স্বাস্থ্য ডেস্ক: অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হন—বসা বা শোয়া অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়াতে গেলেই মাথা ঘুরে ওঠে, চোখে ঝাপসা দেখেন বা অন্ধকার দেখেন। এই সাধারণ সমস্যাটিকে বেশিরভাগ মানুষই গুরুত্ব দেন না। তবে চিকিৎসকদের মতে, এটি হতে পারে ‘অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন’ নামক এক বিশেষ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির লক্ষণ।
যখন কোনো ব্যক্তি বসা বা শোয়া অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ান, তখন যদি তার রক্তচাপ আকস্মিকভাবে কমে যায়, সেই অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন বলা হয়। এর ফলে মস্তিষ্কে সাময়িকভাবে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছাতে পারে না। এর জেরেই মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা বা ভারসাম্যহীনতার মতো অনুভূতি হয়। কিছু ক্ষেত্রে রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যার পেছনে মূলত চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন:
১. পানি শূন্যতা (Dehydration): শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাবে রক্তের পরিমাণ কমে যায় এবং রক্তচাপের আকস্মিক পতন হতে পারে। এর ফলে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরতে পারে।
২. দীর্ঘ সময় ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা: ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে বা শুয়ে থাকলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়। হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে শরীর দ্রুত সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না, ফলে রক্তচাপ কমে যায়।
৩. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: উচ্চ রক্তচাপ, অবসাদ (Depression) বা পার্কিনসনসের মতো রোগের জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন দেখা দিতে পারে।
৪. অন্যান্য শারীরিক সমস্যা: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্নায়বিক জটিলতা (Neurological Problems) বা অ্যানিমিয়ার মতো শারীরিক অসুস্থতার কারণেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে এবং এই সমস্যা দেখা দেয়।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা জরুরি:
ধীরে চলুন: বসা বা শোয়া অবস্থা থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠবেন না। ধীরে ধীরে অবস্থান পরিবর্তন করুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীরকে সতেজ রাখতে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
সচেতন থাকুন: ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলে, তাই এগুলো সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি এই সমস্যা বারবার হতে থাকে, তবে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঝে মাঝে মাথা ঘোরা সাধারণ হলেও এটি অবহেলা করার মতো বিষয় নয়। এটি কোনো বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে। তাই এই উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হোন এবং প্রয়োজনে যথাযথ পদক্ষেপ নিন।