মাসুদ আলম: প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য চোরাই গার্মেন্টস পণ্যসহ সংঘবদ্ধ চোরচক্রের হোতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দাসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্ততার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- মো ইমারত হোসেন সজল (৩৭), শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ (৩০) ও মো হৃদয় (২৮)।
শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় উদ্ধার করা হয় ব্রাজিলে রপ্তানির জন্য চুরি যাওয়া পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ডভ্যান। চক্রটি গত দেড় যুগ ধরে রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে আসছিল।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছরের ২৯ অক্টোবর গাজীপুরের কারখানা থেকে কাভার্ডভ্যানে পোশাকের একটি চালান ব্রাজিলে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পরের দিন ৮৯৮ কার্টন ভর্তি সোয়েটার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্রেতা-মনোনীত শিপিং প্রতিষ্ঠান এক লাখ ২৫ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যের চালানটি গ্রহণ করে ব্রাজিলে পাঠায় এবং সে মোতাবেক বন্দর থেকে চালানবহনকারী জাহাজটি রওনা দেওয়ার পরপরই ক্রেতা পুরো অর্থ পরিশোধ করে।
তিনি আরও বলেন, তবে গত ৬ জানুয়ারি ব্রাজিলের ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যান গার্মেন্টস মালিকপক্ষ। দেখা যায়, কিছু কার্টন সম্পূর্ণ খালি এবং অনেকগুলো কার্টন থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য খোয়া গেছে। পরবর্তী সময়ে চুরি হওয়া গার্মেন্টস পণ্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে পরিশোধ করতে হয় মালিকপক্ষকে। প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ গত ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গাছা থানায় চুরির ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করে।
আল মঈন বলেন, শাহেদ এই গার্মেন্টস পণ্য চুরি জগতের মাস্টারমাইন্ড এবং এই চক্রের মূলহোতা ও নির্দেশদাতা। মূলত তার ছত্রছায়ায় ও সম্মতিতে দেশের প্রায় অধিকাংশ গার্মেন্টস পণ্য চুরির ঘটনা হয়ে থাকে। ৪০-৫০ জনের এ চক্রে রয়েছে অসাধু ড্রাইভার, হেলপার, গোডাউন মালিক, গোডাউন এলাকার আশ্রয়দাতা, অত্যন্ত দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল শ্রমিক। ব্রাজিলে রপ্তানি করা পণ্য চুরির ঘটনাও শাহেদের নির্দেশে সংঘটিত হয়।
তিনি আরও বলেন, শাহেদ চট্টগ্রামে থাকাকালে ১৯৯৬ সালে দুটি ট্রাক কিনে লোকাল ব্যবসা শুরু করে এবং ২০০৪ সালে ট্রাক দুটি বিক্রি করে চারটি কাভার্ডভ্যান কিনে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন শুরু করে। সে কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার এবং হেলপারদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সহায়তায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির কার্যক্রমের জন্য একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র তৈরি করে। ২০১৮ সালের পর শাহেদ পর্দার আড়ালে থেকে চুরির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু করে এবং প্রতিটি চুরির ঘটনায় আয় করা অর্থের সর্বোচ্চ অংশ পেতো সে।
তিনি বলেন, শাহেদ গত দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এই গার্মেন্টস পণ্য চুরির জগতে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করছে। মৌলভীবাজার শহরে সাহেদের প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। মৌলভীবাজারের দূর্লভপুরে প্রায় ২০ একর জমির উপরে মাছের খামারসহ বিশাল দুটি হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে তার। এছাড়াও বর্তমানে তার নিজস্ব চারটি কাভার্ডভ্যানসহ সহযোগীর আরও ১৫টি কাভার্ডভ্যান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭-১৮টি গার্মেন্টস পণ্য চুরির মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলায় সে কারাভোগ করেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে আদালতে ছয়টি মামলার বিচারকাজও চলমান রয়েছে।
এমএ/এসএ
আপনার মতামত লিখুন :