শিরোনাম
◈ ‌‘এনসিপি নেতাদের ‘কক্সবাজার ভ্রমণ’ নিয়ে মনে সন্দেহ জেগেছে’ (ভিডিও) ◈ এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়ে জরুরি নির্দেশনা মাউশির ◈ রাজনৈতিক বিশ্বাসের অপবিত্রতা দূর করতে: গাজীপুরে বিএনপি কার্যালয় দুধ দিয়ে ধুয়ে শুদ্ধি অভিযান  ◈ ভিসা মিললেও পা‌কিস্তান এশিয়া কাপ হকিতে ভারতে দল পাঠাতে রাজি নয়  ◈ পুমাস‌কে হা‌রিয়ে লিগস কা‌পের কোয়ার্টার ফাইনালে মে‌সির ইন্টার মায়ামি  ◈ কাশারি বাড়ির কবরস্থানজুড়ে আজও বুকফাটা কান্না ◈ আজ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘দ্বিতীয় অধ্যায়’ শুরু: সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ◈ চেতনানাশক খাওইয়ে কুড়িগ্রামে এক স্কুলছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ মাসে ১২ সাফল্যের কথা জানালেন প্রেসসচিব ◈ এবার ভারতীয় মিডিয়ার রোষানলে শেখ হাসিনা! কাঠগড়ায় মোদি (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:১৬ সকাল
আপডেট : ০৭ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেয়ায় কেন মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলোকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে?

পার্সটুডে - মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, যেসব মার্কিন অঙ্গরাজ্য ও শহর ফিলিস্তিনকে সমর্থন করবে এবং ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোকে বয়কট করবে তাদেরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ঘরোয়া বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জরুরি তহবিল থেকে বঞ্চিত করা হবে।

মার্কিন ফেডারেল সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে ইসরায়েলি কোম্পানি বয়কটকারী অঙ্গরাজ্য এবং শহরগুলো দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত তহবিল পাবে না। এই সরকার আরও ঘোষণা করেছে: ফেডারেল জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী এই তহবিল পাওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সাথে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিশেষভাবে ছিন্ন করবে না।

পার্স-টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, যা ফেডারেল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যকে কার্যত ইসরায়েলের বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ারে পরিণত করে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে ইহুদিবাদী লবিগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের একটি উদ্বেগজনক লক্ষণ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন ঘরোয়া নীতিগুলো পশ্চিম এশিয়ার ঘটনা-প্রবাহ ও বিশেষ করে দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের জালে ক্রমেই খুব বেশি মাত্রায় জড়িয়ে পড়ছে। এই যে নির্ভরতা তা কেবল কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান নয় একই সঙ্গে তা ফেডারেল বাজেট বরাদ্দের মত বিষয়সহ স্পর্শকাতর বা গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া নানা বিষয়েও ছড়িয়ে পড়েছে। এর একটি স্পষ্ট উদাহরণ হলো ফিলিস্তিনকে সমর্থনকারী অথবা ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সাথে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়া রাজ্য ও শহরগুলোকে জরুরি তহবিল বন্ধ করার হুমকি সংক্রান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের সিদ্ধান্ত।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বা গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশগ্রহণের কারণে বেশ কয়েকজন আমেরিকান ছাত্রকে নামীদামী মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে এবং বাইরে ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে। নাগরিক ও মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী হিসেবে সক্রিয় এই ছাত্ররা কেন্দ্রীয় তথা ফেডারেল সরকারের ইসরায়েল-বান্ধব নীতির পরিপন্থী মত প্রকাশ করায় কথিত শৃঙ্খলা-ভঙ্গমূলক নানা ধরণের  শাস্তির শিকার হয়েছিল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বহিষ্কারেরও শিকার হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ যারা বাক-স্বাধীনতার সমর্থক বলে নিজেদের দাবি করে তাদের পক্ষ থেকে এমন আচরণ খুব স্পষ্টভাবেই দেখিয়ে দেয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাক-স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত তৎপরতা কত বেশি সীমাবদ্ধ ও কঠোরতার শিকার, বিশেষ করে যখন তাদের তৎপরতা ইসরায়েলের সঙ্গে মার্কিন সরকারের কৌশলগত স্বার্থের বিরোধী হয়।   

এরই আলোকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, যেসব মার্কিন অঙ্গরাজ্য ও শহর ফিলিস্তিনকে সমর্থন করবে এবং ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোকে বয়কট করবে তাদেরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ঘরোয়া বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জরুরি তহবিল থেকে বঞ্চিত করা হবে।- এ ব্যাপারে ইসরায়েল বিরোধীদের পদক্ষেপ যতই নৈতিক এবং রাজনৈতিক ও মানবাধিকারের নীতির প্রতি নিবেদত হোক না কেন তা ট্রাম্প সরকারের বিবেচ্য বিষয় নয়। নীতি-নৈতিকতা ও মানবাধিকারের পক্ষে পদক্ষেপ নেয়ার দায়ে ও কথা বলার দায়ে ইসরায়েলের স্বার্থ বিপন্ন হওয়ার কারণে এইসব শহর বা অঙ্গরাজ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা খাতে বার্ষিক ১৯০ কোটি ডলারের বাজেট বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হবে! 

অন্য কথায় এভাবে ট্রাম্প সরকার মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলোর বাণিজ্য নীতিকে ওয়াশিংটনের ইসরাইল-বান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে বাধ্য করার জন্য অর্থনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করছে। 

শহর ও অঙ্গরাজ্যগুলোকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য ৫৫৩.৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের অংশ পেতে হলেও ইসরায়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা-বিহীন নীতি অনুমোদনের শর্ত আরোপ করেছে ট্রাম্প সরকার। আর এ বিষয়টি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বৈদেশিক নীতির ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপের স্পষ্ট লক্ষণ। এই ধরনের পরিস্থিতি স্থানীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং ওয়াশিংটনের আন্তর্জাতিক নীতির সমালোচনা ও অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার সুযোগকেও সীমিত করে। এ বিষয়টি আমেরিকান ফেডারেলিজমের চেতনার সাথে স্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক যে ফেডারিলিজম রাজ্যগুলোর আপেক্ষিক বা সীমিত স্বায়ত্তশাসন-অধিকার-ভিত্তিক।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরণের নীতির সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনতে পারে যার মধ্যে রয়েছে ফেডারেল সরকার এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবধান আরও প্রশস্ত হওয়া, বিশেষ করে যেসব এলাকায় ফিলিস্তিনি ইস্যু এবং গাজায় মানবাধিকারের প্রতি জনসাধারণের সমর্থনের মনোভাব খুব বেশি। এই নীতিগুলো দীর্ঘমেয়াদে সরকারের ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতার উপর জনসাধারণের আস্থা হ্রাস করবে।

এ ছাড়াও মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের এ ধরনের নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওয়াশিংটনকে কপটচারী প্রতারক সরকার হিসেবে আরও বেশি কুখ্যাত করে তুলবে। মার্কিন সরকার দাবি করে থাকে যে তারা বাক-স্বাধীনতা, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের রক্ষক। অথচ বাস্তবে মার্কিন সরকারের ঘরোয়া নীতিগুলোও ইসরায়েল নামক এক বিদেশী ও বিজাতীয় শক্তির প্রকাশ্য সেবাদাসত্বে নিয়োজিত হওয়ায় ওইসব মার্কিন দাবি যে চরম ভণ্ডামিপূর্ণ তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আরও স্পষ্ট হবে। 

ট্রাম্পের এ ধরনের নীতি গ্রহণের কারণ হল মার্কিন উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলের গভীর আদর্শিক ও রাজনৈতিক বন্ধন। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তার প্রথম মেয়াদে এবং এখন দ্বিতীয় মেয়াদেও ট্রাম্প  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ইসরায়েলপন্থী লবিগুলোর পূর্ণ  সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় সদা নিয়োজিত। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর, ফিলিস্তিন বিষয়ক জাতিসংঘের ত্রাণ-সংস্থা আনরোয়া-কে (UNRWA) সাহায্য বন্ধ করা ইত্যাদি সবই ট্রাম্পের এই সামগ্রীক কৌশলের অংশ। 

ফিলিস্তিনকে সমর্থনকারী রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুমকিকেও এই প্রেক্ষাপটে বোঝা উচিত। এর লক্ষ্য হল ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার নিঃশর্ত ও অন্ধ সমর্থনের বিরুদ্ধে যেকোনো বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করা, এমনকি আমেরিকান ভূখণ্ডের মধ্যেও এমন বিরোধিতা স্তব্ধ করতে চায় ট্রাম্প-প্রশাসন।

অন্যদিকে এ ধরনের সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি মার্কিন জনমতের ক্রমবর্ধমান সহমর্মিতার রাজনৈতিক জবাবও বলা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিচালিত নানা জরিপে দেখা গেছে ফিলিস্তিনের প্রতি মার্কিন নাগরিকদের সমর্থন এবং ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি প্রতিবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, ছাত্র, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং মুসলিম ও ল্যাটিনো সম্প্রদায়ের মধ্যে এসব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জনমতের এই রূপান্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের ঐতিহ্যবাহী সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাই আর্থিক হুমকির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে এবং মতামত প্রকাশের স্থান সীমিত করে এই প্রবণতাকে উল্টে দেওয়ার বা রোধ করার প্রচেষ্টা চলছে।

কিন্তু মার্কিন সরকারের এইসব পদক্ষেপ যে কেবলই তার কথিত গণতান্ত্রিক নীতিমালা ও মূল্যবোধের বিরোধী তা নয় একইসঙ্গে এসব পদক্ষেপ দেশটির নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণকেও বিপন্ন করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যে প্রশ্নের উত্তর আগের চেয়েও বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে তা হল: ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের বেদিতে কি আমেরিকার নাগরিকদের নিরাপত্তা বিসর্জন দেওয়া উচিত? 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়