এল আর বাদল: ইলন মাস্ক বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৩৩৫ বিলিয়ন ডলার। তবে, মাস্কের এত টাকা একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তির সম্পদের তুলনায় খুবই নগণ্য। ইতিহাস এমন একজন ব্যক্তির কথা বলে যার সম্পদ আজকের ধনী ব্যক্তিত্ব মুকেশ আম্বানি, ইলন মাস্ক, আদানি এবং টাটার মতো ব্যক্তিত্বদেরও ছাড়িয়ে যায়? -- জি নিউজ
সেই ব্যক্তি ছিলেন মানসা মুসা। ১৪ শতকে পশ্চিম আফ্রিকার মালির সম্রাট। তাঁকে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হত। ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন মুসা। ১৩১২ খ্রিস্টাব্দে রাজা হিসেবে অভিষেক হয় তাঁর। তাঁকে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি তাঁর সম্পদের পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়, তাহলে তা হবে ৪০০ বিলিয়ন ডলার।
যা আজকের শীর্ষ কোটিপতিদের সম্পদের চেয়েও বেশি। মানসা মুসার রাজত্ব মালিকে একটি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিল। যা বর্তমান মালি, সেনেগাল, আইভরি কোস্ট এবং বুরকিনা ফাসো জুড়ে বিস্তৃত ছিল।
এই সাম্রাজ্য প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল। বাম্বুক, বুরে এবং ওয়াঙ্গারার মতো অঞ্চলে সোনা এবং লবণের মজুদ ছিল প্রচুর সম্পদের সৃষ্টি করেছিল। ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য রুটে মালির ভৌগলিক অবস্থান এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সংযোগস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। যা আফ্রিকাকে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। মুসার মক্কায় বিখ্যাত তীর্থযাত্রা এতটাই বিলাসবহুল ছিল যে তিনি যেই অঞ্চলগুলির উপর দিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়েছিল।
লন্ডনের স্কুল অফ আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের গবেষক লুসি ডুরান জোর দিয়ে বলেন, মুসার উদারতা তাঁর ঐতিহ্যের একটি মৌলিক অংশ। সকলকে সাহায্য করার বহু নিদর্শন রেখে গিয়েছেন তিনি।
মানসা মুসা কেবল তাঁর বিশাল সম্পদের জন্যই নয়, উদারতার জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ ঘটনাগুলির মধ্যে একটি ছিল মক্কায় তীর্থযাত্রা। ১০০টি উট সোনা বহন করে, ১২,০০০ জন সহচর এবং ৬০,০০০ দাস নিয়ে মক্কার পথে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী, তিনি প্রায় ১৮ টন সোনা বহন করেছিলেন। যা ২০২২ সালের হিসেবে প্রায় ৯৫৭ মিলিয়ন ডলার। এই তীর্থযাত্রা মুসার অবিশ্বাস্য সম্পদের প্রদর্শন বিশ্বব্যাপী তাঁর অবস্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।