শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের হজ: শীর্ষ ১০ দেশ ও কোটা নির্ধারণের প্রক্রিয়া ◈ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট: রাজস্ব আদায়ের চাপ, জনজীবনে ব্যয়বৃদ্ধির শঙ্কা ◈ সড়কে গাছ ফেলে যানবাহনে ঘণ্টাব্যাপী দুর্ধর্ষ ডাকাতি: আহত অন্তত ২০ ◈ জাপান সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরা পিএসজি ◈ অপহরণ, প্রতারণা ও মৃত্যুভয়: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন দেশ ছাড়ার রোমহর্ষক গল্প শ ম রেজাউল করিমের (ভিডিও) ◈ গাজীপুরে অতিরিক্ত ডিআইজির মা-বাবাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট ◈ আরও এক দফা কমলো জ্বালানি তেলের দাম ◈ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল শহীদদের জন্য দোয়া চাইলেন তারেক রহমান ◈ সংগঠনের কেউ অপরাধ করলে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী বিচার হবে : ডা. শফিকুর রহমান

প্রকাশিত : ৩১ মে, ২০২৫, ০১:১০ রাত
আপডেট : ০১ জুন, ২০২৫, ০৪:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বহুমুখী সংকটে বাংলাদেশের পোশাক খাত: ভারতের নিষেধাজ্ঞা, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় হুমকিতে প্রবৃদ্ধি

বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত গত এক বছরে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও, খাতটি বর্তমানে বহুমুখী সংকটে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক, ভারতের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা এবং চলমান অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এ তিন কারণে এ সংকট। যা এই শিল্পের স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলেছে। তৈরি পোশাক খাত, যা দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ এবং লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে।

তবে এ বছরের ১৭ই মে সীমান্তবর্তী স্থলবন্দরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। পদক্ষেপটি বাংলাদেশ কর্তৃক একই স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় নেয়া হয়। ফলে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের প্রায় ৪২ শতাংশ রপ্তানি প্রভাবিত হচ্ছে এবং রপ্তানিকারকদের জন্য সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল সমুদ্রপথ ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে বাংলাদেশের পণ্যে, যার পরিমাণ ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব শুল্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে শুরু হলেও এখনো তা বহাল রয়েছে। যদিও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে অনৈতিক বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক আদালত। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক- দুই দিক থেকেই আমরা সংকটে পড়েছি।

যথাযথ নীতিগত সহায়তার অভাব, উচ্চ সুদের হার, গ্যাস সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা আমাদের খাতকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণে অনেক টেক্সটাইল মিলের উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে গেছে। এর ওপর রয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও সরকারি কর্মচারীদের কর্মবিরতির মতো ধারাবাহিক ধর্মঘট, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর কর্মকর্তাদের ধর্মঘটে শুল্ক ও বাণিজ্য কার্যক্রমে বিঘ্নতা সৃষ্টি করেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির প্রেক্ষাপটে ভারতের এসব বাণিজ্যিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত বছর আগস্টে ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন বেড়েছে। এর ফলে গার্মেন্ট পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিতের পর আমরা অনেক সমস্যায় পড়েছি, কারণ অনেক দেশে সরাসরি ফ্লাইট নেই। ফলে, পণ্য পাঠাতে সময় ও খরচ দুই-ই বাড়ছে।

বিজিএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে ভারত হয়ে ৩৬টি দেশে ৩৪ হাজার ৯০০ টন পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যার মূল্য প্রায় ৪৬২ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে নিয়মিত ধর্মঘট ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে পোশাক শ্রমিক- সবাই কোনো না কোনো দাবি নিয়ে রাস্তায় নামছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকার বাণিজ্য নীতি ঠিক করার দিকে মনোযোগ দিতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন মোহাম্মদ হাতেম। ফারুক হাসানের ভাষ্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে ২০০টির বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

সব সংকটের মধ্যেও জুলাই ২০২৪ থেকে এপ্রিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১০ শতাংশ বেড়েছে। যার বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে। এটি দেশের অন্যতম বড় রপ্তানি খাত হিসেবে এর স্থায়িত্বকে প্রমাণ করে। হাতেম বলেন, আমাদের উদ্যোক্তারা দিন-রাত কাজ করছেন। তারা দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং ক্রমাগত পণ্যের গুণগত মান ও বাজার বৈচিত্র্য আনছেন। এজন্যই ক্রেতারা এখনো আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন। তবে বড় কারখানাগুলো এই সংকটে টিকে থাকলেও ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাসান বলেন, ছোট কারখানাগুলো রক্ষা করতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে বড় সংকট তৈরি হবে। আজকের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোই সময়ের সঙ্গে বড় হয়ে ওঠে। বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন হাসান। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী নেতারা আগামী বছর নভেম্বরে নির্ধারিত বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। কারণ এ উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশ অনেক বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে।

তবে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তিন বছর, চীন দুই বছর এবং কানাডা ২০৩৪ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা অব্যাহত রাখবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা-ভিত্তিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকে অগ্রসর হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়