#ট্রাম্পইজডেড হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সত্য না মিথ্যা যাচাই করার জন্য কাউকে চিন্তায় না ফেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এই হ্যাশট্যাগের তথ্যটি উড়িয়ে দিয়েছেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে সব গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, জীবনে তিনি কখনো এত ভালো বোধ করেননি।
ট্রাম্পের এই প্রতিক্রিয়া আসে এক রক্ষণশীল ভাষ্যকার ডিসি ড্রেইনোর পোস্টের জবাবে। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘জো বাইডেন টানা কয়েক দিন জনসমক্ষে না এলেও সংবাদমাধ্যম বলত যে তিনি “সুস্থ” এবং “দুর্দান্ত ফর্মে” আছেন। অথচ তিনি সেই সময় ডায়াপার পরে থাকতেন আর ঘুমাতেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন ইতিহাসে অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি সময় প্রকাশ্যে কাজ করেছেন, আর তিনি ২৪ ঘণ্টার জন্য আড়াল হলেই গণমাধ্যম হইচই শুরু করে দেয়। কী হাস্যকর দ্বিমুখী মানসিকতা গণমাধ্যমের।”
এর জবাবে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছি।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি #TrumpIsDead হ্যাশট্যাগটি এক্সে (সাবেক টুইটার) ট্রেন্ডিং হয়েছে। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস যখন একটি ফাঁকা সময়সূচি প্রকাশ করলে, এই জল্পনা আরও বেড়ে যায়।
তবে গত শনিবার ট্রাম্প গলফ খেলার ছবি পোস্ট করে এই গুজব উড়িয়ে দেন। যদিও কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী সেই ছবিটিকেও ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেন।
হ্যাশট্যাগটি আরও ভাইরাল হয়ে যায় যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স বলেন, কোনো ‘ভয়াবহ বিপর্যয়’ ঘটলে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, ট্রাম্প সুস্থ ও উদ্যমী আছেন, তবে অপ্রত্যাশিত ঘটনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ইউএসএ টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভান্স বলেন, ‘রাতে শেষ ফোনকলটি তাঁর কাছ থেকেই আসে। সকালে সবার আগে তিনিই ফোন করেন। হ্যাঁ, যদি ভয়াবহ দুর্ভাগ্য না হয়ে থাকে, তাহলে এভাবেই চলবে। কিন্তু আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সুস্থ আছেন। তিনি তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করবেন ও আমেরিকান জনগণের জন্য দারুণ কিছু করবেন। আর যদি ঈশ্বর না করুন, কোনো ভয়াবহ দুর্ভাগ্য ঘটে, তবে আমি মনে করি গত ২০০ দিনে যা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, সেটিই সেরা প্রস্তুতি।’
ট্রাম্পের মৃত্যু নিয়ে এমন গুজব এবারই প্রথম নয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের এক্স অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে পোস্ট দেওয়া হয়েছিল, তাঁর বাবা মারা গেছেন। পরে ট্রাম্প নিজেই ট্রুথ সোশ্যালে এসে জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে এই গুঞ্জন আরও জোরদার হয় দ্য সিম্পসনসের স্রষ্টা ম্যাট গ্রোয়েনিংয়ের এক মন্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর। সান ডিয়েগো কমিক-কনে তিনি বলেন, এই শো তত দিন চলবে, যত দিন না ‘কেউ মারা যায়’।
এরপর তিনি রহস্য করে বলেন, ‘যখন আপনি জানেন কে মারা যাবেন, তখন দ্য সিম্পসন্স ভবিষ্যদ্বাণী করছে, রাস্তায় নাচানাচি হবে। তবে প্রেসিডেন্ট ভান্স আমাদের নাচ নিষিদ্ধ করবেন।’
সিম্পসন্সের ভবিষ্যদ্বাণী আগেও সত্যি হয়েছিল। ফলে গ্রোয়েনিংয়ের ওই মন্তব্য গুজবকে নতুন মাত্রা দেয়।
এ বছরের শুরুতে ট্রাম্পের হাতে বড়সড় একটি কালশিটে দাগ দেখা যাওয়ার পর থেকেই তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বেগ ছড়াতে শুরু করে। কয়েক দিন পর তাঁর হাতের তালুতেও নতুন কিছু দাগ দেখা যায়। একাধিকবার ট্রাম্পের টিম সেই দাগ মেকআপ ব্যবহার করে ঢাকার চেষ্টা করেছে।
গুজব বাড়তে থাকায় হোয়াইট হাউস এই আঘাতের চিহ্নগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রাম্প প্রতিদিন হাজারো মানুষের সঙ্গে হাত মেলান, সেখান থেকেই এ ধরনের দাগ হয়।
হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক ড. শন বারবায়েলা এক চিঠিতে জানান, ‘ঘন ঘন হাত মেলানোর কারণে এবং রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ অ্যাসপিরিন ব্যবহারের কারণে এ ধরনের দাগ দেখা দিতে পারে। অ্যাসপিরিন সাধারণত হৃদ্রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়।’
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পা ফুলে যাওয়ার বিভিন্ন ছবিও ছড়িয়ে পড়ে।
পরে গত জুলাইয়ে হোয়াইট হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ৭৯ বছর বয়সী মার্কিন প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি নামের শিরার সমস্যায় ভুগছেন, যার কারণে তাঁর পা ফোলা দেখা দেয়।