ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আবারও শুরু হয়েছে পুকুর ভরাটের কার্যক্রম। নগরীর ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লার প্রায় সাড়ে তিন বিঘা আয়তনের ঐতিহ্যবাহী ‘জোড়া পুকুর’ সম্প্রতি ভরাট করা হচ্ছিল। গত জানুয়ারি থেকে পুকুর ভরাট কার্যক্রম শুরু হলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। পরে গত ৬ মার্চ বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার নিজ উদ্যোগে ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে দেন এবং ২১ জন শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে পুকুরটির উদ্ধার কাজ শুরু করেন। সে সময় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়, কারণ এই প্রথম নগরীর কোনো ভরাট হওয়া পুকুর পুনরায় সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তবে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পূর্বে অপসারণ করা ভরাটের মাটি পুনরায় ফেলা হচ্ছে। পুকুরের পাশে ভেঙে ফেলা একটি বহুতল ভবনের ধ্বংসাবশেষও সেখানে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, হিকু নামের এক ঠিকাদার শরিকদের কাছ থেকে পুকুরের জমি কিনে নিয়েছেন। তিনি পুকুর ভরাট করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে প্লট বানিয়ে ব্যবসা করতে চাইছেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, এভাবে পুকুর ভরাট হয়ে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। শহরে আকস্মিক পানি সংকট দেখা দিলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে পানির উৎস না থাকায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
৯২ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা চাঁন মোহাম্মদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ছোটবেলায় এই পুকুরেই সাঁতার কেটেছি। এখন আবার ভরাট হতে দেখে মন খারাপ হচ্ছে। আমি এসিল্যান্ডকে আবেদন করব যেন পুকুরখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি ও নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, “আইন অনুযায়ী পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। হাইকোর্ট শুধু পুকুর ভরাট বন্ধের নির্দেশই দেননি, বরং আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ এখনো সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।”
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ একটি রিট দায়ের করলে বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের জরিপে নগরীতে ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এসব পুকুর সংরক্ষণ ও ভরাট হওয়া পুকুর পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজশাহী সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদফতর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশকে। কিন্তু বাস্তবে এখনো কোনো পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ-হাইকোর্টের নির্দেশনা ও প্রশাসনের তৎপরতা সত্ত্বেও ‘জোড়া পুকুর’ আবারও ভরাট হওয়া প্রমাণ করে, প্রভাবশালীরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে পুকুর ভরাটকারি হিকু মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফ হোসেন বলেন, “দুই সপ্তাহ আগে খবর পেয়ে আমি নিজেই সেখানে গিয়েছিলাম। পাশে একটি ভবন ভাঙা হচ্ছিল এবং সেই রাবিশ ফেলা হচ্ছিল। আমি ভরাটকারীর ছেলেকে সতর্ক করে এসেছি। এরপরও যদি ভরাট চলতে থাকে, তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।