শিরোনাম
◈ তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া: আপিল বিভাগে তথ্য-প্রমাণ দাখিল ◈ ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার কোনো চুক্তি করেনি: ড. খলিলুর রহমান ◈ ‌‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরিতে সবাইকে একটু ছাড় দিতে হবে’ ◈ জোবাইদা রহমান বিএনপির নেতৃত্বে আসবেন, নাকি ফিরবেন পুরনো চিকিৎসা পেশায়? ◈ গোপনে পাকিস্তানি নারীকে বিয়ে, ভিসা লঙ্ঘনে চাকরি গেল ভারতীয় জওয়ানের! ◈ ৮০০ ডলারের নিচের পণ্যে শুল্ক বসাল ট্রাম্প, চাপে তেমু-শেয়েন, বিপাকে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাজার ◈ "নির্বাচনে ব্যবহার না হলেও দেড় লাখ ইভিএমের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, হস্তান্তর প্রক্রিয়াও ঝুলে আছে" ◈ এবার পা‌কিস্তা‌নে আই‌পিএল সম্প্রচার নি‌ষিদ্ধ ◈ ইং‌লিশ লি‌গে হে‌রেই গে‌লো আর্সেনাল ◈ টানা ১৪ বারের মতো জয় পেল সিঙ্গাপুরের পিএপি

প্রকাশিত : ০৪ মে, ২০২৫, ০২:৫৮ রাত
আপডেট : ০৪ মে, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতীয় নির্বাচন: দলগুলোর নানা মত, ইসির ডিসেম্বরের প্রস্তুতি

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। বাংলাদেশের নতুন দল এনসিপি সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারের আগে নির্বাচন চায় না৷ বিএনপি তাদের আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে, নতুন অবস্থান জানিয়েছে জামায়াত৷ তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই তারা প্রস্ততি নিচ্ছে৷

জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়৷ তখন নির্বাচন করা না গেলে এপ্রিলের পর আর যাওয়া ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি৷ একটি ফেব্রুয়ারিতে, মানে রোজার আগে৷ তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে, তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত না৷ কারণ এরপর কোরবানির ঈদ ও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে৷''

এর আগে তিনি লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফিরে রোজার আগে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন৷ পরে আবার ব্যাখায় বলেন, আগে সংস্কার হতে হবে৷

শুক্রবার ঢাকায় এনসিপি তাদের সমাবেশে বলেছে, আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না৷ অন্যদিকে বিএনপি বার বার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে৷ তা না হলে দলটি আন্দোলনের কথাও বলছে৷

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকবারই বলেছেন যে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷ তবে একেবারে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো স্পষ্ট হয়নি৷

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নানা কারণে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর নানা মত, আর অন্তর্বর্তী সরকার সময় নির্দিষ্ট করে না বলায় নানা সন্দেহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ৷

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি সবার কথা শুনলে মনে হয় এখন সবকিছুই অস্বচ্ছ হয়ে পড়েছে৷ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আল-জাজিরার সঙ্গে যে সাক্ষাৎকার দিলেন সেখানে তিনি তো বলেই দিলেন জনগণ চায় তিনি আরো কিছুদিন থাকুন৷ এটাতে বোঝা যায় তার নিয়ত খারাপ৷ সম্প্রতি যে রাখাইনে করিডোর দেয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছে তার মধ্যেও কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে৷ উদ্দেশ্য হতে পারে তিনি যে থাকতে চান তার জন্য বৃহৎ শক্তির একটা সমর্থন তিনি পেতেও পারেন৷''

তবে আল-জাজিরার সঙ্গে সেই সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এটাও বলেছেন যে, ‘‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে৷''

তিনি আরও জানিয়েছেন, সময়সীমাটি নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য তৈরি হয় তার ওপর৷

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব৷ কিন্তু, জুনের পরে আর যাব না৷’’

বিএনপির সন্দেহ কাটছে না: তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ দলটির নেতারা মনে করে সরকার নানা অজুহাতে নির্বাচন পেছাতে চাইছে৷ কিছু রাজনৈতিক দলও নানা স্বার্থে সরকারের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘কোন দল কী চায় তার চেয়ে বড় কথা হলো দেশের মানুষ নির্বাচন চায়৷ তারা ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়৷ দেশে যাতে কেউ নির্বাচন না চায় সেইরকম একটি পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা দেখছি৷ কোনো কোনো গোষ্ঠী এটা নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে৷''

বিএনপির দাবি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে৷ যে যে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে সেগুলো নিয়ে এরইমধ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরুর পক্ষে তারা৷

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘তা করতে সাত দিন লাগে৷ এর বাইরে চিন্তা করা ঠিক না৷ স্বৈরাচার পতনের পর মানুষের এখন চাওয়া তার গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়া৷ আর সেটার জন্যই দ্রুত নির্বাচন দরকার৷''

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এখন দ্রুত নির্বাচন চায়৷ যারা নির্বাচন যথা সময়ে চায় না বা কালক্ষেপণ করতে চায় তারা আসলে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিপরীতে কথা বলছেন৷ দেশে নির্বাচন যত দেরি হবে জটিলতা তত বাড়বে৷ নানা অপশক্তি তৎপর হবে৷ সরকার তা সামলাতে পারবে না৷''

তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা স্পষ্ট করে বলেছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে৷ সংস্কারের ব্যাপারে তার অভিমত রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে সেগুলো নিয়েই কাজ শুরু করা যেতে পারে৷ তাতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়৷

‘‘আর যারা বিচার শেষ হওয়ার কথা বলছে তাদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নাই৷ এতে অনেক সময় লাগে৷ নির্বাচন কি ততদিন হবে না?,'' প্রশ্ন করেন প্রিন্স৷

মৌলিক সংস্কার, বিচারের আগে নির্বাচন চায় না এনসিপি

তবে নির্বাচনে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের একাংশের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি৷ তাদের মতে মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন৷ সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হওয়ার ব্যাপারেও অবস্থান নিয়েছে তারা৷ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আগে নির্বাচন হবে না বলেও উল্লেখ করেছে তারা৷ তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো সময়সীমার কথা উল্লেখ করেনি দলটি৷

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্ষমতাকে একমুখি করে রাখা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরই বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ এটা ঠিক না করে তো নির্বাচন দিয়ে কোনো লাভ নাই৷''

এনসিপির প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বার্থকে সামনে রেখে সব দলকে ঐক্যমতে আসতে হবে৷ আর এই দায়িত্ব সরকারের৷ সরকারকেই এটা সব দলকে বুঝাতে হবে যে মৌলিক সংস্কার, বিচার আগে দরকার৷ নির্বাচনই অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র কাজ না৷ তাদের সংস্কার ও বিচারকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ বিএনপি চায় না বলে হবে না৷ সেটা তো হতে পারে না৷’’

এনসিপি মনে করে, সবার আগে সংস্কারের রোডম্যাপ দরকার৷ তারপর নির্বাচন৷

‘‘এই কারণে আমরা নির্বাচনের কোনো টাইম ফ্রেম বেধে  দিতে চাই না,’’ বলেন মনিরা শারমিন৷

ড. ইউনূসের ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী প্রস্তুত ইসি:  নির্বাচন নিয়ে সরকারের দিক থেকে শনিবার ডয়চে ভেলে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পায়নি৷ তবে আলাপচারিতায় সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘প্রফেসর ইউনূস বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷ তাই হবে৷ তিনি অনড় আছেন৷''

ড. ইউনূসের ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলে আসছে নির্বাচন কমিশনও৷ সেক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই এগুচ্ছে তারা৷ নির্বাচন কমিশন জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই প্রস্ততি নিচ্ছে কমিশন৷ কমিশন সেই টার্গেটে সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে৷ তবে নির্বাচনের তফসিল হবে রাজনৈতিক দল ও সরকারের মতামতের ওপর ভিত্তি করে৷’’

 

 

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়