শিরোনাম
◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল ◈ প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৫:২০ বিকাল
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৮:৪০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তিনমাসে ১৪৩ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট, আনসারসহ গ্রেপ্তার ২৩ 

সুজন কৈরী: [২] শক্তিশালী একটি প্রতারক চক্রটি গত তিন মাসে ১৪৩ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে। দেশের ভেতরে থাকা দাগি আসামি ও অপরাধীদেরও অবৈধভাবে ভুয়া জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে আসছিল এই চক্রটি। দেশের ভেতরে নারীসহ সাধারণ পুরুষদের এনআইডি কার্ড সংগ্রহে সক্রিয় রয়েছে দালাল চক্রের একটি গ্রুপ। এরপর অন্যজনের নামে অবৈধভাবে তৈরি করা হয় এনআইডি কার্ড। বিপুল ডকুমেন্টস ও ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, দালাল ও ২ আনসার সদস্যও।

[৩] চক্রটি তিনটি পর্যায়ে কাজ করে রোহিঙ্গা ও দাগী অপরাধীদের তৈরি করে দিচ্ছে ভুয়া পাসপোর্ট। প্রথমে ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি। দ্বিতীয় পর্যায়ে জন্ম সদন দিয়ে এনআইডি কার্ড। এরপর তৃতীয় ধাপে ওই এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে অবৈধভাবে তৈরি করা হচ্ছে রোহিঙ্গা নাগরিকসহ দাগি আসামিদের পাসপোর্ট। [৪] মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের অবৈধভাবে জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়া শক্তিশালী একটি প্রতারক চক্রের ২৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। 

[৫] গ্রেপ্তার হওয়া রোহিঙ্গারা হলেন- উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মরিজান ও রশিদুল। গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা দালাল হলেন- আইয়ুব আলী ও মোস্তাকিম। দুই আনসার সদস্য হলেন- জামসেদুল ইসলাম ও মো. রায়হান। গ্রেপ্তার বাঙালি দালাল- রাজু শেখ, শাওন হোসেন ওরফে নিলয়, ফিরোজ হোসেন, মো. তুষার মিয়া। আগারগা, মোহাম্মদপুর, উত্তরাতে ফিরে ফিরে কম্পিউটারের দোকান খুলে জঘন্য এ কাজে  লিপ্ত গ্রেপ্তার অপর দালালরা হলেন- মো. শাহজাহান শেখ, মো. শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মো. মাসুদ আলম,  মো. আব্দুল আলিম, মো. মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন, মো. সোহাগ। গ্রেপ্তার আসামীদের হেফাজত থেকে মোট ১৭ টি পাসপোর্ট, ১৩ টি এনআইডি, ৫ টি কম্পিউটার, ৩ টি প্রিন্টার, ২৪ টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির সংশ্লিষ্ট শত শত দলিলপত্র জব্দ করা হয়।

[৫] সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সাদিয়া সুলতানা সাথি একজন গৃহিনী। তার পাসপোর্ট নেই, বিদেশ যাবার কোনো স্বপ্ন নেই তার। দালাল চক্রটি গৃহিনী সাদিয়া সুলতানাকে টার্গেট করে তার এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে। পরে তার ছবি, ঠিকানা ও এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে কক্সবাজারে থাকা উম্মে ছলিমার নামে রোহিঙ্গা নারীর পাসপোর্ট তৈরি দেয় দালাল চক্র। সাদিয়া সুলতানার মতো সাধারণ নারী ও পুরুষদের এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে গত তিন মাসে ১৪৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে দেয় এই চক্রের সদস্যরা।

[৬] হারুন অর রশীদ বলেন, গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট সংক্রান্ত ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট এবং কম্পিউটারসহ ৩ রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ, ১০ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেয়া তথ্য সংগৃহীত ডকুমেন্টস বিশ্লেষণ করে ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনে ও রাতে কক্সবাজার, টাঙ্গাইল এবং ঢাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে দুই আনসার সদস্যসহ রোহিঙ্গা ও বাঙালি দালাল চক্রের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

[৭] তিনি বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটির একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেকটি দল এদের জন্য জন্ম সনদ, এনআইডি বানিয়ে দেয়। সর্বশেষে অন্য দলটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাংকে এক্সপ্রেস, সুপার এক্সপ্রেস ধরনের টাকা জমা দেয়া, বায়োমেট্রিক্স করা ও ছবি তুলার ব্যবস্থা করে দেয়।

[৮] ছয় ঘন্টার মধ্যে জন্ম সনদের জন্য তারা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে নেয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে থাকে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

[৯] হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার দালালদের মোবাইলে শত শত পাসপোর্ট করে দেয়ার প্রাসঙ্গিক সফট ডকুমেন্টস, ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ১৪৩ টি পাসপোর্ট ইতোমধ্যে তারা সরবরাহ করেছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি রোহিঙ্গাদের, বাংলাদেশী দাগি অপরাধীদেরকে ভিন্ন নাম ও ঠিকানায় হাজার হাজার পাসপোর্ট করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

[১০] তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম সনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে থাকে। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী

এসকে/এসসি/এসবি২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়