ফয়সাল চৌধুরী : তিন বেলা ২৫ থেকে ৩০ কেজি স্বাভাবিক সুষম খাবারের পাশাপাশি নাস্তা হিসেবে আপেল, মালটা, কলা, আঙুরসহ বিভিন্ন ফলমূল তার খুব পছন্দ। নাম তার ‘শেরখান’।
’শেরখান’ নাম শুনলেই মনে হবে এলাকার প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি। কিন্তু এটি আসলে কোন মানুষের নাম নয়। এটি হাতির মত বিশাল আকৃতির একটি কোরবানির গরুর নাম।
আর তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন খামারী নাঈম ইসলাম ও তার পরিবার । সাদা-কালো ডোরাকাটা ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় গরুটি হাঁটে হেলেদুলে। বিশাল দেহের অধিকারী তবে বেশ শান্তশিষ্ট। কাউকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে না। যার ওজন প্রায় ১ হাজার ৬'শ কেজি বা ৪০ মণ। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের আকমাল ইসলামের ছেলে ও প্রান্তিক খামারি নাঈম ইসলাম। দীর্ঘ চার বছর ধরে ফিজিয়ান জাতের গরুটি নিজের সন্তানের মত লালন পালন করে বড় করেছেন।
নাঈম ইসলাম বলেন, শেরখানকে লালন পালনে মোটাতাজা করতে তিনি কোনো মেডিসিন বা ইনজেকশন ব্যবহার করেননি। বংশ পরম্পরায় তারা গরুর খামারী। ছোটবেলা থেকেই গরু লালনপালন করেন। চার বছর আগে হাটের থেকে গরুটি মাত্র ৭০ হাজার টাকায় কিনে আনি। তখন তার বয়স ছিল মাত্র সাত মাস। তখন থেকে সেটিকে তিনি নিজের সন্তানের মতো খুব যত্ন করে লালন পালন করতে থাকেন। তার সঙ্গে বাবা আকমাল ইসলাম, ছোট ভাই নাহিদ ইসলাম ও সেই সাথে আমার মা বেশ পরিশ্রম করেন। বড় হতে থাকে ষাঁড়টি। সেইসঙ্গে বড় হতে থাকে আমাদের পরিবারের স্বপ্ন। আদর করে ভালোবেসে তারা সুঠাম বিশাল দেহের অধিকারী সুউচ্চ এই গরুটির নাম রাখেন ‘শেরখান'। এই গরুটি বর্তমানে মিরপুর থানা পর্যায়ে এক নম্বর হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও বাণিজ্যিক মেলায় আমরা প্রথম পুরস্কার লাভ করেছি। কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে এর চেয়ে বড় গরু আর নেই। আশা করছি শেরখানকে নিয়ে দেশবাসী কাছ থেকে বড় কিছু পাব।
এদিকে প্রতিদিন উৎসুক মানুষ শেরখানকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন গরুটির মালিক তরুণ উদ্যোক্তা ও খামারি নাঈম ইসলামের বাড়িতে । বিশাল আকৃতির গরুটি লালন-পালন করায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকেও মিলেছে পুরস্কার। প্রশংসিত হয়েছেন উপজেলা এলাকার সেরা খামারি হিসেবেও। গরুটি মালিক, এলাকাবাসী ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ধারণা করছেন এবারের ঈদে কুষ্টিয়ার কোরবানির হাট কাঁপাবে এই শেরখান।
নাঈম ইসলামের বাবা আকমাল ইসলাম জানান, ৪ বছর ধরে গরুটিকে ঘাস, খোল, ভুসি, কলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি খাইয়ে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে লালন-পালন করতে হচ্ছে। শেরখানকে বড় করতে অনেক টাকা ঋণও করতে হয়। ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই তাকে এবারের কোরবানির হাটে বিক্রি করতে হচ্ছে। কোরবানির হাটে যে সমস্ত গরু উঠছে তার মধ্যে শেরখান এখনও সেরা সবচেয়ে বড় কোরবানির পশু।
নাঈম ইসলামের ছোটভাই নাহিদ বলেন, তিনবেলা সুষম খাবার দিয়েছেন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ কেজি খাবার খায় শেরখান। খাবারের তালিকায় রয়েছে ভুট্টা, ছোলা, যব, খেসাড়ি ডাল, ডাবরী, হর,ভুষি, মসুর ডাল। এগুলো ভাঙিয়ে গুড়া করে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে গমের ছাল, তিলা খৈল, ধানের মিশিয়ে তিনবেলা খাওয়ানো হয়। তবে, এসব খাবারের পাশপাশি তিনবেলা কলা, আপেল, মালটা,আঙুর সহ নানারকম ফলমুল খুব পছন্দ শেরখানের। প্রতিদিন খাবারের জন্য ৮০০ টাকা খরচ হয়।
মিরপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. এম মাহমুদুল হক বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের হাজীপাড়া এলাকায় খামারি নাঈম ইসলামের বাড়িতে গরুটিকে দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করছেন। গরুটি দেখতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমরাও গিয়েছিলাম।
গরুটির মালিক স্বাস্থ্য সম্মতভাবে লালন-পালন করে গরুটিকে বড় করে তুলেছেন। তিনি আরো বলেন, গতবার আমাদের প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী হয়েছিল সেখানে নাঈম ইসলামের শেরখানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে যতগুলো অ্যানিম্যাল শো করা হয়েছিল তারমধ্যে শেরখান নামে গরুটি সবার সেরা হয়েছিল। নাঈম ইসলাম প্রথম পুরস্কার লাভ করে।
আমরা সাইন্টিফিক উপায়ে দেশীয়ভাবে সুন্দরভাবে লালন পালন করার জন্য আমরা সঠিক সময়ে কৃমিনাশক টিকা প্রদান এবং দেশীয় পদ্ধতিতে কাঁচা ঘাস সহ দানাদার খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করি।
এই উপজেলায় পশু স্বাস্থ্য সম্মতভাবে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন কৃষকরা। উপজেলা প্রাণীসম্পাদ অফিস তাদের নানাভাবে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছেন।