শিরোনাম
◈ শাটডাউনেও ক্লাস করছেন কুয়েট শিক্ষার্থীদের একাংশ ◈ এবার ৩ দাবিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ◈ বড় পরিবর্তন আসছে গ্রিন কার্ডের আবেদনে ◈ এবার বিদেশি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের মার্কিন ভিসা নিয়ে যে দুঃসংবাদ দিলেন যুক্তরাষ্ট্র ◈ আমি কোন পরিস্থিতিতে আছি পৃথিবীর কাউকে বুঝাইতে পারব না, আমি মিরজাফর না: ক্ষমা চেয়ে রাহি বললেন (ভিডিও) ◈ লতিফ সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজন আটক, ডিআরইউতে ‘মঞ্চ ৭১’-এর অনুষ্ঠান ঘিরে উত্তেজনা(ভিডিও) ◈ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের মাছ রফতানি ◈ রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল ◈ বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন: চীনের ১২টি জে-১০সি জঙ্গি বিমান কিনতে চায় বাংলাদেশ ◈ এক বাক্সে যাবে না ইসলামী দলের ভোট!

প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:২২ সকাল
আপডেট : ২৮ আগস্ট, ২০২৫, ০২:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ময়লার ভাগাড়ে বছরে মিলবে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ

আবর্জনাকে যেভাবে জ্বালানি সম্পদে পরিণত করল ইরান

ময়লা-আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধ আর পচনের নীচেই চাপা পড়ে আছে একটি অপ্রত্যাশিত ধন। ‘নোংরা সোনা’ খ্যাত এই সম্পদ অবিরাম সূর্যের নীচে আবর্জনার একটি পাহাড় আকারে জমে আছে। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে এর তীব্র গন্ধ। অপ্রত্যাশিত এই মূল্যবান সম্পদের অবস্থান পশ্চিম ইরানের কেরমানশাহ শহরের বাইরে।

প্রেস টিভির মতে, এই নোংরা-আবর্জনার নীচেই চাপা পড়ে রয়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রার একটি অর্থনৈতিক সুযোগ। এটিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিল্প জ্বালানি খরচ এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গির একটি নতুন অধ্যায়ের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গল্পটি শুরু হয় ২০০০ সালে, এই বছর কেরমানশাহে ইরানের সবচেয়ে অগ্রণী এবং উন্নত বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। এটি সেই সময়ে একটি সাহসী পরীক্ষা ছিল। একসময় যেটাকে কেবল আবর্জনা হিসাবে দেখা হত তা থেকে একটি মূল্যবান সম্পদ তৈরি করার একটি প্রচেষ্টা শুরু হয় তখন থেকে।

এররপর থেকে, এই বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য কেন্দ্রটি প্রতিদিন ৬৫০ থেকে ৭০০ টন পৌর বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে উন্নীত হয়েছে এবং আবর্জনার স্তূপ থেকে শক্তি-সমৃদ্ধ জ্বালানি তৈরি করা হচ্ছে যা রিফিউজি-ডেরিভড ফুয়েল বা আরডিএফ নামে পরিচিত।

এই সংকুচিত, দাহ্য পদার্থটি (আরডিএফ) প্লাস্টিকের ব্যাগ, টেক্সটাইল এবং ময়লা কাগজের মতো অ-পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য থেকে তৈরি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি যা দীর্ঘদিন ধরে ইরানের শিল্পকে জ্বালানি যুগিয়ে আসছে সেখান থেকে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে দেশটি।

বছরের পর বছর ধরে, ইরানের সিমেন্ট কারখানা এবং অন্যান্য ভারী শিল্পগুলি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে আসছে, বিশেষ করে মাজুত যা একটি ঘন, দূষণকারী তেলের উৎস।

এখন, কেরমানশাহের ওয়েস্ট সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি দেশটির প্রথম কারখানা হয়ে উঠেছে যেটি আংশিকভাবে আরডিএফ দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার শুরু করেছে।

প্রতিদিন প্রায় ১২০ টন আরডিএফ সরবরাহ করা হয়, যা প্ল্যান্টটির প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের প্রায় ১৯ শতাংশের সমান। এটি প্রাথমিক চিত্র কিন্তু পরিচ্ছন্ন জ্বালানির বিকল্পের দিকে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।

কেরমানশাহ প্রদেশ প্রতিদিন প্রায় ১৪শ থেকে ১৫শ টন বর্জ্য উৎপন্ন করে, যার অর্ধেকেরও বেশি শহর থেকেই আসে। তাই এই অর্জনের মাত্রা কেমন হবে তা উপলব্ধি করতে এটিই যথেষ্ট।

জাতীয়ভাবে, ইরান প্রতিদিন প্রায় ৬০,০০০ টন বর্জ্য উৎপাদন করে, বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন। এটি অনেক দেশের মাথাপিছু উৎপাদিত বর্জ্যের দ্বিগুণেরও বেশি। কাঁচামালের এই প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও পুনর্ব্যবহারের হার মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশে দাঁড়িয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, ছয় মিলিয়ন টন বর্জ্য সঠিকভাবে বাছাই এবং পুনর্ব্যবহার করতে পারলে কেবল ময়লা-আবর্জনা থেকে বছরে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ বেরিয়ে আসবে দেশটির।

অনেক দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে, যা সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখছে।

অনুরূপভাবে, ইরানও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই খাতের শ্রম-নিবিড় প্রকৃতিকে কাজে লাগাতে পারে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতিগত লক্ষ্যগুলিও পূরণ হবে।

ল্যান্ডফিল এবং খোলা ডাস্টবিন মাটি এবং ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করে। ফলে এই ধরনের বর্জব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ঘটলে মূল্যবান ভূমি সম্পদ নষ্ট হবে। অন্যদিকে, পুনর্ব্যবহার এবং আরডিএফ উৎপাদনের মাধ্যমে এই স্থানগুলি থেকে বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে গেলে এই ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাবে।

এছাড়াও, মাজুত এবং অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পাবে যা ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ইরানকে জলবায়ু প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করবে।

ইরানের সরকার বিষয়টি লক্ষ্য করছে। গত সপ্তাহে কেরমানশাহ সফরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস্কান্দার মোমেনি সহ কর্মকর্তারা আরডিএফ এর বিশাল সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। সূত্র: মেহর নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়