মোস্তাক আহমেদ মনির, সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে : ট্রেনের বিলম্ব ও সূচি সুবিধাজনক না হওয়া এবং ধীরগতির কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী। আন্তনগর অগ্নীবিনা এক্সপ্রেস ও জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ২টি প্রায় প্রতিদিনই বিলম্বে চলে, একটির থেকে অন্যটির সময় ৩০ মিনিটের ব্যবধানে চলছে এই ট্রেন দুইটি। এদিকে আন্তনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলে মধ্য রাতে। বলছি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা কথা। উপজেলা বাসীর দাবী ট্রেন তিনটির সূচি পরিবর্তন করে সুবিধাজনক সময়ে ও দিনের বেলায় ঢাকা পৌছানোর সময় সূচি দিয়ে বিলম্ব কমিয়ে আনতে পারলে দুর্ভোগ কমে যাবে।
রেলওয়ে সুত্রে জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মানুষের কাছে যাতায়াতের প্রিয় মাধ্যম ট্রেন। ঢাকা থেকে এই উপজেলায় জামালপুর এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও যমুনা এক্সপ্রেস নামের তিনটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে জামালপুর এক্সপ্রেস চলে ঢাকা থেকে ভূঞাপুর, (পূর্বে ছিলো ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু পূর্ব ষ্টেশন-সরিষাবাড়ী হয়ে জামালপুর পর্যন্ত) ইব্রাহীমাবাদ (পূর্বের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব) রেল ষ্টেশনের সংস্কার কাজের জন্য বর্তমানে ট্রেনটি ঢাকা-ময়মনসিংহ-সরিষাবাড়ী-জামালপুর-ভুয়াপুর হয়ে চলাচল করছে। অগ্নিবীণা ও যমুনা এক্সপ্রেস চলে ঢাকা থেকে সরিষাবাড়ীর তারাকান্দি পর্যন্ত। রেলের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, সরিষাবাড়ীতে চলাচলকারী তিন ট্রেনের মধ্যে জামালপুর এক্সপ্রেসের সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। বাকি দুটি সপ্তাহে সাত দিনই চলে।
জামালপুর এক্সপ্রেসের ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় সকাল ১০ টায়, সরিষাবাড়ী পৌঁছানোর সময় বেলা ৩টা ২১ মিনিটে। অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে, সরিষাবাড়ী পৌঁছানোর সময় বিকেল ৪টা ৩৩ মিনিটে হলেও কোন কোন দিন তারাকান্দি থেকে ঢাকার উদ্যেশে ছাড়ার সময়ের পরও তারাকান্দিতে আসে। বেশির ভাগ দিনই নির্ধারিত ছাড়ার সময়ের অনেক পরে তারাকান্দি ছেড়ে যায়। জামালপুর এক্সপ্রেস তারাকান্দি ষ্টেশন থেকে অগ্নীবিনা ট্রেনের পরে যাওয়ার সময় থাকলেও অগ্নীবিনা ট্রেনের আসতে বিলম্ব হওয়ায় অধিকাংশ দিন অগ্নীবিনার আগে চলে যায় জামালপুর এক্সপ্রেস।
এদিকে যমুনা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে, সরিষাবাড়ীর তারাকান্দি পৌঁছানোর সময় রাত ১০ টা ৫৮ মিনিটে। কিন্ত তারাকান্দি পৌছতে রাত ১২ টা ও সাড়ে ১২ টা বেজে যায়। তবে যমুনা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়েই তারাকান্দি থেকে রাত ২টায় ছেড়ে যায়। অপর দিকে ময়মনসিংহ-জামালপুর-টাঙ্গাইল রেলপথে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০১২ সালের ৬ই জুলাই উদ্বোধন করা হয়। ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা জামালপুর-টাঙ্গাইলে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনটি ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে গত বছর ২০২৪ সালের ২৮ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে ময়মনসিংহ হতে সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি-ভুয়াপুর রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।
রেলে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী মঞ্জরুল ইসলাম, রিপন মিয়া, রাশেদুল ইসলাম জানান, বিলম্ব, ট্রেনের সূচি সুবিধাজনক না হওয়া এবং ক্রসিংয়ের কারণে জায়গায় জায়গায় অনাকাঙ্খিত বিরতি ও ট্রেনের ধীরগতির কারণে জামালপুর এক্সপ্রেস ও অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস প্রতিদিনই ট্রেন দুটি নির্ধারিত সময়ের ১ থেকে ২ ঘণ্টা বিলম্বে সরিষাবাড়ীতে আসে। ফলে ফিরতি পথেও বিলম্বে যাতায়াত করতে হয়। ৩ ট্রেনের কোনোটিই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। এর প্রভাব পড়ে ফিরতি যাত্রায়। ট্রেন দুটির ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক সময় মাঝরাতও পেরিয়ে যায়। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন যাত্রীরা। অনেকে স্টেশনে বসেই রাত কাটাতে বাধ্য হন।
যমুনা এক্সপ্রেস সরিষাবাড়ী ছাড়ে গভীর রাতে। সে সময়ও এই ট্রেনে যাতায়াত করাটা কঠিন বিষয়। স্টেশন পর্যন্ত যেতে কোন যানবাহন পাওয়া যায় না। ফলে দূরদূরান্তের যাত্রীদের এই ট্রেন ধরতে হলে সন্ধ্যার পরই স্টেশনে বা স্টেশনের আশপাশে আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতজনদের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিতে হয়। জামালপুর এক্সপ্রেস ও অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের সূচি এমনভাবে পরিবর্তন করা দরকার, যেন ঢাকা থেকে একটা ভোরে ও অন্যটা সকালে ছেড়ে দুপুরের মধ্যে সরিষাবাড়ী পৌঁছায়। আবার সরিষাবাড়ী থেকে দুপুরে ছেড়ে সন্ধার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানো যায়। অন্যদিকে যমুনা এক্সপ্রেসের সূচি পরিবর্তন করে সরিষাবাড়ী থেকে ভোরের দিকে ছেড়ে দুপুরের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানো যায়।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আসাদুজ্জামান বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ট্রেন বিলম্বে যাতায়াত করে। মাঝরাতে ও বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়লেও সকালে বা দুপুরে কোনো ট্রেন নেই। ফলে কোন ট্রেনেই যাত্রীরা দিনে দিনে ঢাকায় পৌছতে পারে না। তবে এই ট্রেন গুলোর সময় সূচি পরিবর্তন করা প্রয়োজন।