সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জালনোট তৈরির সঙ্গে জড়িত একাধিক চক্রের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করেছে। নিচে এই চক্রগুলোর কার্যক্রম ও গ্রেপ্তারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
চক্রের কার্যক্রম ও গ্রেপ্তার
মহাখালী অভিযান: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয় সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ও তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
কামরাঙ্গীরচর অভিযান: কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকার জালনোট উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালিয়ে আরও ১৬ লাখ টাকার জালনোট ও তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
জালনোট তৈরির প্রক্রিয়া
চক্রগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জালনোট তৈরি করে। তারা উন্নতমানের ল্যাপটপ, প্রিন্টার, হিট মেশিন, স্ক্রিন, ডাইস, নিরাপত্তা সুতা, দামি কালি, আঠা ও স্কেল কাটার ব্যবহার করে। গ্রাফিক্সের কাজের জন্য কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেওয়া হয়, যারা টাকার জলছাপসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য হুবহু নকল করে।
বাজারজাতকরণ ও বিতরণ কৌশল
জালনোট তৈরির পর চক্রগুলো তা বিভিন্ন পর্যায়ে বাজারজাত করে। প্রথমে অর্ডার অনুযায়ী জালনোট তৈরি করা হয়, তারপর তা অর্ডারদাতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, এবং শেষে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ঈদ ও পূজার মতো ধর্মীয় উৎসবগুলোকে টার্গেট করে তারা সক্রিয় হয়।
অনলাইন প্রশিক্ষণ ও বিক্রয়
কিছু চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (যেমন ইউটিউব, ফেসবুক, টেলিগ্রাম) জালনোট তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় এবং বিক্রয় করে। তারা অনলাইনে গ্রুপ ও পেজ খুলে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দেয় এবং অগ্রিম অর্থ নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে জালনোট সরবরাহ করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ
পুলিশ ও র্যাব জালনোট চক্রের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। ঈদ ও অন্যান্য উৎসবের আগে এসব অভিযান আরও জোরদার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হচ্ছে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
বড় অঙ্কের লেনদেনের সময় নোট যাচাই করুন।
সন্দেহজনক নোট পেলে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করুন।
জালনোট শনাক্তকরণে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।
জালনোট চক্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা আমাদের সকলের দায়িত্ব। উৎস: ঢাকা পোষ্ট, বাংলানিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪ ও চ্যানেল২৪