মনজুর এ আজিজ : ১৯৭১ সালে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। আর ২০২৫ সালে শুধু শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। এটাকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করি। শিল্প বাঁচাতে না পারলে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। রোববার (২৫ মে) ঢাকার গুলশান ক্লাবে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, শিল্পবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিল্পকারখানাগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলা হচ্ছে। গ্যাস সংকটে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। চলতি মূলধন সংকুচিত হয়েছে। আগামী ঈদে কারখানাগুলো বেতন-ভাতা দিতে পারবে কি না, সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতদকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি), প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমাদের উপদেষ্টা সাহেবরা মনে হয় উটপাখির মতো হয়ে গেছেন। চারদিকে কী হচ্ছে মনে হয় তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না।
প্রতিনিয়ত আমাদের কারখানা লে-অফ হচ্ছে। কিছুদিন পর মানুষ রাস্তায় নামবে। আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা হবে, যদি আপনি শিল্পকে বাঁচাতে না পারেন।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমরা তো গ্যাস বিল দিই, তাহলে গ্যাস আসবে না কেন। কারণ আমরা তো গ্যাসের ওপর নির্ভর করেই ইন্ডাস্ট্রি করেছি। এখন ব্যাংক চাচ্ছে ব্যাংকের টাকা দ্রুত ফেরত দাও, কিন্তু কারখানা তো চলে না, আমি কোথা থেকে টাকা এনে দেব। ব্যাংকঋণের সুদ এত বেশি কেন? আর কত জুলুম হবে আমাদের ওপর। শিল্প না বাঁচাতে পারলে দুর্ভিক্ষ হয়ে যাবে।
আলোচনায় বক্তারা আরো বলেন, বিপুল পরিমাণ গ্যাস বিল দিতে হলেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এগুলো শিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। উদ্যোক্তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর টিকে থাকার উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
তাঁরা বলেন, ৬০ শতাংশের বেশি উত্পাদন হচ্ছে না। ব্যাংকে সুদ বেড়েছে, গ্যাস নেই। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি। এনবিআরে অবরোধ—সব মিলিয়ে শিল্প বন্ধ হওয়ার পথে। তাঁরা বলেন, ‘শিল্প বন্ধ হলে সরকারকে এই দায় নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলেন, এদিকে শিল্প চালাতে সহায়তা করছে না, অন্যদিকে সময় বেঁধে দিয়ে বেতন দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর দেশি উদ্যোক্তাদের জিন্দা লাশ বানিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এনে কর্মসংস্থান করার চিন্তা করা হচ্ছে। ’
আট মাসে এক টাকার বিনিয়োগও আসেনি উল্লেখ করে বিটিএমএ সভাপতি আরো বলেন, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা বড় বড় বিনিয়োগের কথা বলে, সরকার টু সরকার আলোচনা হলেও দৃশ্যমান কিছু নেই, কারণ এখানে ব্যবসায় খরচ অনেক বেশি। তাই তারা আসবে না। এ ছাড়া এখানে বিনিয়োগ করে উত্পাদনে যেতেও পাঁচ বছর লাগবে।
সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে বই ছাপানোর নামে ১০ হাজার টন কাগজ নিয়ে আসা হয়েছে। যখন কাগজ দেশে পৌঁছেছে তখন বই ছাপানো শেষ। সেই পেপারের এখনো ডিউটিও দেয়নি। পোর্ট ডেমারেজও দেওয়া হয়নি। সেটা এখন খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমাদের স্থানীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়ছে। নতুন করে আরো ৩০ হাজার টন কাগজ আমদানি করা হচ্ছে ডিউটি ফ্রি ও ডেমারেজ ফ্রিতে। সরকার নিজেই স্থানীয় কাগজ কলগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলছে। চিনিকল থাকার পরও চিনি আমদানি করা হচ্ছে, যা স্থানীয় শিল্পবিরোধী নীতি।
বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে গেছে। গ্যাস সংকটের কারণে ৬০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হচ্ছে না কারখানায়। তিন মাস সুদ না দিলেই ঋণখেলাপি করছে ব্যাংক। আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধের ধমক দিচ্ছে সরকার। এতে বিপাকে পড়েছেন দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা।