ইমন মাহমুদ, ভৈরব: [২] পহেলা ফাল্গুন, ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে উঠেছে ফুলের দোকানগুলো। ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে রাঙাতে কতই না আয়োজন। যার মূল অনুষঙ্গ রঙ-বেরঙের ফুল। বসন্ত বরণে আনন্দে মাতবে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ। সব আবেদন, অনুরাগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের বড় মাধ্যম ফুল। বাসন্তী রঙের শাড়িতে সাজবে তরুণীরা। মাথায় গুঁজবে বাহারি ফুল। প্রতি বছরই দিসবগুলোতে অন্যতম অনুষঙ্গ হিসাবে থাকে ফুল।
[৩] প্রতিবছর দেশে ফুলের চাহিদা বাড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এই সময়টাতে ব্যাপক চাহিদা থাকে বিভিন্ন উৎসবের কারণে। বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা থাকে আকাশচুম্বী, ফুলের ভরা মৌসুমে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিন দিবসের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছে ফুল ব্যবসায়ীরা।
[৪] এ সময়ে সারা দেশে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। সেই সুবাধে কিশোরগঞ্জের ভৈরবেও জমে উঠেছে ফুল বেচাকেনা বিভিন্ন ফুলের দোকান ও নার্সারীতে সাজিয়ে রেখেছে বাহারি ফুলের সাজঁ। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর মোড়ে সাজিয়ে বসেছে বাহারি ফুলের সাজঘর। এ যেন ঢাকার বাহিরে আরেকটি শাহবাগ মোড়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ফুলের দোকান গুলোতে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও বছরজুড়ে বিভিন্ন উৎসব বিশেষ করে জন্মদিন, বিয়ে, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা বছর জুড়েই ফুল বাণিজ্য চলে।
[৫] ব্যবসায়ীরা জানান প্রতি বছর গড়ে ২০ শতাংশ হারে দেশে ফুল উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া দেশে অনেক ফুল চাষ করা যায় তবে অর্কিড ফুলসহ বেশ কিছু ফুল দেশে চাষ হচ্ছে না ফলে এ ধরণের কয়েক ধরনের ফুল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
[৬] ভৈরব উপজেলার এলাকার কমলপুর গাছতলা ঘাট গিয়ে দেখা যায়, মাঠভর্তি বাগানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্নি জাতের ফুল। সেই ফুলের বাগানে পরিচর্যা করছেন চাষীরা।
[৭] ফুলচাষি বাদল মিয়া বলেন, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের চাহিদা থাকে বেশি। সেই চাহিদা মেটাতে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি। বাজার ধরার জন্য ফুল গাছের পরিচর্যা করছি। ফুলটা যেন ভালো থাকে এ জন্য কাজ করছি।
[৮] ফুল বাগানের মালিক রিমন বলেন, সারা বছরই আমরা ফুল বিক্রি করে থাকি। তবে প্রতি বছরে বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। আমরা আমাদের বাগান থেকে নিজেদের দোকানের চাহিদা মিটিয়ে যারা মৌসুমি ব্যবসায়ী বা এই বিশেষ দিনগুলোতে অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসে তাদের কাছেও ফুল বিক্রি করছি। ফুলের দামও ভালো পাচ্ছি।
[৯] এছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কের মুক্তিযোদ্ধা চত্বর মোড়ে,কমলপুর নিউটাউন এলাকা, বাসস্ট্যান্ডের কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ফুলের দোকানে সাজিয়ে রয়েছে বাহারী রঙ্গের ফুল।
[১০] মৌসমি ফুল ব্যবসায়ী সজিব বলেন, আমি একজন মৌসুমি ফুল ব্যবসায়ী। শহর থেকে পাইকারি দামে ফুল কিনে গ্রামে নিয়ে খুচরা বিক্রি করি। এবার ফুলের দাম কিছুটা বেশী। যার কারণে বেশি দামে ফুল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। ভালোবাসা দিবসের অন্যতম আকর্ষণ ফুল। প্রিয়জনের জন্য এই সময় ফুল ছাড়া অন্য কোনো উপহার ভাবতে পারে না। দাম হলেও ফুল কিনতে আগ্রহী ক্রেতারা।
[১১] পুষ্প ফ্লাওয়ার গার্ডেনের মালিক ইমন মিয়া বলেন, আমাদের ফুল ব্যবসায়ীদের সারা বছরের আয়ের একটা বৃহৎ অংশ ফেব্রুয়ারী মাস থেকে আসে। এই বছর আমাদের ব্যবসাও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আছে। বছরের অন্য সময় এত পরিমাণ ফুল বিক্রি হয় না। তাই ভরা মৌসুমে যা আয় হবে তা দিয়েই সারা বছর চলা যাবে। খরচ বাদ দিয়ে এর তিন ভাগের একভাগ মুনাফা থাকবে বলেও জানান এই ফুল ব্যবসায়ী। ফুল বেশী দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের বেশি দামে ফুল কিনে আনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার বিদেশি ফুল আমদানিতে খরচ বেশী হচ্ছে। যেকারণে ফুলের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে। তবে ফেব্রুয়ারীর বিশেষ দিবসগুলোতে ক্রেতারাও এই দাম নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন না।
[১২] ভৈরবে বিভিন্ন ফুলের দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০-৫০ টাকা, গোলাপ ও রজনীগন্ধা কাগজে মোড়াতে লাগছে ১০০-১৫০ টাকা, অন্য রঙের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮ টাকা, রঙিন গ্লাডিওলাস ৬০-৭০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ৪০-৫০ টাকা, গাঁদা ৫০ টাকা ১শ, ফুলের তোড়া নরমাল সর্বনিম্ন সাড়ে ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, জারবেরা ৫০ থেকে ২০০ টাকা। এর মধ্যে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে লাল গোলাপ ও জারবেরা রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রতিনিধি/একে