রাতভর প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কলকাতা। টানা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ধরে মুষলধারে বৃষ্টির ফলে পুরো মহানগরী ডুবে গেছে। শহরের রাস্তাঘাটে কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানি। এই জলাবদ্ধ অবস্থায় বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন।
নেতাজিনগরে এক সাইকেল আরোহী বিদ্যুতের খুঁটিতে হাত দিতেই ঝলসে যান। বালিগঞ্জ প্লেসে পানির ওপর ভেসে ওঠে একটি মৃতদেহ। অন্যদিকে বেনিয়াপুকুরে পানি জমে থাকায় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এরই কিছু সময় পর কালিকাপুরে বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে মারা যান এক পথচারী।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, মাত্র পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে কামডহরিতে ৩৩২ মিলিমিটার, যোধপুর পার্কে ২৮৫ মিলিমিটার, কালীঘাটে ২৮০ মিলিমিটার এবং তপসিয়ায় ২৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিভুক্ত হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক ঘণ্টায় আরও ভয়াবহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনী পুরসহ একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতভর পৌরসভা, পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সড়কে উদ্ধারকাজ চালিয়েছে। বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে থাকায় রাস্তাঘাট বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। জলাবদ্ধতার কারণে বহু এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আহতদের হাসপাতালে নিতে দেরি হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুতায়িত রোগীর ভিড় বেড়েছে।
জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পানির মধ্যে গাড়ি বিকল হয়ে আটকে থাকতে দেখা গেছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি আসন্ন দুর্গাপূজার আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। বহু পূজামণ্ডপ জলমগ্ন হয়ে পড়ায় দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারছেন না। আয়োজকেরা বলছেন, এ সময় উৎসবের আমেজ থাকার কথা ছিল, সেখানে নেমে এসেছে আতঙ্ক আর শোকের ছায়া।
বিগত বছরগুলোতে বৃষ্টি হলেও এমন রেকর্ড বৃষ্টি আর বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। পৌরসভা দাবি করছে, তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছিল কিন্তু এত কম সময়ে এত পানি জমে যাবে তা ধারণার বাইরে ছিল।