শিরোনাম
◈ সকালে পাকিস্তানও কেঁপেছে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে ◈ ভূমিকম্পে ঢাকার বংশালে বিল্ডিংয়ের রেলিং ভেঙে পড়ে নিহত অন্তত ৩ ◈ ভূমিকম্পে ঢাকায় আরমানীটোলায় ভবন ধস, হেলে পড়েছে কলাবাগান, মাতুয়াইল ও নিউমার্কেটের পাশের একটি ভবন ◈ 'এখনই তত্ত্বাবধায়ক' দাবি থেকে কেন সরে এলো বিএনপি ও জামায়াত? ◈ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো কলকাতাও ◈ আর্থিক দুর্নীতির মামলায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামীর বিরুদ্ধে দিল্লির আদালতে চার্জশিট জমা ◈ হামজা চৌধুরীর অভিনন্দন বার্তা পে‌য়ে বিস্মিত মুশফিকুর র‌হিম ◈ ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প ◈ ভারত–বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ: দুই দিনের বৈঠকে ‘ইতিবাচক বার্তা’ ◈ পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্র নিরাপত্তায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি—আইএলওর ১০টি মৌলিক দলিল অনুমোদন করলো বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৩ দুপুর
আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিতে বিমা কাভারেজ মাত্র ২০ লাখ টাকা: কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড

সম্প্রতি ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজটির মাত্র ২০ লাখ টাকার বিমা কাভারেজ আছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ফলে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলেও সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা বিমা দাবি পাবে কার্গো ভিলেজের মালিক ও পরিচালনাকারী সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সূত্র:  টিবিএস

আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের বিষয়ে কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকারকরা সাধারণত খরচ কমানোর জন্য যে দেশ থেকে পণ্য আমদানি করেন, সেদেশেই পণ্যের বিমা করেন। আর রপ্তানি হওয়া পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিমা করা বাধ্যতামুলক নয়।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি শীঘ্রই স্থানীয় বিমা কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে এই ক্ষতির বিপরীতে কোনো পলিসি ইস্যু করা হয়েছিল কি না এবং মোট দাবির পরিমাণ কত, তা জানতে চাইবে। আইডিআরএ বিমাকারীদের যত দ্রুত সম্ভব বৈধ দাবিগুলো নিষ্পত্তি করার নির্দেশও দেবে।

একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত নন-লাইফ বিমাকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা কর্পোরেনের (এসবিসি) জেনারেল ম্যানেজার এস এম শাহ আলমবলেন, 'পুরো কার্গো ভিলেজের বিমা করা আছে কি না, সরাসরি উত্তর দেওয়া কঠিন। কার্গো ভিলেজে সিভিল এভিয়েশনের [বেবিচক] যে গুদাম রয়েছে, তার ছোট একটি অংশের বিমা করা আছে, যার কাভারেজ মাত্র ২০ লাখ টাকা।''

তিনি আরও বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনার জন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনের প্রোডাক্টে আনলিমিটেড কাভারেজ পাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু বেবিচক প্রিমিয়াম খরচ কমানোর জন্য সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার অগ্নিবিমা করেছে। 

'তারা আমাদের কাছে বিমা দাবি করার পর সাধারণ বীমা করপোরেশন সার্ভেয়ার পাঠিয়ে সরেজমিনে তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। তার রিপোর্টের ভিত্তিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে বিমা দাবি পরিশোধ করা হবে,' যোগ করেন শাহ আলম।

তিনি আরও বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান অগ্নি বিমা করলে সাধারণত ওই প্রতিষ্ঠানের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কি না, সেটি যাচাই-বাছাই করতে হয় বিমা কোম্পানিকে। কিন্তু বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় বিমার আওতায় থাকা বেবিচকের গুদামের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ঠিক রয়েছে কি না, তা আগে কখনও যাচাই করেনি এসবিসি। 

করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, বেবিচক অনেক আগে ২০ লাখ টাকার বিমা করেছে। এই বিমার মেয়াদ এক বছর। প্রতি বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা এটি নবায়ন করলেও বিমা কাভারেজের পরিমাণ বাড়ায়নি।

আমদানিকৃত পণ্য বিদেশে বিমা করা

আমদানিকৃত পণ্য স্থানীয় কোম্পানিগুলোর কাছে বিমা করার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও আমদানিকারকরা প্রায়ই খরচ কম হওয়ায় বিদেশে—বিশেষত সরবরাহকারীর দেশে—বিমা করতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে, রপ্তানিকৃত পণ্যের জন্য বাংলাদেশে বিমা করার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

শাহ আলম বলেন, 'বাংলাদেশে বিমার খরচ বেশি। এ কারণে ব্যবসায়ীরা সাপ্লায়ারদের মাধ্যমে বিদেশের বিমা কোম্পানিতেই আমদানি পণ্যের বিমা করে থাকে।'

ফলে শাহজালাল কার্গো ভিলেজের আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমদানিকৃত পণ্যের বিমা দাবি বিদেশি বিমা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই আদায় করতে হবে।

নাশকতা প্রমাণ হলে কোনো ক্ষতিপূরণ মিলবে না

আইডিআরএর সূত্রমতে, অগ্নিকাণ্ডের পর নাশকতার যে অভিযোগ উঠেছে, তা প্রমাণিত হলে বেবিচক এসবিসি থেকে বা বাংলাদেশি আমদানিকারকরা বিদেশি বিমা কোম্পানিগুলো থেকে কোনো বিমা দাবি সুবিধা পাবে না।

ব্যবসায়ীদের বিপুল ক্ষতি

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রাক্কলিত হিসাব দিয়ে বলেন, এই আগুনে রপ্তানিকারকদের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

হাতেম বলেন, রপ্তানিকারকদের মোট ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা এখনও কঠিন।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ৩২টি ওষুধ কোম্পানির আমদানি করা ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল আগুনে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

১৮ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করার সময় কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করতে বাধ্য হয়। আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে এর পূর্ণাঙ্গ পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা হচ্ছে।

কার্গো ভিলেজে কী রাখা হয়?

কার্গো ভিলেজ পৃথক আমদানি ও রপ্তানি জোনের মাধ্যমে আকাশপথে আনা সমস্ত আমদানি ও রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা করে। নতুন আসা পণ্য আমদানি এলাকার কাছে সংরক্ষণ করা হয়, আর রপ্তানির চালানগুলো আকাশপথে পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করে।

এই স্থাপনাটি একটি সমন্বিত কার্গো হাব হিসেবে কাজ করে, যেখানে পণ্য ওঠানো-নামানো, পরিদর্শন, প্যাকেজিং, সংরক্ষণ ও কাস্টমসের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে গুদাম, কার্গো টার্মিনাল, কাস্টমস জোন, বিশেষায়িত স্টোরেজ, কুরিয়ার অফিস (যেমন ডিএইচএল ও ফেডেক্স), নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিবহন এলাকা।

ফল ও সবজির মতো পচনশীল পণ্য ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছাড় করা হয়, আর তৈরি পোশাক সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে পাঠানো হয়। তবে কার্গো স্পেস সীমিত থাকার কারণে রপ্তানি বিলম্বিত হতে পারে; আমদানি পণ্যও প্রায়ই কাস্টমস ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষায় থাকে।

কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, সাম্প্রতিক এই আগুনে শত শত টন আমদানি পণ্য ধ্বংস হয়ে থাকতে পারে, যার ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হবে। বিমা দাবি নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়