আমিনুল ইসলাম: রমজান এলে নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। আমার একান্ত ইচ্ছে এবার দাম কমানো হবে। উৎপাদনকারি ও বাণিজ্যমন্ত্রণালয় মিলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ সারা বিশ্বে ধর্মীয় উৎসব এলে পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। আর আমাদের এখানে উল্টো চিত্র। প্রায় অভিযোগ শুনতে হচ্ছে মিলাররা ডিলারদের কাছে যে দামে পণ্য বিক্রি করেন, সে দামের চালান লিখেন না। ডিলারদের কম দামের ইনভয়েস (স্লিপ) ধরিয়ে দেয়া হয়। দাম বাড়ানোর লুকোচুরির এ নাটক বন্ধ করতে হবে। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর জন্য নিজেদের কলঙ্কিত করতে দেব না।
গতকাল রোববার ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
সভায় চিনি, তেলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মিল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মাল বিক্রি করবেন কাগজ দেব না, তা হবে না। কাগজ ছাড়া সড়কে পণ্য কীভাবে যায়। এ কারণে বৈধ মাল অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তরসহ অন্যরা জরিমানা করবে কাগজ না পেলে। এভাবে আর কতকাল চলবে? ডিজিটাল ছেড়ে স্মার্ট বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দোষারোপের নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ব্যবসায়িদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা শুধু কাঁন্দে কাঁন্দে বলেন সারা বছর ব্যবসা হয়নি, লোকসান হয়েছে। এ কাঁন্দন বন্ধ করেন। মুখে বলবেন বিভিন্ন সমস্যার কথা। কিন্তু সরকারের লোক অভিযানে গেলেই খাটের ও মাটির নিচে ৫০০, ২ হাজার কেজি তেল পাওয়া যাচ্ছে, তা হবে না। নেই তো নেই। বেশি দাম দিলে আবার বের হয় কেমনে? এসব কারণে শুধু মিডায়া নয়, সাধারণ মানুষও ব্যবসায়িদেরকে অনাস্থার চোখে দেখে। এটা বন্ধ করতে হবে। ৩০০ বছর আগের পলিসি দিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। সোস্যাল মিডিয়া অনেক শক্তিশালী হয়েছে। কাজেই রমজান এলে জিনিসপত্রের দাম আমরা বাড়িয়ে দেবেন। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রমজানে যাতে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে এজন্য অনেক আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে মিটিং করে এলসির ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনের দুই-তিন বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে দিতে বলা হয়েছে।
মেঘনা ও সিটি গ্রুপের খুচরা ব্যবসায়ী ও ডিলাররা কথা বলতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘এই তোমরা কেন, তোমাদের মালিকরা কোথায়। এত গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ কোনো প্রতিনিধি থাকবে না, মালিকদের আসতে হবে। করপোরেটরাই সব জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। বড় বড় করপোরেটরা চাল ব্যবসায় নেমেছে। সিটি গ্রুপ চাউলের ব্যবসায় নেমেছে। বিশ্বের সবচাইতে বড় চাউলের কারখাানা করেছে। এটা কি তাদের জন্য খুবই দরকার ছিল? তাহলে তো কিছুদিন পর আর খুচরা ব্যবসায়ী থাকবে না।
মেঘনা গ্রুপের জিএম তসলিম উদ্দিন একপর্যায়ে বলেন, আমরা তো কম দামে দিচ্ছি। এসময় জসিম উদ্দিন বলেন, কীসের ভর্তুকি দিচ্ছেন। আগে মানবতা দেখাতে হবে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, কই পেঁয়াজ, আলু ব্যবসায়ীরা তো দাম বাড়াতে পারল না। মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুর অনেক কোল্ড স্টোরেজ আছে। কিন্তু দাম তো বাড়ছে না। আমাদের অবশ্যই সৎ ব্যবসায়ী হতে হবে। এবার রমজানে যাতে আর খাটের নিচে, মাটির নিচে কোনো মাল রাখা না হয়। আর ভোক্তারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রমজানে একসাথে বেশি পণ্য কিনবেন না। অন্য মাসের মতন স্বাভাবিকভাবে তেল চিনি সবকিছু কিনবেন তাহলে চাপ পড়বে না। সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আপনারা একে অপরকে দায়ী করে সুযোগ নিলে তা হবে না, হতে পারে না। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর জন্য নিজেদের কলঙ্কিত করতে দেব না। সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, এবার রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট হবে না।
এমআই/এসবি২