বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি খাত আবারও ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি। জাল টাকা আর অস্ত্রের পর, এবার পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশে ঢুকছে কানাডা, ইতালি, সিঙ্গাপুর, মাল্টা, সার্বিয়া, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা।
ভয়ংকর এই চিত্র সামনে এনেছেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে বুধবার তিনি দাবি করেন, পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় একটি দেশীয় চক্র পরিকল্পিতভাবে বিদেশি জাল ভিসা তৈরি করে তা বাংলাদেশে সরবরাহ করছে।
সায়ের লিখেছেন, ‘দেশটি শুধু জাল টাকা আর অস্ত্র দিয়ে থেমে নেই। এখন ফুল স্কেলে কানাডা, ইতালি, সার্বিয়া, মাল্টা, পোল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এমনকি বসনিয়ার জাল ভিসা তৈরি করছে, এবং তা বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। যা দেখতে হুবহু আসল ভিসার মতো করে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই: বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় জনশক্তি বাজারকে ধ্বংস করা।
তার দাবি অনুযায়ী, যারা বৈধভাবে বিদেশে গিয়ে কর্মসংস্থান পেতে চান, তারা এই ভিসা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে গিয়ে ধরা পড়ছেন। এতে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে।
জুলকারনাইন সায়েরের মতে, জাল ভিসাগুলো এতটাই নিখুঁতভাবে তৈরি করা হচ্ছে যে সেগুলো খালি চোখে বা সাধারণ যাচাইকরণে ধরা যাচ্ছে না। এগুলো অনলাইনে ‘অর্ডার ফর্ম্যাটে’ বিক্রি হচ্ছে।
তার দাবি, এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে একটি অসাধু দেশীয় চক্র, যার মধ্যে বিএমইটি (বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো)-কেন্দ্রিক কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
একই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে কয়েকটি ফেইক ওয়েব সাইটের তথ্য উল্লেখ করেন জুলকারনাইন সায়ের। সেখানে তিনি লিখেন, শুধু বাহ্যিক কাগজপত্র নকল করেই থেমে নেই ওই চক্র। তারা তুরস্ক সরকারের ভিসা ভ্যালিডেশন সাইটের মতো নকল পোর্টাল বানিয়ে সেটিকেও ‘ভ্যালিডেশন’ প্রমাণ দেখাতে ব্যবহার করছে। সত্যিকারের ভিসা চেকিং পোর্টালের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, https://online.csgb.gov.ct.tr । এবং সেদিকেই অনায়াসে মিল করানোর দৃশ্যপট তৈরি করে প্রতারকরা ভিসার নকল কাগজে জাল বৈধতার ছাপ ফুটিয়ে তুলছে।
সায়েরের মতে, এসব নকল ভ্যালিডেশন‑পোর্টালে আসলে ভিসার তথ্য ম্যানিপুলেট করে ভুয়া ‘স্ট্যাটাস: ভ্যালিড’ বার্তা দেখানো হচ্ছে; ফলে অনেকেই ভাবছেন এগুলো বৈধ। অভিযোগ অনুযায়ী, বাংলাদেশি কিছু ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত কর্মকর্তারাও এই ফাঁদগুলো শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ, নকল ওয়েবসাইটগুলোর ডিজাইন, ইউআরএল‑স্ট্রাকচার এবং প্রদর্শিত ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলো সরকারি পোর্টালের সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে মিল রয়েছে।
ভিসাগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ইমিগ্রেশন পার হওয়া গেলেও, ট্রানজিট কান্ট্রি বা গন্তব্য দেশে পৌঁছেই ধরা পড়ে যাচ্ছে জালিয়াতি। কারণ, আধুনিক আন্তর্জাতিক স্ক্যানার ও ডাটাবেইজের মাধ্যমে এসব জাল ভিসা সহজেই শনাক্ত হচ্ছে।
ফলে যেসব বাংলাদেশি যুবক দেশে জমিজমা বিক্রি করে, ধারদেনা করে, জীবনের সব সঞ্চয় খরচ করে বিদেশে যাচ্ছেন, তারা গিয়ে হয়তো বিমানবন্দরে আটকা পড়ছেন, কিংবা ডিপোর্ট হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। অনেকেই তখন পরিবারে মুখ দেখাতে পারছেন না।
এর আগে, জুলকারনাইন সায়ের এক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছিলেন— বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে ভারত থেকে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার জাল নোট বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছে। সেসব টাকা ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা-নিয়ন্ত্রিত ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত হয়েছিল। যা বাংলাদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে সীমান্তে প্রবেশ করানো হয়। সূত্র: ঢাকা মেইল