সিরাজুল ইসলাম, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ): মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের বশির উদ্দিন ফাউন্ডেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৫ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ৩ শিক্ষকসহ ২ কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান ৩ শিক্ষক নিয়োগের কথা স্বীকার করে বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক রেজাউল করিম, সন্ধ্যা রানী ও আঁখি দাস খুশি হয়ে আমাকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাকি টাকা তারা নিজেরাই খরচ করেছেন। আমি শুধু রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি। এ নিয়োগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোনো রেজুলেশন করা হয়নি বলেও তিনি জানান।
সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধি অমান্য করে প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান গত সেপ্টেম্বর মাসে সহকারি শিক্ষক হিসেবে ওই ৩ জনকে নিয়োগ দেন। সেই সাথে আরো ২ কর্মচারী নাইটগার্ড মিজানুর রহমান ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী রিনা আক্তারকে নিয়োগ দেয়া হয়। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই শিক্ষক, কর্মচারীরা নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করেন।
এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অবসর প্রাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা ওই শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিদ্যালয়ে না আসার নির্দেশ দেন। তবে প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান তাদের নিয়োগ বৈধ করতে সংশ্লিষ্ট দফতর ও সরকারদলীয় স্থানীয় কতিপয় নেতার দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ইতিপূর্বে প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য একাধিক মামলা হয়েছে। প্রায় ৮ বছর যাবত ওই প্রধান শিক্ষকের বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, আমার এনটিআরসিএর নিবন্ধন থাকলেও নিয়োগ নেই। প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
সন্ধ্যা রানী বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আমার স্বামীই সবকিছু জানেন। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পাওয়ার পর এখন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
এদিকে, আঁখি দাস কে ফোন করে পাওয়া যায়নি। তার স্বামী সুবল চন্দ্র সরকার বলেন প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমেই নিয়োগ হয়েছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমানের কাছে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদত্তোর দিতে পারেননি। তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী ভিপি শহিদ ভাই আপনাদের সাথে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান শহিদ বলেন, গত দেড় বছরের মধ্যে আরিফুর রহমানের সাথে আমার কোনো কথাবার্তা হয়নি। অনিয়ম করে থাকলে তার যথাযথ শাস্তি হওয়া উচিত।
ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অবসর প্রাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, ৩ শিক্ষকসহ ২ কর্মচারি নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। প্রধান শিক্ষক কিভাবে নিয়োগ দিয়েছেন সে বিষয়ে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ওই শিক্ষক কর্মচারিদের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনা পারভীন বলেন, ওই শিক্ষকদের ফাইল আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। আমি ফেরত দিয়েছি। তারপর কিভাবে নিয়োগ হয়েছে আমি জানিনা। বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :