জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে জারি করা অধ্যাদেশের প্রতিবাদে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কনটেইনার জটের পাশাপাশি বহির্নোঙরে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যাও বেড়েছে। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
সোমবার (২৬ মে) দুপুর পর্যন্ত বন্দরের অভ্যন্তরে ৪৩ হাজার ৮২৭টি টিইইউ কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে খালি কনটেইনার রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৪৭টি। পাশাপাশি বহির্নোঙরে অবস্থান করছে ১৭টি জাহাজ, যেখানে রয়েছে ২২ হাজার ৬২৬টি টিইইউ কনটেইনার।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কাস্টমসে কর্মবিরতির কারণে লাগাতার বেশ কয়েকদিন আমদানি পণ্যের স্বাভাবিক সময়ে শুল্কায়ন না হওয়ায় পণ্য খালাস বিলম্বিত হচ্ছে। পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় বন্দরে কনটেইনার বেড়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মসূচি স্থগিত করায় কোরবানির আগেই খালাস স্বাভাবিক হয়ে কনটেইনার জট কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৫ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত টানা ১১ দিন কর্মবিরতি পালন করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলা এ কর্মবিরতির কারণে দেশের সর্ববৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজেও তৈরি হয় অচলাবস্থা। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্কায়নসহ সব ধরনের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। এতে মারাত্মক ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন আমদানি ও রপ্তানিকারকরা।
বন্দর সূত্র বলছে, আমদানি ও রপ্তানি মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার বিল অব অ্যান্ট্রি ও বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হয় চট্টগ্রাম কাস্টমসে।
গতকাল রোববার (২৫ মে) রাতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর কর্মবিরতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এতে সোমবার সকাল থেকে সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম কাস্টমসেও শুরু হয় স্বাভাবিক কাজকর্ম। ফলে গত কয়েকদিন ধরে গতিহীন শুল্কায়ন কার্যক্রমে ফের গতি ফেরে। কর্মচাঞ্চল্য আসে চট্টগ্রাম কাস্টমসে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, সোমবার দুপুর পর্যন্ত বন্দরের অভ্যন্তরে টিইইউ কনটেইনার রয়েছে ৪৩ হাজার ৮২৭টি। আগের সপ্তাহের একই দিনে (গত সোমবার) ছিল ৪৪ হাজার ২১১টি। হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৯০১৬ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙর মিলিয়ে বর্তমানে পণ্য ও কনটেইনারবাহী ১১১টি জাহাজ অবস্থান করছে। এরমধ্যে ৬৮টি জাহাজ থেকে বন্দর এবং বহির্নোঙরে কনটেইনার ও পণ্য খালাস চললেও বসে রয়েছে ৪৩টি। বহিনোঙরে বার্থিং শিডিউলের অপেক্ষায় থাকা ১৭টি জাহাজে টিইইউ কনটেইনার রয়েছে ২২ হাজার ৬২৬টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে বন্দরে টিইইউ কনটেইনার নেমেছে ৪৫২৫টি। ঢাকা আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) থেকে এসেছে ৭৯ টিইইউ। অফডকগুলো থেকে রপ্তানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার এসেছে ২১০০ টিইইউ এবং খালি কনটেইনার এসেছে ১০৫৪ টিইইউ। একইভাবে ৪৪৯১ টিইইউ কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে। ৪৪ টিইইউ কনটেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে।
অফডকগুলোতে আমদানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার পাঠানো হয়েছে ৬০১ টিইইউ। বন্দর থেকে ১১৭০ টিইইউ খালি কনটেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে। ১৩৪০ টিইইউ আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার অনচেচিজ সরাসরি আমদানিকারকদের ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর অভ্যন্তর থেকে ১৮১৪ টিইইউ কনটেইনার পণ্য খালাস দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক এএসএম রেজাউল করিম স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির প্রভাবে কাস্টমসের স্বাভাবিক কাজ বিলম্বিত হয়েছে। স্বাভাবিক শুল্কায়ন না হওয়ায় বন্দর থেকে নিয়মিত পণ্য খালাসও সম্ভব হয়নি। এতে বন্দরেও পণ্যে স্তূপ জমেছে। পাশাপাশি কাস্টমসের হাজার হাজার নথি জমে গেছে।
‘সোমবার সকাল থেকে কাস্টমসে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ সপ্তাহে অনেক বেশি শুল্কায়ন হবে। বন্দর থেকে পণ্য খালাসও বাড়বে’- বলেন তিনি।
জানতে চাইলে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউককে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৫৩ হাজারের বেশি। সোমবার সাড়ে ৪৩ হাজার টিইইউ কনটেইনার রয়েছে। বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে। তবে কাস্টমসে কর্মবিরতির কারণে যে জটিলতার তৈরি হয়েছিল, সেটি অনেকাংশে কেটে গেছে। এখন পণ্য খালাস আরও দ্রুত হবে। ঈদের আগেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বন্দরের কার্যক্রম। উৎস: জাগোনিউজ২৪