শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ৩০ জুন, ২০২৫, ০৩:২৪ দুপুর
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গাড়ির বদলে অস্ত্র: ইউরোপের নতুন কৌশল কি ঐতিহাসিক ভুল হতে চলেছে?

ব্রাসেলসের বিখ্যাত অডি গাড়ি কারখানা এখন নিস্তব্ধ। একসময় ইউরোপীয় শিল্পের গর্বের প্রতীক এই কারখানাটি এখন মহাদেশের শিল্প সংকটের শিকার। তবে এই বন্ধ কারখানাকে ঘিরে ইউরোপের নীতিনির্ধারকরা এক নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন—গাড়ির বদলে এখানে তৈরি হবে অস্ত্র। এই পরিকল্পনাকে ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক দুর্বলতা ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা—উভয় সংকট মোকাবিলার চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, এই কৌশল ইউরোপকে এগিয়ে নেওয়ার বদলে এক ঐতিহাসিক ভুলের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এক ঢিলে দুই পাখির স্বপ্ন:
ইউরোপজুড়ে নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি একযোগে দুটি সমস্যার সমাধান করবে:
১. কৌশলগত স্বনির্ভরতা: রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলা এবং আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ইউরোপকে একটি পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
২. অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন: চীনের প্রতিযোগিতা এবং উচ্চ জ্বালানি ব্যয়ের কারণে বিপর্যস্ত শিল্প খাতকে নতুন জীবন দেওয়া।

এই ভাবনা থেকেই বেলজিয়ামের অডি কারখানাকে অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা প্রায় ৩,০০০ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

‘সামরিক কিনসিয়ানিজম’-এর ভ্রান্ত প্রয়োগ:
এই নতুন নীতিকে ‘মিলিটারি কিনসিয়ানিজম’ (Military Keynesianism) বা সামরিকায়ননির্ভর অর্থনীতি বলা হলেও, বিশ্লেষকদের মতে এর প্রয়োগ এখানে ত্রুটিপূর্ণ।

  • ঐতিহাসিক তুলনা: ২০ শতকের মাঝামাঝি অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে সামরিক খাতে বিপুল ব্যয় বাড়ানোর যে কৌশল নাৎসি জার্মানি বা আমেরিকা নিয়েছিল, ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতি তেমন নয়। জার্মানি তার সামরিক ব্যয় জিডিপির ৫% থেকে ৩.৫% করার কথা ভাবছে, যা যুগান্তকারী কোনো পরিবর্তন নয়।

  • সামাজিক ব্যয়ের সংকোচন: কিনসিয়ানিজম-এর মূল শর্ত হলো সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, কিন্তু ইউরোপের অধিকাংশ দেশ বাজেট ঘাটতি বাড়াতে নারাজ। ফলে সামরিক খাতে অর্থায়ন আসছে সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোর মতো জরুরি খাতগুলো থেকে অর্থ কেটে নেওয়ার মাধ্যমে। বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থিও ফ্রাংকেন যেমনটা বলেছেন, সামরিক ব্যয় বাড়াতে হলে সামাজিক সুরক্ষা খাতে কাটছাঁট করতেই হবে। এই নীতি সামাজিক অস্থিরতা বাড়িয়ে ডানপন্থার উত্থানকে ত্বরান্বিত করছে।

কাঠামোগত দুর্বলতা ও সমন্বয়ের অভাব:
এই সামরিকীকরণ নীতির বেশ কিছু বাস্তব সমস্যা রয়েছে:

  • শিল্পের ঝুঁকি: অস্ত্রশিল্প গাড়ির মতো নির্ভরযোগ্য ও লাভজনক বাজার নয়।

  • দক্ষতাহীন ব্যয়: ইউরোপীয় দেশগুলো সম্মিলিতভাবে প্রচুর অর্থ তাদের "জোম্বি সেনাবাহিনীতে" ঢাললেও তার কার্যকর ফলাফল (জনশক্তি বা উপকরণ) পাওয়া যায় না। বিশ্বের সেরা দশটি প্রতিরক্ষা কোম্পানির তালিকায় ইউরোপের কোনো নাম নেই।

  • সমন্বয়হীনতা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিকেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার কারণে সরঞ্জাম উৎপাদন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। ইউক্রেনের জন্য গোলাবারুদ উৎপাদনে বিলম্ব এর বড় প্রমাণ।

  • আমেরিকার লাভ: ইউরোপীয় কারখানাগুলো উৎপাদনে যেতে সময় নেবে। ফলে এই বিপুল সামরিক ব্যয়ের প্রাথমিক সুবিধাভোগী হবে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো। অর্থাৎ, ইউরোপের টাকায় লাভবান হবে আমেরিকা।

সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতা:
ইউরোপের সমাজ এখন আর আগের মতো যুদ্ধংদেহী নয়। ১৯৯০-এর দশকে সাংবাদিক আনাতোল লিভেন যেমনটি বলেছিলেন, "কেউ যদি ভাবেন ইউরোপ আবার প্রুশিয়ান সামরিক শক্তিতে ফিরবে, তবে তিনি জার্মান কোনো ডিসকো ক্লাবে কখনও যাননি।" বর্তমানে শান্তিপ্রবণ এই মানসিকতা আরও বেড়েছে। বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা বাতিল করার পর এখন তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে আগ্রহী করতে দেশগুলোকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

উভয় সংকট
ইউরোপীয় নেতারা বিশ্বাস করেন, এই পুনঃসামরিকীকরণই একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একমাত্র পথ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই নীতি ইউরোপকে সামরিক স্বনির্ভরতা কিংবা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি—কোনোটিই এনে দিতে পারবে না। বরং এর ফলে একটি দুর্বল অর্থনীতি এবং একটি অপর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—এই উভয় সংকটে পড়ার ঝুঁকিই বেশি। ব্রাসেলসের বুকে শূন্য পড়ে থাকা অডি কারখানাটি যেন এই করুণ বাস্তবতারই প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের একজন শিক্ষকের লেখা থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত।

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়