শিরোনাম
◈ তেল আমদানি এখনো পুরনো দামে, যুদ্ধ দীর্ঘ হলে পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা হবে: সালেহউদ্দিন আহমেদ ◈ ট্রাম্পের আকস্মিক জি-সেভেন সম্মেলন ত্যাগ: ইরান-ইসরায়েল নয়, আরও বড় কিছু ঘটছে? ◈ জুলাই মাসের মধ্যে `জাতীয় সনদ' তৈরি করতে পারবো: আলী রীয়াজ ◈ ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বয়কট করল জামায়াতে ইসলামী ◈ নেতানিয়াহুর ঔদ্ধত্যে ইসরায়েলের সামরিক অহংকার চূর্ণ, ইতিহাসে ফিরছেন আহমদ চালাবির ছায়া:হামিদ মীর ◈ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জি-৭ নেতাদের বিবৃতি: ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান, ইরানকে ‘সন্ত্রাসের উৎস’ আখ্যা ◈ ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ২১ মুসলিম দেশ ◈ ভয়াবহ যুদ্ধের ই‌ঙ্গিত দি‌য়ে  ইরা‌নের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছাড়তে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ ইসরায়েল ইরানে পরমাণু বোমা ফেললেই, পাকিস্তান পরমাণু হামলা চালাবে নেতানিয়াহুর দেশে, এবার কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ? ◈ দেখা হলে সাকিবকে  জিজ্ঞাসা করবো কেন আমার বিরু‌দ্ধে ভুল তথ্য দি‌য়ে‌ছি‌লেন : তা‌মিম ইকবাল

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০২৫, ১০:১৯ দুপুর
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

'আয়রন ডোম' ভেদ করে আঘাত হানছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র: রহস্য কী?

পার্স টুডে: "ট্রু প্রমিজ-৩" অভিযানে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মহাকাশ ও বিমান শাখা ব্যাপক ও সুনির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের দখলকৃত ভূমির গভীরে আঘাত হানছে, যা ইসরাইলের নিরাপত্তা কৌশলকে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত করেছে এবং তেল আবিবকে হতবাক ও আতঙ্কিত করে তুলেছে।

পার্স টুডে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মহাকাশ ও বিমান শাখা শনিবার রাতে "সত্য প্রতিশ্রুতি-৩" অভিযানের নতুন পর্যায় শুরু করেছে, যার কোডনাম ছিল "ইয়া আলী ইবনে আবি তালিব"। এই অভিযানে ব্যাপক ও সমন্বিতভাবে ইসরাইলের কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। এই অভিযানটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আত্মঘাতী ড্রোনের সমন্বয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সরাসরি জবাব।

ফার্স নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী-এই অভিযানে “ইমাদ”, “গাদর” ও “খায়বার শেকান” ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়—যার লক্ষ্য ছিল হাইফা, তেল আবিব ও ইসরাইলের উত্তরাঞ্চল।

ইসরাইলের শোধনাগার, বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র এবং বিমান বাহিনীর জ্বালানি সরবরাহ স্থাপনাগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত করাই এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নির্ভুলতা এবং শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতাকে প্রমাণ করে।

ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য:

১. ইমাদ ক্ষেপণাস্ত্র: ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র "ইমাদ" এই অভিযানে মূল ভূমিকা পালন করেছে। প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার পাল্লাবিশিষ্ট এই ক্ষেপণাস্ত্রটি "কদর" ক্ষেপণাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে উন্নত করা হয়েছে এবং এটি আঘাত হানার আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ওয়ারহেড দিয়ে সজ্জিত যা ম্যানুভারিং ফিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রের উচ্চ নির্ভুলতা হাইফার কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুগুলিকে সফলভাবে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে।

২. কাদর ক্ষেপণাস্ত্র: "কাদর" ক্ষেপণাস্ত্র, তিনটি ভিন্ন মডেলে ১,৩৫০ থেকে ১,৯৫০ কিলোমিটার পাল্লায় তৈরি করা হয়েছে। এটি আবারও তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। উন্নত জাইরোস্কোপিক নির্দেশন ব্যবস্থা এবং তরল জ্বালানি ব্যবহার করে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শত্রুর প্রতিরক্ষা ও লজিস্টিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

৩. খায়বার শেকান ক্ষেপণাস্ত্র: উন্নত "খাইবার শেকান" ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার গত রাতের অভিযানকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমবারের মতো ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে উন্মোচন করা হয়েছিল। এর বিশেষভাবে ডিজাইন করা তিন-শঙ্কুযুক্ত ওয়ারহেড বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় উচ্চ মাত্রার ম্যানুভারিং ক্ষমতা প্রদান করে। এটি বিশেষভাবে "ডেভিড’স স্লিং" এবং "প্যাট্রিয়ট" এর মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ছোট ও হালকা গঠনের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি বেসামরিক যান বা স্টেলথ লঞ্চার থেকেও নিক্ষেপযোগ্য।

ইসরাইলের স্বীকারোক্তি:

ইসরাইলি মিডিয়া অনুযায়ী, এই অভিযানে বেশ কয়েকজন ইসরাইলি হতাহত হয়েছে। দখলকৃত ভূমির উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতে প্রকাশিত ছবিগুলোতে ব্যাপক বিস্ফোরণ, হাইফার তেল স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড এবং সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ দেখা যায়।

ইসরাইলিরা স্বীকার করেছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাম্প্রতিক আক্রমণ তীব্রতা, নির্ভুলতা ও সমন্বয়ের দিক থেকে নজিরবিহীন এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এর কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইরানের প্রতিরক্ষা:

এদিকে, ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও পূর্ণ সতর্কতায় রয়েছে এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পাল্টা ব্যবস্থার জবাবে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, আত্মঘাতী ড্রোন এবং ক্ষুদ্র ড্রোনগুলোকে বিভিন্ন অঞ্চলে বাধা দিতে ও ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।

ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা কমান্ড অনুযায়ী, সংঘর্ষের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, দশটি আক্রমণাত্মক ড্রোন এবং ক্ষুদ্র ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।

ইরানের সামরিক কর্মকর্তাদের বার্তা অনুযায়ী, যদি ইসরাইলি রাষ্ট্রের আগ্রাসন অব্যাহত থাকে, তবে ভবিষ্যতে প্রতিশোধমূলক অভিযানের মাত্রা আরও ব্যাপক ও ভয়াবহ হবে।

"ট্রু প্রমিজ-৩" অভিযান ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিরোধ কৌশলের একটি মাইলফলক। সঠিক ও বৈচিত্র্যময় ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি আত্মঘাতী ড্রোন এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ কৌশলের সমন্বিত ব্যবহার ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর পরিপক্কতা এবং আঞ্চলিক হুমকির মোকাবেলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুতিকে নির্দেশ করে।

এই অভিযানে ব্যবহৃত অস্ত্র ব্যবস্থাগুলো কেবল প্রযুক্তিগতভাবে উন্নতই নয়, কৌশলগত স্তরেও একটি বার্তা বহন করে যে ইরান যে কোনো আক্রমণকারী শত্রুর উপর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চাপিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়