শিরোনাম
◈ ৯ দল নিয়ে এনসিপির রাজনৈতিক জোটের সম্ভাবনা: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ◈ ষড়যন্ত্রকারীদের হিসাব পাল্টে যাবে যদি বিএনপি রাজপথে নামে: ফখরুলের সতর্কবার্তা ◈ এনসিপির মনোনয়ন ফরমের মূল্য ১০ হাজার, মুক্তিযোদ্ধা ও নিম্নআয়ের প্রার্থীদের জন্য ছাড় ◈ অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন ◈ জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনো কাজ হবে না: তৌহিদ হোসেন ◈ প্রার্থী ঘোষণা করায় চাঙ্গা বিএনপির তৃণমূল ◈ গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিল বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ ◈ ৫ দুর্বল ইসলামী ব্যাংক: আমানতকারীরা যেভাবে টাকা ফেরত পাবেন ◈ জুলাই সনদ ও গণভোটের দাবিতে জামায়াতসহ আট দলের বিক্ষোভ, রাজধানীতে তীব্র যানজট ◈ এক্সিম ব্যাংকের সাবেক এমডি ফিরোজ গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:১৭ বিকাল
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চলতি বছর ডেঙ্গুতে প্রাণ গেছে ৩০২ জনের, দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই মৃত্যুর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা

চলতি বছর ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৩০২ জনের প্রাণ গেছে। গতকাল বুধবার মারা যান ১০ জন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই মৃত্যুহার বেশি হওয়ার প্রধান কারণ। অনেক রোগী শুরুতে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে অবহেলা করায় পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে পড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় (১৪৫ জন)। এরপর রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (৪৭), বরিশাল (৪১), চট্টগ্রাম (২৫), রাজশাহী (১৬), ময়মনসিংহ (১২), খুলনা (৯), ঢাকার অন্যান্য এলাকা (৬) ও সিলেট (১)।

গতকাল সকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৯৯২ জনে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, বেশির ভাগ রোগী যখন হাসপাতালে আসেন, তখন তারা মারাত্মক সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকেন। এমন অবস্থায় অনেক সময় তাদের বাঁচানো সম্ভব হয় না।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরপরই অধিকাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে অবস্থানকালে অবনতি ঘটে এমন রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।

অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ার মতো জটিলতা দেখা যায়। গর্ভাবস্থা বা ডায়াবেটিস, কিডনি কিংবা হৃদরোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।

নাজমুল আহসান বলেন, রোগীরা অনেক সময় খুব দেরিতে হাসপাতালে আসেন, আবার অনেককে ঢাকার বাইরে থেকে দেরিতে রেফার করা হয় বলেও মৃত্যুহার বাড়ছে।

তিনি বলেন, 'অনেকে অবস্থা সংকটাপন্ন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, আবার অনেককে বরিশাল, পিরোজপুর বা বরগুনার মতো জেলা থেকে রেফার করা হয়। প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সঠিকভাবে তরল পদার্থ না দেওয়া হলে প্রায়শই তাদের অবস্থার অবনতি হয়।'

তিনি বলেন, 'অনেক রোগী প্রি-শক অবস্থায় যাত্রা শুরু করেন এবং ঢাকায় পৌঁছানোর সময় পুরোপুরি শকে চলে যান। ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে যায়।'

নাজমুল আহসান বলেন, 'এ কারণেই ঢাকার দক্ষিণ অংশে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি— কারণ এখানেই অন্য জেলা থেকে সংকটাপন্ন রোগীদের রেফার করা হয়।'

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ঢাকার বাইরে অনেক চিকিৎসক ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। ফলে ফ্লুইড ম্যানেজম্যান্টে ভুল হয়, যা অনেক সময় প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সীমিত সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ছোট হাসপাতালগুলো এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমাতে হলে আগেভাগে শনাক্তকরণ ও স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণ অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, 'যদি মানুষ স্বল্প খরচে নিজের এলাকার কাছেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে পারতেন, তাহলে রোগটি শুরুতেই শনাক্ত করা সম্ভব হতো।'

তিনি আরও বলেন, 'এখন রোগীদের বড় হাসপাতালে যেতে হয় এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এর মধ্যেই অনেকের জ্বর কমে যায়। কিন্তু ডেঙ্গুতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়টি শুরু হয় জ্বর কমার পর।'

তিনি হাসপাতালের চাপ কমাতে এবং সময়মতো রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার মতো কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। এই বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেন, 'বিকেন্দ্রীকরণ না হলে মৃত্যুহার বেশিই থেকে যাবে।'

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়