই ছিল অস্বচ্ছ ও অন্যায্য। শেষে কমিটি জানায়, শান্তির নোবেলজয়ী মারিয়া করিনা মাচাদো প্রমাণ করেছেন, গণতন্ত্রের হাতিয়ারই শান্তির হাতিয়ার। তিনি এমন এক ভবিষ্যতের আশা জাগান, যেখানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা পাবে এবং তাদের কণ্ঠ শোনা যাবে। নোবেল নির্বাচক কমিটি আরও বলেছে, মাচাদো আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাপত্রে উল্লেখিত শান্তি পুরস্কারের তিনটি মানদণ্ডই পূরণ করেন।