ফিরোজ আহম্মেদ, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে কমপক্ষে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উকড়ি বিল। জেলার মহেশপুর উপজেলার করিঞ্চা গ্রামে এই বিলটি বহমান। যার আয়তন প্রায় ২২৫ একর। শীতের শুরু থেকে এ বিলেই কয়েক হাজার দেশি-ভিনদেশি পাখির কলতানে মুখরিত।
জানাযায়, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারত ঘেষা উকড়ি বিল। শীতে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিলটি। বিশাল জলরাশির মাঝে মাঝে শাপলা, শালুক আর পদ্ম পাতা জন্মেছে অনেক আগে থেকেই। একটু নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের আশায় পাতার ফাঁকে ফাঁকে উকি দিচ্ছে বক, রাঙা ময়ূরী, ছোট স্বরালী, সারশ, গাঙচিল, পানকৌড়ি, বকসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশী হাজার হাজার পাখি।
বিলের গার্ড রেজাউল ইসলাম জানান, গত ৫ বছর ধরে পাখিগুলো এখানে আসে। দেশি প্রজাতির পাখির সঙ্গে আসে নাম না জানা বিদেশি পাখি। আমরা কাউকে পাখি শিকার করতে দেই না । রাতে দিনে সবসময় মাছ পাহারাদেওয়ার সময় পাখিদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তবে শীতের মৌসুমে পাখিদের আগমন বাড়ে। এখানে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির নাম না জানা পাখি।
ঝিনাইদহ থেকে বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অনেক দিনে ধরেই এই বিলের কতা শুনছি কিন্তু কখনও দেখা হয়নি। আজ এখানে এসে আমি অবিভুত, এতো সুন্দর তা আগে ভাবিনি। এক সঙ্গে নাম না জানা, রং বেরঙের, ছোট-বড়, দেশ-বিদেশের হাজারো পাখি চারিদিকে উড়ে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ পাখির কিচিরমিচির শব্দ মন কাড়বেই পাখি প্রেমিদের। দিনভর বিলের বিভিন্ন প্রান্তে শামুক ও মাছ শিকার করছে।
গ্রামের ৮০ বছরের ইসলাম উদ্দীন জানান, শীতে গাঙচিল, ডংকুর, সড়াইল, কাইয়ুমসহ আরো নাম না জানা অনেক পাখি এই শীতে দেখা যায়। এই বিলে পাখিদের উপর কোনো অত্যাচার হয় না, যার কারনে শীত প্রধান দেশ থেকেই শীত মৌসুমে বেশি পাখি আসে।
উকড়ির বিলের ইজারাদার কবীর হোসেন জানান, মহেশপুর উকড়ি বিল সরকারি বিল। আমি গত ৬/৭ বছর হলো ইজারা পেয়েছি। ইজারা পাওয়ার পর থেকে যখন মাছ চাষ শুর করি তখন থেকেই কিছু কিছু দেশি প্রজাতির পাখি আসা শুর করে। পাখি ও প্রকৃতি প্রেমিক হওয়ায় ওদের তাড়ানো দুরে থাক চেষ্টা করি নিরাপদ পরিবেশ দেওয়ার। আস্তে আস্তে প্রায় ৫ বছর হলো এখানে হাজারো পাখি আসছে, থাকছে, ডিম পাড়ছে ও বাচ্চা তুলছে। বর্তমানে পাখিদের কেউ একটি ঢিল মারতে পারে না।
তিনি আরো জানান, নিরাপত্তার কারণে পাখির দল শুধু শীত কালেই নয়, সারাবছরই এই বিলে থাকতে শুরু করেছে। বর্তমানে পাখিগুলো সন্ধা হলেই পদ্মপতার আড়ালে এবং আশেপাশের বাগানের গাছে থাকে আবার সকাল হলেই বিলে চলে আসে। এই বিলে ১৫ থেকে ২৪ প্রজাতির পাখি বসবাস করছে।
সবশেষে তিনি বলেন, পাথি দেখা ও বিল দেখার জন্য তিনি হালকা নৌযান নামিয়েছেন বিলে। যা দিয়ে খুব সহজেই বিলের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চলে যাওয়া যায়। সরকারি পৃষ্ঠপোসকতায় এ বিল পর্যটনের এক অপার সম্ভাবনা হয়ে উঠে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিনিধি/এইচএ
