মাসুদ আলম : উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র নায়েবে আমির মো. মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে (৪৮) গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)। মঙ্গলবার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে ২টি মোবাইল এবং ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। শামীম মাহফুজ 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র মূলনেতা। তিনি সংগঠন পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন।
মহিবুল্লাহ আধ্যাত্মিক নেতার ভূমিকা পালন করছিলেন। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে তিনি ব্যাপক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। প্রথম দিকে হিজরতকারীদের তিনিই আশ্রয়-বয়ান দিয়ে বিভ্রান্ত করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকা হয়ে পাহাড়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ডা. শাকেরসহ অন্যান্য কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তারের পর গা ঢাকা দিতে রাজধানীতে অবস্থান নেন মহিবুল্লাহ।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সিটিটিসির হাতে গ্রেপ্তার সংগঠনটির শুরা সদস্য ডা. শাকের ওরফে শিশির, পলাতক জঙ্গি নেতা শামিন মাহফুজসহ গ্রেপ্তার শায়েখ মহিবুল্লাহ বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দূর্গম পাহাড়ে অবস্থিত জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দিস শারক্বীয়া’র প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যায়। এসময় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কুকি-চীনদের বিদ্রোহী সংগঠন কেএনএফ (কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এর তত্ত্বাবধানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলতো। সেখানে তাদের সঙ্গে কেএনএফ এর প্রধান নাথান বম ও অন্যান্য কুকি-চীন নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া' নামে সংগঠনটির নামকরণ করা হয় এবং শুরা কমিটি গঠন করে।
তিনি আরও বলেন, মহিবুল্লাহ ক্যাম্পে অবস্থানের সময় সন্ধ্যার পর প্রশিক্ষণরত সদস্যদের বয়ান দিতেন। তার বয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্যদের জিহাদের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা।
আসাদুজ্জামান বলেন, শায়েখ মহিবুল্লাহ পাহাড়ে কিছুদিন অবস্থান করার পর ঢাকায় চলে আসেন এবং শুরা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এনক্রিপ্টেড চ্যাটের মাধ্যমে সমন্বয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তিনি হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় বিভিন্ন সময়ে আসা-যাওয়া করতেন এবং সেখান থেকে পেইনড্রাইভের মাধ্যমে বিভিন্ন জিহাদি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তার ল্যাপটপে সংরক্ষণ করতেন। ডা. শাকের সিটিটিসির হাতে গ্রেপ্তারের পরে মহিবুল্লাহ নিজেকে আড়াল করতে তার ব্যবহৃত সিম ও মোবাইল ফোন নষ্ট করে ফেলেন। মহিবুল্লাহ চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময়ে হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি) এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের নজরদারির কারণে হুজি-বি’র কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ায় মহিবুল্লাহ তৎকালীন হুজির সদস্যরা নতুন একটি প্লাটফর্মে জিহাদী কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করেন। সেই লক্ষ্যে হুজির আরেক নেতা মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি তার সঙ্গে ২০১৭ সালে ভোলায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। হুজির অন্যান্য নেতারাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর থেকেই রক্সি ও মহিবুল্লাহ'র মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেপ্তারের পর হুজির আরেকজন সদস্য রাকিবের সঙ্গে মহিবুল্লাহ'র যোগাযোগ তৈরি হয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার কাজে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতে থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ব্যক্তি শামীম মাহফুজ। কমিটির প্রথম আমির ছিলেন রক্সি। রক্সি গ্রেপ্তারের পর আরেকজন আমির নিযুক্ত হোন। শূরা কমিটির ছয়জন সদস্য ছিলেন। এরমধ্যে আনিসুল ইসলাম তমালকে নতুন আমির নিযুক্ত ও শায়েখ মহিবুল্লাহকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়। শামীম মাহফুজকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শামীম, তমাল ও রাকিব পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
শামীম মাহফুজ সম্পর্কে তিনি বলেন, সে ডিবি পুলিশের হাতে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। শামীম মাহফুজ কুকি-চীন প্রধান নাথাম বমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নাথাম বমের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন শামীম। তিনি সপরিবারে নিখোঁজ। তার স্ত্রী এই সংগঠনের জড়িয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এমএ/এএ