সহযোগীদের খবর: নিরাপত্তার ঘাটতি দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহন স্থগিত করেছিল বৃটেন। ২০১৬ সালের মার্চের ঘটনা এটি। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কার্গো নেয়া বন্ধ করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। বৃটেনের অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘোষণায় আকাশ ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ওপর। আচমকা বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ বিমানের লন্ডনে কার্গো পরিবহন সেবা। কারণ বাংলাদেশ বিমানই ছিল একমাত্র এয়ারলাইন্স যা ঢাকা থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতো। বৃটেনের সেই নিষেধাজ্ঞা প্রভাবিত করেছিল জার্মানীসহ ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোকে। বৈশ্বিকভাবে বেশ চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। সূত্র: মানবজমিন
ভাবমূর্তি সংকট সামাল দিতে তাৎক্ষণিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব বৃটেনের একটি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার। রেডলাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটির সম্পাদিত বেবিচকের চুক্তি ছাড়াও কোনোরকম তদন্ত ব্যতীত (তৎক্ষণাৎ) বিমান সচিব এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তৎকালীন চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেয়া হয়। নিরাপত্তার ঘাটতি রোধ তথা পরিস্থিতির উন্নয়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রীতিমতো অফিস করতে বাধ্য হন সেই সরকারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী।
সন্ত্রাসবাদ দমন ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে সে সময় আলোচনার জন্য উপর্যুপরি ঢাকায় আসে বিভিন্ন দেশের একাধিক টিম। যার মধ্যে ছিল ইউরোপীয় কমিশনের মবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট শাখার নিবন্ধিত প্রত্যয়নকারী বৃটিশ প্রতিষ্ঠান বিসিসি লিমিটেড। তারা শাহজালালের কার্গো কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে। ওই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান সংস্থা এমিরেটস ঢাকা থেকে পণ্য পরিবহনে বাড়তি নিরাপত্তা চায়। সৌদি আরবের বিমান সংস্থা সাউদিয়াও পণ্য পরিবহনের নিরাপত্তা জোরদার করে।
এভাবে চলতে থাকে দুই বছর। একপর্যায়ে বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে জারি রাখে নানা শর্ত। কিন্তু ক’বছরের ব্যবধানে আজ বাংলাদেশ বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চ প্রশংসা পেয়েছে। বৃটেনের পরিবহন দপ্তর (ডিএফটি) কর্তৃক পরিচালিত সর্বশেষ নিরাপত্তা মূল্যায়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ), ঢাকা ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ওআইএ) উভয়ই অসাধারণ রেটিং অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে সম্পন্ন ওই মূল্যায়নে ডিএফটি শাহজালাল বিমানবন্দরকে সামগ্রিকভাবে ৯৩ শতাংশ নম্বর দিয়েছে। এরমধ্যে অতিরিক্ত ব্যবস্থা মূল্যায়ন (কার্গো) বিভাগে পেয়েছে শতভাগ, অর্থাৎ ১০০ শতাংশ। ওসমানী বিমানবন্দরও ৯৪ শতাংশ সামগ্রিক স্কোর এবং ১০০ শতাংশ কার্গো ব্যবস্থাপনার নম্বর পেয়েছে। সফররত বৃটেনের পরিদর্শক দল সিএএবি’র প্রস্তুতি ও পারফরম্যান্সে ‘গভীর সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছে। ডিএফটির এই বিদেশি বিমানবন্দর মূল্যায়ন কর্মসূচি মূলত বৃটেনের যাত্রী ও কার্গো পরিবহনকারী বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা মান যাচাইয়ের জন্য পরিচালিত হয়।
২০১৭ সাল থেকে বৃটেন ও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই পরিদর্শন কর্মসূচি চালু রেখেছে। যার আওতায় সময় সময় পরবর্তী মূল্যায়ন সম্পন্ন হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য যাচাই করতে। সিএএবি জানিয়েছে, এই ফলাফল বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা অগ্রযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চার সঙ্গে বাংলাদেশের সামঞ্জস্যের প্রতীক। সংস্থাটি এক বিবৃতি বলেছে, এই অর্জন আমাদের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃঢ়তা ও দক্ষতার প্রতিফলন, যার সরাসরি প্রভাব রয়েছে জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ওপর।
বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, ২০১৬ সালে কার্গো স্ক্রিনিং-সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ফলে রপ্তানিকারকদের তৃতীয় দেশে পুনরায় পণ্য স্ক্রিনিং করতে হতো, যা ছিল ব্যয়বহুল ও জটিল প্রক্রিয়া। এরপর থেকে সিএএবি ও সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। কার্গো নিরাপত্তায় যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক বিস্ফোরক শনাক্তকরণ সিস্টেম (ইডিএস) ও বিস্ফোরক শনাক্তকরণ কুকুর (ইডিডি) প্রযুক্তি।
কর্তৃপক্ষ জানায় এবারকার অসাধারণ স্কোর প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ অতীতের সীমাবদ্ধতাগুলো সফলভাবে অতিক্রম করেছে। বিবৃতি মতে, বৃটেনের এই স্বীকৃতি বৈশ্বিক অংশীদারদের আশ্বস্ত করে যে বাংলাদেশের বিমান ও কার্গো নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে। এতে যোগ করা হয়, এই সাফল্য বিদেশি বিমান সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা কমাবে।