এক বেলার খাবার অন্য বেলা দেখলেই খেতে চান না অনেকেই। বিভিন্ন ধরনের পদ ছাড়া তাদের মুখে খাবার রোচে না। সেখানে একই খাবার এত দিন ধরে খাচ্ছেন এই অভিনেতা! বলছিলাম জনপ্রিয় অভিনেতা ইমরান হাশমির কথা।
এই অভিনেতার খাবারের তালিকায় চোখ রাখলে ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে আপনার।
সালাদ, মুরগির মাংসের কিমা আর সঙ্গে এক বাটি রাঙা আলু সিদ্ধ। যে খাবার দেখলে নাক সিঁটকাবেন অনেকেই, সেই খাবারই খান হিন্দি ছবি ‘মার্ডার’-এর নায়ক ইমরান হাশমি। দুএকদিন নয়, প্রায় দুই বছর ধরে একই খাবার খেয়ে চলেছেন এই অভিনেতা।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তেমনই জানিয়েছেন ইমরান।
অভিনেতা বলছেন, ‘আমি দিন শুরু করি একবাটি সালাদ দিয়ে। সঙ্গে থাকে মুরগির মাংসের কিমা, যা হজম করতে সুবিধা হয়। মাংস চিবাতে বিশেষ ভালো লাগে না বলে এই ভাবে খাই। সঙ্গে থাকে এক বাটি রাঙাআলু সিদ্ধ।
শেষ দুই বছর ধরে এটাই আমার ডায়েট।‘ ইমরান জানিয়েছেন, তার রাঁধুনি একবারে এক সপ্তাহের খাবার প্রস্তুত করে রাখেন। সেটাই তিনি নিয়ম করে খান।
পুষ্টিবিদরা একে ‘মনো ডায়েট’ বলে থাকেন। পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, একই ধরনের খাবার খেয়ে এই ডায়েট করা হয়।
কিন্তু যিনি করছেন, তার খাদ্য বাছাই এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে সঠিক মাত্রায় ম্যাক্রো ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস থাকা জরুরি। দরকার ফাইবারও।
কত রকমের ডায়েট হয়
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ মনো ডায়েট : যেমন আলু, ভাত, কলা দিয়ে ডায়েট করেন অনেকেই। এতে কার্বোহাইড্রেট ও শর্করা থেকে শক্তি পায় শরীর। প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ মনো ডায়েট : প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিম, মাংসই থাকে মূলত। এই ধরনের ডায়েটে প্রোটিনের ভাগ বেশি থাকলেও ফাইবার, উদ্ভিজ্জ ভিটামিন বাদ পড়ে।
ফ্যাট সমৃদ্ধ মনো ডায়েট : বাদাম, অ্যাভোকাডোর মতো খাবার ডায়েটে প্রাধান্য পায়। ফ্যাট থেকে শক্তি পায় শরীর। তবে ভিটামিন, অ্যামাইনো এসিডের অভাব হতে পারে এতে।
এই পুষ্টিবিদ বলছেন, এর উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমন অসুবিধাও আছে। মনো ডায়েট দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। তা ছাড়া একই রকম খাবার খাওয়ার ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে।
অস্ট্রেলিয়ার এক শিক্ষক অ্যান্ড্রু টেলর টানা এক বছর শুধু আলু খেয়ে প্রায় ৫০ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন। কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করার মাত্রাও ঠিক ছিল এতে। তবে ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট নিতেন তিনি। এভাবে মেদ গলানোর পন্থা নিয়ে যথেষ্ট হইচইও হয়েছিল।
তবে একাধিক সমীক্ষা ও গবেষণা বলছে, বিষয়টি ভোজনরসিকদের জন্য বেশ কষ্টকর। একই খাবার খাওয়া বিরক্তিকরও। তা ছাড়া এই ধরনের ডায়েটে পুষ্টিতে ফাঁক থেকে যেতে পারে। বিশেষত দীর্ঘ সময় ধরে মনো ডায়েট করলে ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, জিঙ্কের মতো জরুরি ভিটামিন ও খনিজের অভাব হতে পারে। তার ফলে রক্তাল্পতা, অল্পে ক্লান্ত হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়াও স্বাভাবিক। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যেতে পারে সঠিক সাপ্লিমেন্ট না খেলে।
সে কারণে ওজন কমানোর জন্য মনো ডায়েট করলেও, তা লম্বা সময়ের জন্য না করাই ভালো। যদি কেউ করেন, পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। যদিও ইমরান হাশমির ডায়েট ও খাবার বাছাই অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর বলে মত পুষ্টিবিদদের। তাদের কথায়, কার্বোহাইড্রেট খাবার আগে একবাটি সালাদ রক্তে শর্করার মাত্রা বশে রাখতে সাহায্য করবে। সালাদে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়তে দেবে না। গাজর, শসা, লেটুস প্রভৃতি টাটকা শাক-সবজির সালাদ সেই কারণে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, মুরগির মাংসের কিমা শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগান দেয়। রাঙাআলুতে মেলে শর্করা, যা শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে পারে। একই সঙ্গে এতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়ক এবং ভালো ব্যাক্টেরিয়ার খাবারও। সালাদে মেলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও ফ্ল্যাভোনয়েডস-এর মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে, প্রদাহ কমায়।
মনো ডায়েট সাধারণত দিনে এক বারই খাওয়া হয়। তাই এই ডায়েট অনুসরণ করতে হলে, পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নয়তো হিতে-বিপরীত হতে পারে। সূত্র : আনন্দবাজার ডট কম