ইরানে সাম্প্রতিক হামলার আগে দেশটি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় নকশার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালিত হিব্রু গণমাধ্যম ‘আর্মি রেডিও’ সূত্রে অজ্ঞাত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, এই তথ্যের ভিত্তিতেই ইসরায়েল প্রতিরোধমূলক হামলার সিদ্ধান্ত নেয়।
তারা জানায়, তাদের আক্রমণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। দেশটি আরও দাবি করেছে, তারা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছিল যে, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার এমন এক বিন্দুতে পৌঁছে যাচ্ছিল, যেখান থেকে তারা যেকোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলতে পারত।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা বাহিনী দাবি করেছে, এই গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরই ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতারা গত শুক্রবার ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও কর্মকর্তারা এ-ও সতর্ক করে দেন যে, ইসরায়েল এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয় যে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচিতে কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে এবং বাস্তবে তারা ধারণার চেয়েও অনেক অগ্রসর থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ইরানি বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে গোপনে এমন এক প্রকল্পে কাজ শুরু করেন, যার মাধ্যমে পারমাণবিক উপাদানকে একটি কার্যকর বিস্ফোরক যন্ত্রে রূপান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এই কাজ হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর শুরু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পাশাপাশি এই কাজ চলছিল, যা শান্তিপূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং অস্ত্র তৈরির জন্যই উপযোগী। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সম্প্রতি জানায়, ইরান যদি তার ইউরেনিয়াম মজুত আরও সমৃদ্ধ করে, তাহলে তা দিয়ে অন্তত নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা ইরানের গোপন পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয় এবং নিশ্চিত হয় যে, হামাসের হামলার পর ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে আইডিএফ ৯ জন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীর নাম প্রকাশ করেছে যাদের তারা প্রাথমিক হামলায় হত্যা করেছে। তারা হলেন—পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ফেরেদুন আব্বাসি, পদার্থবিদ মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি, রাসায়নিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ আকবর মোতালেবি জাদেহ, ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ সাঈদ বার্জি, পদার্থবিদ আমির হাসান ফাকাখি, চুল্লি পদার্থবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ আবদ আল-হামিদ মনুচেহর, পদার্থবিদ মনসুর আসগারি, পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ আহমদ রেজা জুলফাগারি দারিয়ানি এবং মেকানিক্স বিশেষজ্ঞ আলী বাখোয়েই কাতিরিমি।
আইডিএফ বলেছে, ‘নিহত সব বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ ইরানি পারমাণবিক প্রকল্পে জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিলেন এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশে কয়েক দশকের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ছিল তাদের।’ তারা আরও বলেছে, তাদের অনেকে মোহসেন ফাখরিজাদেহের উত্তরসূরি ছিলেন, যাকে ‘ইরানি পারমাণবিক প্রকল্পের জনক’ বলা হয় এবং যাকে ২০২০ সালে ইসরায়েল হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইসরায়েলের দাবি, তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। ইরান এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যেখান থেকে তারা যে কোনো সময় পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারত।
কয়েক ডজন গোয়েন্দা গবেষক কয়েক বছর ধরে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের ট্র্যাক করার লক্ষ্যে একটি গোপন প্রকল্পে কাজ করেছিলেন বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে শত্রুতা প্রকাশ্য সংঘাতের এক অভূতপূর্ব পর্যায়ে পরিণত হয়। ইরান এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে একটি বড় আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের ওপর চালানো হয় নজিরবিহীন হামলা। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল