পোষ্য কোটা স্থগিতে উপাচার্যের নেওয়া সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। আজ রোববার সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পোষ্য কোটা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেটের এই জরুরি সভা শুরু হয়। সভা শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, আজ সিন্ডিকেটে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথমত, গতকাল শনিবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সিন্ডিকেট নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। দ্বিতীয়ত, এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে—একটা অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ও আরেকটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। তৃতীয়ত, রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি সিন্ডিকেটের অংশ নয়, কিন্তু সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে সিন্ডিকেট। এটা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে।
ইফতিখারুল আলম আরও বলেন, ‘সিন্ডিকেটের ফুল বডির উপস্থিতিতে সভা হয়েছে। গতকাল ক্যাম্পাসে যে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্যই আমাদের আজকের সিন্ডিকেট সভা ছিল। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির ভেতরে যতগুলো এজেন্ডা আছে, সব কটি এখানে আলোচিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অথবা ছাত্রদের কোনো ধরনের একটা গোলমাল লাগিয়ে দেওয়ার একটা অপচেষ্টা সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন। এ জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাকসু নির্বাচন নিয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আমাদের রাকসু নির্বাচন। রাকসু নির্বাচন আশা করছি যথাসময়ে হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের ছাত্র–শিক্ষক, শিক্ষক ও কর্মকর্তা, যাঁরা রাকসুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন, তাঁরা আজ কর্মবিরতি পালন করেছেন, কিন্তু সেই কর্মবিরতিতে রাকসুর কার্যক্রমকে তাঁরা আওতামুক্ত রেখেই কাজ করেছেন। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী।’
ইফতিখারুল আলম বলেন, ‘রাকসু একটা পৃথক বডি। স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে। আমাদের এখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু থাকে না। আমরা যতগুলো পক্ষ আছে, তারা যেন আসন্ন রাকসু যথাসময়ে হয় এবং এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহযোগিতা কামনা করছি সিন্ডিকেটের তরফ থেকে।’ পোষ্য কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল রাতে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম। এটা স্থগিত থাকছে। সিন্ডিকেট উপাচার্যের এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। এটা নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে অচিরেই। কিন্তু এখন এটা স্থগিত থাকছে।’
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, আজ এ নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে তখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
তবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে কর্মবিরতিতে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সভায় বসেছেন। নির্বাচন কমিশনও সভা ডেকেছে। সূত্র: প্রথম আলো