খাবার খাওয়ার পর অনেকেই অনুভব করেন বুকের মাঝখানে বা গলার নিচে এক ধরনের জ্বালাপোড়া। এই অস্বস্তিকর অনুভূতি শুধু বিরক্তিকরই নয়, দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিতও হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’ বা ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি)’।
বুক জ্বালাপোড়ার মূল কারণ হলো পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালির ওপর দিকে উঠে আসা। এটি সাধারণত ঘটে যখন খাদ্যনালির নিচের অংশে থাকা একটি পেশি (লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিংটার) ঠিকভাবে কাজ না করে, ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপরে উঠে গিয়ে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।
বিশেষ করে নিচের কারণগুলো বুক জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী হতে পারে
বেশি তেল-ঝাল বা ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া
একবারে অনেক খাবার খাওয়া
খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া
ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
অতিরিক্ত ওজন
গর্ভাবস্থা
কিছু ওষুধ, যেমন পেইনকিলার বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ
বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যবয়সী ও বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে তরুণরাও এই সমস্যায় ভুগছেন। অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা, রাতে দেরি করে খাওয়া, ব্যায়ামের অভাব—এসবই ঝুঁকির অন্যতম কারণ।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন ও খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ আনলেই এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
নিচে কিছু কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হলো:
খাবার খাওয়ার পর অন্তত ২ ঘণ্টা শোয়া যাবে না
ছোট ছোট ভাগে বারবার খাবার খান
তেল, ঝাল, চা-কফি, চকলেট, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন
ধূমপান ও অ্যালকোহল বন্ধ করুন
রাতে শোয়ার আগে ভারী খাবার খাবেন না
বিছানার মাথা কিছুটা উঁচু করে শোয়া উপকারী
ওজন কমান
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টাসিড বা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে
যদি বুক জ্বালাপোড়া নিয়মিত হয়, ঘন ঘন ঢেকুর ওঠে, গলায় তীব্র জ্বালা লাগে, অথবা ওজন হ্রাস পায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বুক জ্বালাপোড়া আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ সমস্যা মনে হলেও, এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই সময়মতো সচেতন হওয়া, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই হতে পারে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।