শিরোনাম
◈ ইউনুস স্যার যদি ওইখানে বসে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন তাহলে স্যারেরও পতন আসন্ন: নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী (ভিডিও) ◈ প্রধান উপদেষ্টার সাত দফা প্রস্তাব: রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন ◈ বাম দলগুলোর নির্বাচনী জোট গঠন জোরদার হচ্ছে ◈ অবশেষে খোঁজ মিলেছে ডিবি হারুনের! টেক্সাসের উডল্যান্ডে কী করছেন ডিবি হারুন? (ভিডিও) ◈ বিদেশি কর্মীদের ‘নিরাপত্তা ছাড়পত্র’ প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল ◈ ব্যাংক হিসাব জব্দ করা সবসময় সঠিক পদক্ষেপ নয়: ফরাসউদ্দিন ◈ আশ্বাসের পরিবর্তে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আরাকান আর্মিকে সক্রিয় হতে হবে ◈ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ নয়, আপাতত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না: ড. ইউনূস (ভিডিও) ◈ শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বর্ণকাণ্ড: আলমারি ভেঙে চুরির নাটক সাজিয়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ আত্মসাৎ কাস্টমস কর্মকর্তাদের ◈ এ‌শিয়া কা‌পের ফাইনালে উঠতে না পারায় ক্রিকেট প্রেমী‌দের কাছে ক্ষমা চাইলেন লিটন দাস

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:২৭ বিকাল
আপডেট : ০১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বর্ণকাণ্ড: আলমারি ভেঙে চুরির নাটক সাজিয়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ আত্মসাৎ কাস্টমস কর্মকর্তাদের

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউসের সুরক্ষিত ট্রানজিট গোডাউনের লকার থেকে সাড়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা যেন সিনেমার গল্প। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পৃথক তদন্তে উঠে এসেছেÑ এটি চুরি নয়, কাস্টমস কর্মকর্তাদের আত্মসাৎ। এ জন্য গোডাউনের ভেতরের স্টিলের আলমারি ভেঙে এবং এসি ভেন্ট কেটে সাজানো হয় ‘চুরির নাটক’। এজন্য স্বর্ণ রাখা স্টিলের আলমারি ভাঙেন। এমনকি কাস্টমস গোডাউনের পূর্ব পাশের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বাতাস যে অংশ দিয়ে বের হয়, সেখানকার টিনের কিছু অংশ কেটে গর্ত করেন। যেন বোঝানো যায় চোর এই গর্ত দিয়ে ঢুকে স্বর্ণ চুরি করে আবার বেরিয়ে গেছে। কিন্তু এসবই ছিল চুরির নাটক মঞ্চায়নের অংশ।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস ট্রানজিট গোডাউন থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েব হওয়ার ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে অবাক করা তথ্য। প্রথমে চুরির মামলা হলেও তদন্তে প্রমাণ মিলেছে গোডাউনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তারাই স্বর্ণ আত্মসাৎ করে আলমারি ভেঙে চুরির নাটক সাজান। সিসি ক্যামেরার ১৮ দিনের ফুটেজ গায়েব করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সাড়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এনবিআর এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের তৎকালীন কিছু কর্তাব্যক্তি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জোর চেষ্টা করেন। এমনকি কাস্টমস গোডাউনের সিসি ক্যামেরার ১৮ দিনের ফুটেজ গায়েব করা হয়। স্বর্ণ আত্মসাতের ঘটনায় বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন সুবিধাভোগী। যে কারণে গোডাউনের দায়িত্বশীলদের বাঁচাতে জোর চেষ্টা করেছিলেন তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

কাস্টমস গোডাউনে রাখা স্বর্ণের হিসাব মেলাতে গিয়েই স্বর্ণ গায়েবের বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে সাড়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির অভিযোগে ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থানায় একটি চুরির মামলা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ওই মামলা প্রথমে বিমানবন্দর থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হয়ে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে ন্যস্ত হয়। তদন্তকালে গোয়েন্দা পুলিশ ও পিবিআই স্বর্ণ চুরির মামলায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম সাহেদ, সিপাহি মো. আফজাল হোসেন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আকরাম শেখ, মো. মাসুম রানা, সিপাহি মো. মোজাম্মেল হক, মো. নিয়ামত হাওলাদার ও মো. রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক নূরনবী সরকার মহানগর দায়রা জজ-১ আদালতে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আসামি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষের আদেশে গোডাউনের দায়িত্ব আসামি মোঃ মাসুম রানা ও আকরাম শেখদ্বয়কে বুঝিয়ে দেয়াকালে মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ অডিটের কথা বলে তাদের কাছ থেকে দায়িত্ব হস্তান্তর ও গ্রহণ তালিকার কপিতে স্বাক্ষর দিতে বলেন। তারা সরল বিশ্বাসে স্বাক্ষর দেন। কিন্তু ডিএমভুক্ত পণ্য মাসুম রানা ও আকরাম শেখকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ৬টি

ডিএম ভুক্ত পণ্য (স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার) গোডাউনে হতে খোয়া যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসে। একপর্যায়ে মাসুম রানা ও আকরাম শেখ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ বাইরে থেকে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী মোঃ আজিজুল হকের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকায় খোয়া যাওয়া ৬টি ডিএমভুক্ত পণ্য ক্রয় করে ট্রানজিট গোডাউনে রেখে সমন্বয় করেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গোডাউনের সব পণ্য ইনভেন্ট্রি শুরু করলে মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ তাদের সঙ্গে থাকা অপর গোডাউন কর্মকর্তা আসামি মোঃ মাসুম রানা ও আকরাম শেখকে নানা ধরনের ভয় ভীতি দেখিয়ে গোডাউনে একটি চুরির নাটক সাজানোর জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে।

একপর্যায়ে আসামি মোঃ মাসুম রানা ও আকরাম শেখকে ম্যানেজ করে গোডাউনের স্টিলের আলমারি ভেঙে একটি চুরির নাটক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ইনভেন্ট্রি চলাকালে আসামি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও গোডাউনের দায়িত্বে থাকা সিপাহি আসামি মোঃ নিয়ামত হাওলাদার গোডাউনের ভিতরে বস্তার স্তূপের ওপর বসে ছিল মর্মে আসামি মোঃ শহিদুল ইসলাম, নিয়ামত হাওলাদারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সেখানে তাদের ওই সময় বসে থাকার কথা না। তারা গোডাউনের পূর্ব পাশের ছাদের (সিলিং) এসির বাতাস প্রবাহিত হওয়ার টিনের বক্স কেটে চুরির নাটক সাজানোর জন্যই সেখানে বসে ছিল বলে আসামি মোঃ মাসুম রানা ও আকরাম শেখ জিজ্ঞাসাবাদে জানান।

আসামি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞসাবাদে জানান, দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ করা অবস্থায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চের শুরুর দিকে ট্রানজিট ও মূল্যবান গোডাউনে থাকা ২০২১ সালের ডিএমভুক্ত মালামাল ২টি গোল্ড বার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একজন যাত্রী ফেরত নিতে আসে। তখন গোডাউনে ঐ ডিএমভুক্ত পণ্য গোল্ডবার ২টি খুঁজে না পাওয়ায় আসামি শহিদুল ইসলাম ও অপর আসামি সাইদুল ইসলাম সাহেদ গুদামে থাকা পুরান বাজেয়াপ্ত মালামাল থেকে ২টি গোল্ডবার নিয়ে যাত্রীকে বুঝিয়ে দেন।

যার প্রত্যেকটির ওজন ১১৬ গ্রাম করে ২টি গোল্ড বারের মোট ওজন ২৩২ গ্রাম। আসামি শহিদুল ইসলাম ও অপর আসামি সাইদুল ইসলাম সাহেদ গুদামের ধারাবাহিক কার্যক্রম করাবস্থায় ২০২৩ সালের জুন মাসে ২৭০ থেকে ২৭২টির মতো গোল্ডবার আটক করা হয়। উক্ত আটককৃত গোল্ডবার আসামি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও অপর আসামি সাইদুল ইসলাম সাহেদ গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে গুদামে সংরক্ষণ করতেন। সেখান থেকে ৮৯টি গোল্ডবার খোয়া গেলে মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ গুদামে থাকা বাজেয়াপ্ত গোল্ডবার থেকে ৮৯টি গোল্ড বার নিয়ে যাত্রীদের ফেরত প্রদান করেন। ৯১টি গোল্ডবারের বিষয়ে আসামিদ্বয় কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গোডাউন কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে নিজেরাই স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার গোডাউন থেকে আত্মসাৎ করেন। যে কারণে তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি। গোডাউনে অজ্ঞাতনামা বাইরের চোর বা চোরেরা কোনো কিছু চুরি করে নিয়ে যাবে এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই। অজ্ঞাতনামা চোর বা চোরেরা ঘটনাস্থল থেকে কোটি টাকার কারেন্সি না নিয়ে এক দিনে একসাথে প্রায় ৫৬ কেজি স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অসম্ভব ও অবাস্তব। মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম অপর আসামি মোঃ নিয়ামত হাওলাদারের সহায়তায় চুরির নাটক সাজান।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ গোডাউনের দায়িত্বভার আসামি মোঃ মাসুম রানা ও আকরাম শেখকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ইনভেন্ট্রিকালে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পায়। আসামি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ তাদের দায়িত্বকালীন সিপাহি মোঃ নিয়ামত হাওলাদারের সহায়তায় গোডাউন থেকে সাড়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার অন্যত্র সরিয়ে আত্মসাৎ করে। এ ক্ষেত্রে চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি মর্মে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতার আলোকে প্রকাশ পায়। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামিগণ জড়িত মর্মে প্রাথমিকভাবে জড়িত মর্মে প্রতীয়মান হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মূল্যবান ট্রানজিট গোডাউন রক্ষণাবেক্ষণে দি কাস্টম আইন, ১৯৬৯-এর বিধান মতে যেভাবে বলা হয়েছে, সেমতে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল বলে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পিবিআইয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, পিবিআইয়ের তদন্তে স্বর্ণ চুরির ঘটনাটি যে চুরি নয় তা প্রমাণিত হয়েছে। কাস্টমসের ট্রানজিট গোড়াউনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক আত্মসাৎ ও তদারককারী কর্মকর্তাদের গাফিলতির ফলে সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শিডিউলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় চুরির মামলাটির তদন্তভার আদালতের নির্দেশে দুদকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, চুরির মামলাটি দুদক এখন যাচাই বাছাই করছে। এ কাজ শেষ হলে স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হবে। সূত্র: দৈনিক আমাদেরসময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়