নিজস্ব প্রতিবেদক : জলবায়ু পরিবর্তজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর টিকে থাকার জন্য একটি ন্যায়সংগত ব্যবস্থা তৈরি করতে কপ-৩০’র প্রেসিডেন্সিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোকে জবাবদিহি করতে এবং এর প্রভাব মোকাবেলায় অবদান রাখতে বাধ্য করবে। পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রচারণা ও আন্দোলন অব্যাহত রাখা জরুরি বলে মনে করেন স্বল্পোন্নত ও অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
ব্রাজিলের অ্যামাজনের বেলেমে চলমান বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-৩০) প্রেস কনফারেন্স ভেন্যুতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব কথা জানানো হয় বলে বুধবার (১২ নভেম্বর) ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বাকু টু বেলেম’ রোডম্যাপের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি তুলে ধরে বলা হয়, উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত ও অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর চাহিদা এবং বিশেষ পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বিবেচনা করে পাবলিক অর্থায়নের মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলারের চাহিদা পূরণ করতে হবে। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রচারণা ও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের এম. এ. হাসান।
তিনি উন্নত দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, ধনী দেশগুলো এমন কর্মকাঠামো তৈরি করছে, যা শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই ভালো দেখায়। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। প্যারিস চুক্তির দশম বার্ষিকীতে, কপ-৩০ হলো প্যারিস চুক্তির অগ্রগতির বাস্তবতা যাচাই করার, গ্যাপসমূহ চিহ্নিত করার, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসার সুস্পষ্ট সময়রেখা এবং স্বল্পোন্নত ও অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোকে তাদের অভিযোজন প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য উপযুক্ত ও ন্যায়সংগত আর্থিক ক্ষতিপূরণ কৌশল সংজ্ঞায়িত করার একটি সময়োপযোগী সুযোগ। তাই বাকু (কপ-২৯) জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি সুস্পষ্ট, ন্যায়সংগত, সময়সীমাবদ্ধ পথ তৈরি করতে হবে, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত ও অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর পাবলিক ফাইন্যান্সের মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলারের বার্ষিক লক্ষ্য পূরণ করবে।
ভারতের নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি সৌম্য দত্ত বলেন, এটা খুবই স্পষ্ট যে, কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য এখন পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা বৈশ্বিক লক্ষ্য পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই বেলেম সম্মেলন (কপ-৩০) নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ এবং অংশগ্রহণকারী সব দেশে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সমর্থ হবে, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা এবং ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে তাদের বাস্তবভিত্তিক এনডিসি-০৩ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক আর্থিক কাঠামোর প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন, যা ঋণ নির্ভরতার বদলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা এবং অভিযোজনের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডশনের আহসানুল ওয়াহেদ বলেন, একটি উচ্চাভিলাষী নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেব ২০৩০ সালের মধ্যে অভিযোজনে অর্থায়ন তিনগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য ২০৫০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার ৫১৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা ২০৭০ সাল নাগাদ ৯৯৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোকে সঠিক এবং বাস্তব আর্থিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দাবি করেন তিনি, যেখানে অতি বিপদাপন্ন দেশগুলো তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী অভিযোজন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমর্থ হবে এবং জলবায়ু প্রতিরোধ সক্ষমতা অর্জিত হবে।
সর্বশেষ বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাসকরণে চলমান কপ-৩০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব দেশ একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারবে এবং সে লক্ষ্য অর্জনে অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য সেটা অবশ্যই প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এবং কারিগরি ও প্রযক্তি সহায়তা দ্বারা সমন্বিত হবে বলে প্রত্যাশা করেন বক্তারা।