দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনছে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা জাল টাকার একটি ভয়ংকর চক্র। ইয়াবা, প্রসাধনী ও অন্যান্য চোরাচালানের রুটে এসব জাল নোট ঢুকছে বলে যমুনা টিভির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। দেখতে অবিকল আসল টাকার মতো হওয়ায় সাধারণ মানুষ হাতে ধরেও এগুলো চিনতে পারছেন না।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো ভয়ঙ্কর তথ্য
যমুনা টিভির অনুসন্ধানী দল ক্রেতা সেজে প্রথমে রাসেল ও পরে চক্রের মূল হোতা হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
উৎপাদন ও মূল্য: হাসান জানান, এই জাল নোটগুলো ভারতেই তৈরি হয় এবং এগুলো ব্যাংক পর্যন্ত চালানো সম্ভব, কারণ ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও এগুলো সহজে শনাক্ত করার ক্ষমতা নেই। তিনি জানান, নির্দিষ্ট পরিমাণ জাল টাকার জন্য ক্রেতাকে ৩৬ হাজার টাকা দিতে হয়।
নমুনা সংগ্রহ: অনুসন্ধানকারী দল অগ্রিম টাকা পাঠিয়ে কঁচকচে নতুন নয়, বরং কিছুটা ব্যবহৃত ১০০০ টাকার কয়েকটি জাল নোটের নমুনা সংগ্রহ করে।
শনাক্তের উপায়: বিশেষজ্ঞরা জানান, আসল টাকার মতো পরিবর্তনশীল রংয়ের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য জাল নোটগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে। তবে শুধু ইউভি (UV) ফিচারটি অনুপস্থিত, যা কেবল মেশিনেই শনাক্ত করা সম্ভব। শেরপুরের একটি বাজারে এই নোটগুলো দিয়ে পরীক্ষা চালালে দেখা যায়, সাধারণ বিক্রেতারা কেউই বুঝতে পারেননি যে এগুলো জাল টাকা।
পোস্ট অফিসের মাধ্যমে জাল টাকা বিতরণ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা
এই চক্রের ফাঁদে পড়ে শেরপুরের হতদরিদ্র শাহিনা বেগম তার সারা জীবনের সঞ্চয় জাল নোট হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর নিঃস্ব হয়েছেন।
পোস্ট অফিসের দায়: শাহিনা বেগম শেরপুর পোস্ট অফিস থেকে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়ের টাকা তুলেছিলেন, যা পরে ব্যাংকে জমা দিতে গিয়ে জাল হিসেবে ধরা পড়ে।
কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা: একই দিনে পোস্ট অফিস থেকে আরও এক ব্যক্তিকে ২৫ হাজার টাকার জাল নোট দেওয়া হয়েছিল, যা সোনালী ব্যাংকে ধরা পড়ে। সিসিটিভি ফুটেজ ও ব্যাংকের সন্দেহের ভিত্তিতে পোস্ট অফিসের ক্যাশিয়ার মানিক মিয়া ও ট্রেজার হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাফিজুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানিয়েছেন, টাকাগুলো পোস্ট অফিস থেকেই দেওয়া হয়েছিল।
সীমান্তে চক্রের রমরমা কারবার
গ্রেপ্তারকৃতদের কললিস্ট ধরে অনুসন্ধান করে জানা যায়, তাদের সঙ্গে রাসেল ও হাসান-এর মতো মূল সন্দেহভাজনদের যোগাযোগ ছিল, যাদের অবস্থান ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ি সীমান্তে। স্থানীয়রা নিশ্চিত করেন, এই সীমান্ত দিয়ে মাদক ও প্রসাধনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জাল টাকাও সীমান্তের ওপার থেকে ঢুকছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তা
জাল টাকার বিস্তার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক সীমান্ত এলাকায় বড় নোটের লেনদেন ফিজিক্যাল ট্রানজেকশনের বদলে ক্যাশ-লেস বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করার পরামর্শ দিয়েছে।
বর্তমানে শাহিনা বেগম চরম অশান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন এবং জীবনভর সঞ্চয় ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এই ভয়াবহ জাল নোটের বিস্তার রোধে সরকার ও সাধারণ মানুষ সবারই সচেতন হওয়া জরুরি।