শিরোনাম
◈ জাতীয় ঐকমত্যে নির্বাচন হবে, অস্থির না হয়ে অপেক্ষার আহ্বান আমীর খসরুর ◈ বিদেশ পালানোর চেষ্টায় থাকা সাবেক এমপি সরওয়ার জাহান গ্রেপ্তার ◈ তেল আমদানি এখনো পুরনো দামে, যুদ্ধ দীর্ঘ হলে পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা হবে: সালেহউদ্দিন আহমেদ ◈ ট্রাম্পের আকস্মিক জি-সেভেন সম্মেলন ত্যাগ: ইরান-ইসরায়েল নয়, আরও বড় কিছু ঘটছে? ◈ জুলাই মাসের মধ্যে `জাতীয় সনদ' তৈরি করতে পারবো: আলী রীয়াজ ◈ ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বয়কট করল জামায়াতে ইসলামী ◈ নেতানিয়াহুর ঔদ্ধত্যে ইসরায়েলের সামরিক অহংকার চূর্ণ, ইতিহাসে ফিরছেন আহমদ চালাবির ছায়া:হামিদ মীর ◈ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জি-৭ নেতাদের বিবৃতি: ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান, ইরানকে ‘সন্ত্রাসের উৎস’ আখ্যা ◈ ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ২১ মুসলিম দেশ ◈ ভয়াবহ যুদ্ধের ই‌ঙ্গিত দি‌য়ে  ইরা‌নের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছাড়তে বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০২৫, ১২:৪৭ দুপুর
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নেতানিয়াহুর ঔদ্ধত্যে ইসরায়েলের সামরিক অহংকার চূর্ণ, ইতিহাসে ফিরছেন আহমদ চালাবির ছায়া:হামিদ মীর

সবকিছু ভুলে যেতে পারি, কিন্তু আমি আহমদ চালাবিকে ভুলতে পারি না। এপ্রিল ২০০৩ সালে যখন মার্কিন সেনাবাহিনী ইরাকের রাজধানী বাগদাদে প্রবেশ করে ও সাদ্দাম হোসাইনের সরকার পতন ঘটায়, তখন আমি জর্দান হয়ে ইরাকে প্রবেশ করি। তখন পাকিস্তানে জিও নিউজ সম্প্রচারের কয়েক মাস হয়েছে মাত্র। জিও নিউজ ও বিবিসির টিম একসাথে বাগদাদে ঢোকে। আমাদের লক্ষ্য ছিল সাদ্দামের কথিত রাসায়নিক ও পারমাণবিক অস্ত্রের খোঁজ করা এবং সেগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করা। কিন্তু বিবিসির লিজ ডুসেটসহ অনেক পশ্চিমা সাংবাদিকের কিছু দ্বিধা ছিল।

আমরা সবাই বাগদাদের ‘ফিলিস্তিন হোটেল’-এ অবস্থান করছিলাম। একদিন আমি এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিই এবং জিজ্ঞেস করি—‘আপনারা কি সাদ্দামের রাসায়নিক ও পারমাণবিক অস্ত্র পেয়েছেন?’ তিনি ‘না’ বলেন, তবে আশ্বাস দেন, খুব শিগগিরই WMD (Weapons of Mass Destruction) সামনে আনা হবে। যখন আমরা হোটেলের ছাদ থেকে ভিডিওফোনে এই সাক্ষাৎকার নিউজরুমে পাঠাচ্ছিলাম, তখন ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক তা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন।

রবার্ট ফিস্ক, যাকে আমি আগে আফগানিস্তানে দেখেছিলাম, বলেন—‘আমেরিকা কোনোদিনই সাদ্দামের WMD খুঁজে পাবে না, কারণ এসব অস্ত্র আদৌ ছিল না।’ পরদিন, সাদ্দামবিরোধী নেতা আহমদ চালাবি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘খুব শিগগিরই সাদ্দামের WMD বেরিয়ে আসবে।’ এই সংবাদ সম্মেলনেও ফিস্ক উপস্থিত ছিলেন। তিনি চালাবিকে প্রশ্ন করেন, কিন্তু চালাবি কোনো জবাব না দিয়ে মার্কিন নিরাপত্তার পাহারায় চুপিচুপে চলে যান।

ফিস্ক আহমদ চালাবিকে ‘এক আন্তর্জাতিক প্রতারক’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, ‘এ লোকটি ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর ইরাকি সংস্করণ।’ তিনি আরও বলেন, চালাবি একাধিক ব্যাংক প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, কেবল ভালো ইংরেজি জানার কারণে এবং সাদ্দামের স্বদেশি হওয়ায় আমেরিকানদের ধোঁকা দিতে পেরেছে।

ফিস্ক জানান, WMD-র ধারণাটি ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তৈরি করেছিলেন, যিনি ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন কংগ্রেসে শপথ করে বলেছিলেন, ‘সাদ্দামের কাছে WMD আছে এবং বিশ্বকে তা থেকে রক্ষা করতে ইরাক আক্রমণ করা প্রয়োজন।’ নেতানিয়াহু তখন ক্ষমতায় ছিলেন না, কিন্তু ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

সাদ্দামের অস্ত্র মেলেনি, কিন্তু আহমদ চালাবি মার্কিন সহায়তায় ইরাকের তেলমন্ত্রী ও পরে উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। পরে যখন জানা গেল যে, তিনি ইরানের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছিলেন, তখন তাকে ইরাক থেকে বের করে দেওয়া হয়।

২০০৬ সালে লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় আবার ফিস্কের সঙ্গে বৈরুতে দেখা হয়। ফিস্ক বলেন, ‘যেমন চালাবির মতো সুযোগসন্ধানীরা ইরাক ধ্বংসে আমেরিকাকে ব্যবহার করেছে, তেমনি নেতানিয়াহু আমেরিকাকে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছে।’ আমি বলি, ‘নেতানিয়াহু তো এখন আর প্রধানমন্ত্রী নন।’ ফিস্ক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ইহুদি লবি আবার তাকে ক্ষমতায় আনবে।’

তিনি বারবার নেতানিয়াহুর বাবার কথা বলতেন, যিনি 'গ্রেটার ইসরায়েল'-এর প্রবক্তা ছিলেন। ফিস্কের অনেক কথায় আমি তখন ততটা মনোযোগ দিইনি, কারণ যুদ্ধের রিপোর্টিং ছিল আমার মূল ফোকাস।

কিন্তু গত সপ্তাহে যখন ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়, তখন ফিস্কের কথাগুলো হুবহু মনে পড়ে যায়। ১৫ জুন ওমানে ইরান-আমেরিকার মধ্যে শান্তি আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে বলেছিলেন, ‘আলোচনার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করো।’ কিন্তু নেতানিয়াহু তাতে কর্ণপাত না করে ১৩ জুন হামলা করেন।

২০০৯ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত নেতানিয়াহু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি ক্রমাগত ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছেন। তিনি মোসাদের মাধ্যমে ইরানের অনেক বিজ্ঞানীকে হত্যা করান। ২০২২ সালে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন—ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী।

তার পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক ইহুদি লবি। তার বাবা ছিলেন হিব্রু ভাষার অধ্যাপক ও ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ এর প্রবক্তা। তার দাদাও একজন ধর্মীয় নেতা ছিলেন, যিনি রাশিয়া থেকে ১৯২৪ সালে জেরুজালেম আসেন।

নেতানিয়াহু আমেরিকায় পড়াশোনা করেছেন, আরব-ইসরায়েল যুদ্ধেও অংশ নেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, ফিলিস্তিন থেকে আরবদের উৎখাত করে ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ গড়া দরকার। তিনি আমেরিকাকে ব্যবহার করে ইরানকে ধ্বংস করতে চান। তিনি আমেরিকানদের বোঝান, ‘আমি তোমাদের যুদ্ধই তো লড়ছি, কারণ ইরান শুধু 'মৃত্যু হোক ইসরায়েল' নয়, 'মৃত্যু হোক আমেরিকা' বলেও স্লোগান তোলে।’

তার মনে ছিল, গত বছর যেমন ইরানে হামলা চালিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা করে রেহাই পেয়েছে, এবারও তেমনি পার পেয়ে যাবে। কিন্তু এবার ইরানের পাল্টা হামলা নেতানিয়াহুর কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। ইরান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের অহংকার ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

এই সংকটময় সময়ে পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশ ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে। মনে রাখবেন, যদি ইসরায়েল এবার ইরানকে পরাস্ত করতে পারে, তাহলে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য পাকিস্তান হবে। কারণ মোদি ও নেতানিয়াহু—এরা একই পথের পথিক।

আহমদ চালাবি আমেরিকার হাত দিয়ে ইরাক ধ্বংস করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহু নিজের ঔদ্ধত্যের কারণে ইরানের হাতে ইসরায়েলের সামরিক অহংকারকেই দাফন করে ফেলেছেন।

[হামিদ মীর পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক। তাঁর কলামটি উর্দু দৈনিক জং থেকে অনুবাদ করেছেন: সাইমুম রিদা]

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়