ফেনীতে কর্মরত পাঁচ সাংবাদিককে ‘গাজীপুর স্টাইলে’ হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতার বিরুদ্ধে। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ সংক্রান্ত কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর এলাকায় তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ফেনীর সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশ বলছে, তারা বিষয়টি গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আগেই জেনেছে এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ফেনী সংবাদদাতা ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ফেনী মডেল থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
টার্গেটের তালিকায় পাঁচ সাংবাদিক
পুলিশ ও জিডির তথ্য অনুযায়ী, ‘একতাই শক্তি’ নামে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফেনীর পাঁচ সাংবাদিককে হামলার টার্গেটে রাখা হয়। এরা হলেন— মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন (বাসস, দৈনিক ফেনীর সময়), আরিফুর রহমান (স্টাফ রিপোর্টার, যমুনা টিভি), আরিফ আজম (প্রধান প্রতিবেদক, দৈনিক ফেনীর সময়), সোলায়মান হাজারী ডালিম (এখন টিভি প্রতিনিধি) ও জাহিদুল আলম রাজন (এনটিভি অনলাইন রিপোর্টার)।
চ্যাটে সাইফ উদ্দিন নামে এক সদস্য লিখেছেন— “আমাদের উচিত গাজীপুরের মতো মিডিয়ার ট্রায়ালটার চান্স নেওয়া… এই চান্সে শাহাদাত, আরিফ আজম, আরিফ, রাজন—এদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া দরকার।”
আরেকজন সাহেদ অভি লেখেন— “১০ বছর পরেও ছাড় নেই। মাটির নিচে থাকলেও তুলে আনব। রাজন, আরিফ—সবাইকে দেখে নেব।”
পরিকল্পনায় কারা ছিলেন
চ্যাটে আলোচনায় অংশ নেন নিষিদ্ধ ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, সাইফ উদ্দিন মানিক, আবুল হাসনাত তুষার, সরোয়ার রনি, তোফায়েল আহাম্মদ অপু, নূর করিম জাবেদ, রায়হান হাবিব শাকিলসহ অন্তত ২০-২৫ জন। গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নূর করিম জাবেদ, সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, আশিক হায়দার রাজন হাজারী, রনি চন্দ্র দাস, পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার ও কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাইফ উদ্দিন মানিক। তাদের কথোপকথনে উঠে এসেছে—‘গাজীপুর স্টাইলে’ আচমকা হামলা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো অথবা সাংবাদিকদের বাড়িতে রাতের আঁধারে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা।
ফেনীর প্রবীণ সাংবাদিক একেএম আবদুর রহীম বলেন, “এ ধরনের হামলার পরিকল্পনা সাংবাদিক সমাজের জন্য গভীর হুমকি। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।”
সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) ফেনী জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসেন বলেন—“ফেনীর গণহত্যায় জড়িত অনেকেই পলাতক থেকে নাশকতার পরিকল্পনা করছে। সাংবাদিকদের ওপর এই ভয়ঙ্কর হুমকি গ্রহণযোগ্য নয়।”
সাংবাদিক ইউনিয়ন ফেনীর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন— “সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অপরাধীর পরিচয় যাই হোক, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, “আমরা গোয়েন্দা তৎপরতায় বিষয়টি আগেই জেনেছি। সাইবার সেলের মাধ্যমে তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। গ্রুপের অনেকেই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামি।”