শিরোনাম
◈ এ‌শিয়া কাপে পাকিস্তানকে গু‌ড়ি‌য়ে দি‌লো ভারত, ম‌্যাচ জিত‌লো ৭ উই‌কে‌টে  ◈ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সে দ্রুততম মানব জ‌্যামাইকার অব‌লিক সেভিল ◈ পদ্মা সেতুতে সোমবার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় শুরু ◈ সিলেটের ডিসি সারওয়ার আলমকে শোকজ ◈ বিশ্ববাসীর প্রতি ইসরাইলকে শাস্তি দিতে আহ্বান কাতারের প্রধানমন্ত্রীর ◈ চলতি মাসেই বাংলাদেশ-মার্কিন শুল্ক চুক্তির আশা ◈ ইসরায়েল ইস্যুতে দোহায় শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ ◈ ‘নতুন বেতন কাঠামোতে ভাতা, অবসর সুবিধা ও বিশেষায়িত চাকরির বেতনও অন্তর্ভুক্ত হবে. ◈ বাংলা‌দেশ ক্রিকেট বো‌র্ডে নির্বাচন ৪ অক্টোবর ◈ রা‌তে ইং‌লিশ লি‌গে দুই ম্যানচেস্টারের লড়াই

প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫৪ দুপুর
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রেসিডেন্ট ইউনকে অপসারণ করল আদালত, নির্বাচন ৬০ দিনের মধ্যে

সিএনএন: এ রায়ের ফলে দীর্ঘ চার মাসের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা এবং আইনি জটিলতার অবসান ঘটল। সংবিধান অনুযায়ী, এখন ৬০ দিনের মধ্যে দেশটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সামরিক আইন জারি করে দেশকে রাজনৈতিক সঙ্কটে ফেলার কারণে অভিশংসিত ইউনের বিরুদ্ধে শুক্রবার আদালতের রায় কার্যকর হয়। এ রায়ের ফলে দীর্ঘ চার মাসের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা এবং আইনি জটিলতার অবসান ঘটল। সংবিধান অনুযায়ী, এখন ৬০ দিনের মধ্যে দেশটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ডিসেম্বরে স্বল্প সময়ের জন্য সামরিক আইন জারির পর দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে জাতীয় সংসদ প্রেসিডেন্ট ইউনের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। সেই অভিশংসনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার সাংবিধানিক আদালত তার অপসারণের চূড়ান্ত রায় দেয়। রায় ঘোষণার সাখে সাথেই ইউন প্রেসিডেন্টর পদ থেকে বরখাস্ত হন এবং তাকে বাসভবন ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

এই রাজনৈতিক সংকট এমন সময় এলো, যখন বিশ্ব অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে এবং দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করছিল। বিশেষত তখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছিল।

আটজন বিচারপতির সর্বসম্মত রায়ে আদালত জানায়, ইউনের সামরিক আইন ঘোষণাটি অসাংবিধানিক ছিল। কারণ তখন দেশে কোনো বাস্তবজাত সঙ্কট বিদ্যমান ছিল না। আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারক মুন হিউং-বে বলেন, এই ডিক্রি ঘোষণার জন্য যৌক্তিক কারণ ছিল না। এটি প্রেসিডেন্টর ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছে। ইউন আইন প্রণেতাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন এবং সশস্ত্র বাহিনীকে জনসাধারণের মুখোমুখি করে সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের দায়িত্ব ভুলভাবে পালন করেছেন।

এদিকে, ইউনের বিরুদ্ধে একটি পৃথক ফৌজদারি মামলাও চলমান রয়েছে। জানুয়ারিতে তাকে বিদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল, যদিও মার্চে আদালত তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল করে। তবে মামলাটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড, যদিও দক্ষিণ কোরিয়ায় বহু বছর ধরে কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি।

রায় ঘোষণার পর সিউলজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইউনের বিরোধীরা আদালতের সামনে আনন্দে ফেটে পড়েন, গান গেয়ে এবং পতাকা নাড়িয়ে উদযাপন করেন। তাদের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, ইউন পুনর্বহাল হলে আবারো সামরিক আইন জারি করতে পারেন। অন্যদিকে, ইউনের রক্ষণশীল সমর্থকদের ভিড় তার বাসভবনের বাইরে হতাশ ও বিষণ্ণ চেহারায় দেখা যায়।

এই ইস্যুটি পুরো জাতিকে গভীরভাবে বিভক্ত করেছে। রায়ের আগেই রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়, ব্যারিকেড বসানো হয় এবং সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকে।

ইউন, যিনি একসময় একজন তারকা প্রসিকিউটর হিসেবে খ্যাত ছিলেন, রাজনীতিতে প্রবেশ করে ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার শেষ অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এবার তিনি নিজেই অভিশংসিত ও অপসারিত হলেন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে তিনিই দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী প্রেসিডেন্ট।

আইন অনুযায়ী, তার অপসারণের ৬০ দিনের মধ্যে দেশটিতে নতুন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিরোধী নেতা লি জে-মিয়ং, যিনি ২০২২ সালের নির্বাচনে ইউনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন।

ইউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সামরিক আইন জারির সময় সেনাবাহিনীকে সংসদে প্রেরণ করেন এবং কমান্ডারদের আইনপ্রণেতাদের ‘টেনে টেনে বের করে আনতে’ নির্দেশ দেন। এতে জাতীয় পরিষদ কার্যত বন্ধ হয়ে যায় এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের চেষ্টাও করা হয়। ইউন দাবি করেন, এই পদক্ষেপ ছিল একটি ‘রাজনৈতিক অচলাবস্থা’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির হুমকি’ মোকাবিলার সাময়িক উদ্যোগ। সংসদ যদি এর বিরোধিতা করতো, তাহলে তিনি তা প্রত্যাহার করতেন।

তবে বাস্তবে তার ডিক্রি মাত্র ছয় ঘণ্টা স্থায়ী হয়। আইনপ্রণেতারা সংসদ ভবনে জোর করে প্রবেশ করে সর্বসম্মতিক্রমে ডিক্রিটি বাতিল করে দেন, যার ফলে চার মাসব্যাপী রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়। এই সময়ে জাতীয় সংসদ প্রধানমন্ত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকেও অভিশংসনের জন্য ভোট দেয়।

এক সময় ওয়াশিংটনে দক্ষিণ কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত ইউন, ২০২৩ সালে হোয়াইট হাউজে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে ‘আমেরিকান পাই’ গান গেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন। অনেকে একে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক মজবুত করার কৌশল বলে মনে করলেও তার সমালোচকরা বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা বলে মনে করেন।

এই রায় দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে একটি বড় বাঁক- যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাংবিধানিক শৃঙ্খলা এবং জনমতের প্রাধান্য আবারো প্রমাণিত হলো। এখন জাতি তাকিয়ে আছে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে, যেটি দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়