শিরোনাম
◈ দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু: ট্রাভেল পাসের আবেদন তারেক রহমানের ◈ হাসিনার অনুসারীদের জামিন বিতর্কে আইন উপদেষ্টার উদ্বেগ প্রকাশ ◈ প্রার্থীদের অস্ত্রের ঝুঁকি, নিরপেক্ষ প্রশাসন নিয়ে চ্যালেঞ্জ ইসির ◈ কূটনীতির রীতিনীতি কি উপেক্ষা করছেন প্রণয় ভার্মা ◈ ওসমান হাদির অস্ত্রোপচার হবে সিঙ্গাপুরে, অনুমতি দিয়েছে পরিবার ◈ দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করলো সরকার ◈ দুর্বল প্রতিপ‌ক্ষের বিরু‌দ্ধে  লড়াই ক‌রে জিত‌লো ‌রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ মেয়েকে নিয়ে ২৫ তারিখ সকাল ১১টায় ঢাকায় নামবেন তারেক রহমান ◈ নির্বাচন নিয়ে ভারতের 'নসিহতে' বাংলাদেশের তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন? ◈ শেষ স্ট্যাটাসে ওসমান হাদিকে নিয়ে যা লিখেছিলেন এনসিপির নেত্রী রুমী

প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:৪৩ দুপুর
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অর্থখাতে কড়াকড়ি: ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত সবুজ সংকেত

বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫–এর আওতায় নয়টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের (লিকুইডেট) প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করন।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড গতকাল এই অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি।

ওই কর্মকর্তা জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ, লিকুইডেটর নিয়োগ, সম্পদ বিক্রি এবং প্রাপ্ত অর্থ পাওনাদারদের মধ্যে বণ্টন করতে পারবে।

ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্সে আর্থিক সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে একীভূত করা, পুনর্গঠন করা বা বন্ধ করা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে তাও এতে উল্লেখ আছে।

দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়ার পরপরই এই সিদ্ধান্ত এলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড ইতোমধ্যে নতুনভাবে একীভূত সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক একীভূতকরণ। নতুন প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হতে চলেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার এই উদ্যোগের মাধ্যমে বোঝা যায়, আর্থিক খাতে দীর্ঘ বছরের অবনতির পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন অনেক কঠোর ও সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে।

নয়টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ এই নয়টি প্রতিষ্ঠানের। গত বছরের শেষে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।

এই নয়টির মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি গড় নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা। এখান থেকে বোঝা যায়, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের পক্ষে দায় পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব। সহজ ভাষায় বললে, প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রি করে সব ঋণ শোধ করলেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছুই থাকবে না, অথবা থাকলেও তা খুবই সামান্য।

আমানতকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই অনুমোদন দিয়েছে। অনেক আমানতকারীর স্কিমের মেয়াদপূর্তি হওয়ার পরও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তারা মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন, এমনকি বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন কেউ কেউ।

শনিবার দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খুব শিগগিরই লিকুইডেটর নিয়োগ করবে।

তিনি আরও বলেছিলেন, 'লিকুইডেশন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সরকার ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে।'

'আমানতকারীদের রক্ষা করতেই তারা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ (লিকুইডেশন) করার পথে এগোচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়া আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার,' বলেন তিনি।

আভিভা ফাইন্যান্সের গ্রাহক খলিল আহমেদ খান (৬৪) জানান, তার ২৩ লাখ টাকার আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে জানুয়ারিতে। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

তিনি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করলেও কোনো ফল হয়নি বলে জানান।

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত খলিল আহমেদ খান বলেন, তারা টাকা দিতে দেরি করায় চিকিৎসা খরচ জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

'আমার ঋণ পরিশোধ ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে টাকার দরকার,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরনের আমানতকারী মিলিয়ে নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত আটকে আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা একক গ্রাহকের এবং ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা ব্যাংক ও করপোরেট আমানতকারীর।

একক আমানতকারীর আমানত আটকে থাকার দিক থেকে শীর্ষে আছে পিপলস লিজিং, প্রতিষ্ঠানটিতে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আটকে আছে। এরপর আছে—আভিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি টাকা, এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের এই সংকটের গোড়ায় রয়েছে বহুদিনের সমস্যা। ব্যাংকের তুলনায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি কম ছিল। ফলে বছরের পর বছর ধরে কেলেঙ্কারি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও অনিয়ম জমতে জমতেই আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এই খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান সম্পদের পরিমাণ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো এবং লোকসান কম দেখানোর মাধ্যমে তাদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা লুকিয়ে রেখেছিল।

এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স ডিপার্টমেন্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। ওই তালিকায় এই নয়টি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল এবং এবং নামগুলো ব্যাংক রেজোলিউশন ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়।

এর আগে ১০ মাসের একটি মূল্যায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে 'লাল' ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করে।

তালিকায় থাকা বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান হলো—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। উৎস: ডেইলি স্টার।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়