শিরোনাম
◈ জুলাই ঘোষণাপত্র না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ◈ নিষিদ্ধ হয়ে গণহত্যাকারীরা সারাদেশে বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা করছে: আসিফ মাহমুদ ◈ সাভারে মেয়ের হাতে বাবা খুনের আসল ঘটনা নিয়ে যা জানা গেলো ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে আনন্দ উল্লাস! (ভিডিও) ◈ পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশকে জামায়াতের কাছে লিজ দিন: ডা. তাহের ◈ জনগণ পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না: তারেক রহমান (ভিডিও) ◈ লঞ্চে দুই তরুণীকে পেটানো যুবকের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ, আসলে কী হয়েছিলো? যা জানাগেল (ভিডিও) ◈ তামিম ইকবালকে নিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে এতদিন পরে রাস্তায় কেন?

প্রকাশিত : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩২ বিকাল
আপডেট : ১০ মে, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিকল্পনা

কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আজ সোমবার রাজধানীতে ‘বাংলাদেশে তুলা চাষের সম্ভাবনা ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের গুরুত্ব’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি একথা বলেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ আগেই শুল্কের আওতায় রপ্তানি করলেও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঝুঁকি সব সময়ই থাকে। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করি এবং সেই তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি, তাহলে তারা আমাদের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে।’

তুলাকে দেশের ‘কৃষিপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে উৎপাদন বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণার বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দেশী তুলার ওপর আরোপিত কর ৪ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় যেখানে দেশী তুলাকে প্রণোদনা দেওয়া উচিত, সেখানে ট্যাক্স-ভ্যাট বসানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যে পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হয়, তার কিছু অংশে তুলা চাষ করলে কৃষকও লাভবান হবেন। কারণ তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। সেখানে তুলা চাষ করে দেশ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত এনবিআর সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (কাস্টম বন্ড) বলেন, দেশী তুলার ওপর আরোপিত কর কমানোর জন্য এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ করা হবে। এবিষয়ে শিগগির সুখবর আসতে পারে।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রথমে এটি তুলা আমদানির ক্ষেত্রে চালু করা হতে পারে।

বাংলাদেশ কটন জিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাবের বলেন, বাংলাদেশে তামাক কৃষি পণ্য, অথচ তুলাকে এখনো কৃষি পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে তুলা চাষি ও জিনার্সরা কৃষি ঋণ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ঋণ নিতে বাড়তি সুদ দিতে হয়।

সরকারের নীতি সহায়তা পেলে অন্তত দুই লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করে আমদানি করা তুলার চার ভাগের এক ভাগ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।  

গোলাম সাবের বলেন, তুলা আমদানিতে চীনকে হটিয়ে বাংলাদেশ এখন শীর্ষ দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। চামড়ার মৌসুমে ট্যানার্সদের যেভাবে স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়া হয়। তুলাতেও স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়া হলে কৃষকরা তুলা উৎপাদন করে দাম পাওয়ার অনিশ্চয়তা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. ফকরে আলম ইবনে তাবিব বলেন, দেশে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয়। বিপুল এই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এক-চতুর্থাংশ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব।

এক উপস্থাপনায় তিনি বলেন, দেশে ৫২৬টি স্পিনিং মিল আছে, যারা তুলা থেকে সুতা তৈরি করে। এই মিলগুলোতে বছরে ৭.৩ মিলিয়ন বেল (এক বেল সমান ৪৮০ পাউন্ড বা ২১৮ কেজি) তুলার চাহিদা আছে। এর মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ মিলিয়ন বেল দেশে উৎপাদন হয়।

ফকরে আলম বলেন, ধানের জমিতে তুলা চাষ হয় না। তুলা মূলত চরাঞ্চল, বরেন্দ্র এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা, পাহাড়ি এলাকাকে সহ উঁচু জমিতে তুলা চাষ করা হয়। নীতি সহযোগিতা দেওয়া হলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত না করেই দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন তুলা উৎপাদন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, তুলাবীজ থেকে ভোজ্যতেল ও গবাদিপশুর খাদ্য খৈল পাওয়া যায়। ফলে তুলা চাষ বাড়লে আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেল ও খৈল আমদানি কমবে বলে।

স্থানীয় মিলাররা পশ্চিম আফ্রিকার দেশ থেকে তুলার বড় একটি অংশ আমদানি করেন। এর বাইরে ভারত, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি হয়।

সুদানে তুলা চাষে সফল হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা আবুল খায়ের। তিনি বাংলাদেশ সুদান কটন জিনিং ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

অনুষ্ঠানে আবুল খায়ের বলেন, তিনি বাংলাদেশে তুলা চাষ বাড়াতে সহায়তা করবেন। ইতিমধ্যে উচ্চ ফলনশীল তিনটি উন্নত জাতের তুলা বীজ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। এই নতুন জাতের চাষাবাদ শুরু হলে কম জমি থেকে বেশি তুলা উৎপাদন করার সম্ভব।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

সভাপতির বক্তব্যে ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, তুলা এখনো কৃষি পণ্য নয় বা দেশি তুলার ওপর বৈষম্যমূলক কর আছে, অনেকে তা জানত না। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় নীতি সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়