২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং একজন ডানপন্থী আমেরিকার রাজনীতিবিদ টম রিজ ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করেছেন যার জন্য তিনি স্বপ্ন দেখছেন।
আমেরিকার ম্যাগাজিন নিউজউইকে "ইরানি জনগণ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সর্বোত্তম প্রত্যাশা" শীর্ষক একটি প্রবন্ধে টম রিজ তার দৃষ্টিকোণ থেকে ইরানের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন এবং ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করেছেন।
– জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের অধীনে কাজ করা মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন যে ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের ছেচল্লিশ বছর পর ইরানি শাসনব্যবস্থার আসল দুর্বলতা বিদেশী চাপ বা বহিরাগত যুদ্ধ নয়, বরং তার নিজস্ব জনগণের ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং তাদের সংগঠিত প্রতিরোধ। তিনি দাবি করেছেন যে অনির্বাচিত এবং জবাবদিহিহীন শাসকরা এমন নাগরিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন যারা প্রতিদিন সাহসী এবং বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন। সরকার প্রতিটি নতুন প্রতিবাদের তরঙ্গ,প্রতিটি ধর্মঘট এবং নাগরিক অবাধ্যতার প্রতিটি কাজের প্রতিক্রিয়া সংস্কারের মাধ্যমে নয়, বরং দমন-পীড়নের মাধ্যমে দেয়। টম রিজ দাবি করেন যে ট্রাক চালক, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত, কৃষক এবং ছাত্ররা সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। শাসকগোষ্ঠী সংলাপের মাধ্যমে নয়, বরং গুলি,ফাঁসি এবং সেন্সরশিপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
-এই দাবির অসারতা বেশ স্পষ্ট, কারণ ইহুদিবাদী সরকার ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার সময় যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সহযোগিতায় সংঘটিত হয়েছিল তখন ইরানি জনগণ দৃষ্টান্তমূলক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। মূলত তেল আবিব এবং ওয়াশিংটন একটি বিস্তারিত এবং জটিল পরিকল্পনার কাঠামোর মধ্যে বিশ্বাস করেছিল যে সরাসরি বিদেশী আক্রমণের মাধ্যমে (রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের নির্মূল করার এবং ব্যবস্থার স্তম্ভগুলো ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে) ইরানি জনগণ – যাদেরকে তারা সরকারের প্রতি "অসন্তুষ্ট" বলে মনে করেছিল - তারা সুযোগটি কাজে লাগাবে এবং দেশব্যাপী বিদ্রোহের মাধ্যমে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থাকে উৎখাত করবে। যাইহোক এই ভ্রান্ত ধারণার বিপরীতে সকল স্তর,শ্রেণী এবং এমনকি বিরোধীরা (দেশীয় এবং বিদেশী) ইরানি জনগণ বিদেশী আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ এবং অকুণ্ঠ সংহতি দেখিয়েছে এবং ইহুদিবাদী সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থার প্রতি তাদের সমর্থনের উপর জোর দিয়েছে। এমনকি একই ট্রাক চালকরা যাদেরকে তীব্র অসন্তোষ এবং দমন-পীড়নের শিকার বলে লেখক দাবি করেছেন ইসরায়েলি এবং মার্কনি আক্রমণের নিন্দা করার সময় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থার প্রতি তাদের সমর্থনের উপর জোর দিয়েছিলেন এবং সাহায্য করার জন্য তাদের প্রস্তুতি ঘোষণা করেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় যে যদিও ইরানি জনগণ কিছু অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তবুও তারা বিদেশী হস্তক্ষেপের মধ্যে সমাধান দেখতে পান না এবং ইরানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছেন। ইরানিরা তাদের সমস্যার সমাধান বিদেশে নয়, বরং অভ্যন্তরীণ সংলাপের মাধ্যমে খোঁজেন।
-টম রিজের আরেকটি দাবি হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের উচিত এই শাসকগোষ্ঠীর দুর্বলতম স্থানে জীবনরেখা স্থাপন না করা ! বরং, তাদের উচিত ইরানি জনগণ এবং তাদের সংগঠিত প্রতিরোধের পাশে দাঁড়ানো, ইরানিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া - যেকোনো রাজতান্ত্রিক বা ধর্মীয় একনায়কতন্ত্র নির্বিশেষে - এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এবং এর দমন-পীড়নের হাতিয়ারগুলোর মুখোমুখি হওয়ার অধিকারকে স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করা। তিনি এই পরিবর্তনকে "নৈতিকভাবে প্রয়োজনীয় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কৌশলগত" বলে অভিহিত করেন এবং মারিয়াম রাজাভির (এমকেও-র নেত্রী) স্পষ্ট সমর্থনের সাথে দাবি করেন,'ইরানের সমাধান তুষ্টি বা যুদ্ধের মধ্যে নয় বরং জনগণের দ্বারা শাসন পরিবর্তন এবং তাদের সংগঠিত প্রতিরোধের মধ্যে নিহিত।'
রিজের দাবির বিপরীতে যে ইরান বিষয়ে পশ্চিমাদের অবস্থান এবং কর্মকাণ্ড - বিশেষ করে গত কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ দেখায় যে তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতি শত্রুতা বন্ধ করেনি। উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-ইরানের উপর চাপিয়ে দেওয়া ৮ বছরের যুদ্ধে ইরাকি বাথ শাসনের জন্য ব্যাপক অস্ত্র সহায়তা (রাসায়নিক অস্ত্র সহ।
-মার্কিন চাপে এমকেও'র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর (যার হাতে হাজার হাজার ইরানি শহীদ হওয়ার ইতিহাস রয়েছে) জন্য প্রকাশ্য এবং গোপন সমর্থন এবং আলবেনিয়ায় তাদের অবশিষ্টদের পুনর্বাসন।
-ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির অজুহাতে পশ্চিমাদের সর্বোচ্চ চাপ বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রথম এবং দ্বিতীয় মেয়াদে তার নিষেধাজ্ঞা অভিযান।
-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় এবং সরকারকে উৎখাত করার জন্য ইউরোপের পরোক্ষ সমর্থনে ইহুদিবাদী শাসনের ১২ দিনের আক্রমণ।
- জার্মান চ্যান্সেলর (ফ্রেডরিখ মের্টজ) স্বীকার করেছেন যে ইরানের উপর ইসরায়েলের আক্রমণক পশ্চিমাদের পক্ষে একটি 'নোংরা কাজ'!