শিরোনাম
◈ নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে কেন শাপলা ফুলে আগ্রহ এনসিপি'র? ◈ রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহায়তায় নতুন প্রকল্প আসছে ◈ মানবতাবিরোধী মামলা: শেখ হাসিনা-কামালের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ ◈ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে ইসরায়েল ◈ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিভ্রান্তি: ট্রাম্পের ঘোষণা, তেহরানের শর্ত, আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা মেলেনি ◈ ক্লাব বিশ্বকা‌পের শেষ ষোলোতে মে‌সির ইন্টার মায়ামি ◈ এক ধাক্কায় কোটি টাকার সেতু ভেঙে মাঝ নদীতে নিয়ে গেল বাল্কহেড! (ভিডিও) ◈ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি: কৌশলগত আগ্রাসন নাকি আত্মরক্ষা? কোথায়, কতটি ও কেন ◈ ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা 'সম্পূর্ণ মিথ্যা', দাবি ইরানি সংবাদ সংস্থার ◈ মব সন্ত্রাস বন্ধ না করলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গেও এটা ঘটবে: গোলাম মাওলা রনি

প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল, ২০২৩, ০২:৪২ দুপুর
আপডেট : ১৭ এপ্রিল, ২০২৩, ০২:৪২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঈদে পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত থাকে মেঘনার উপকূল  

মেঘনার উপকূল

জহিরুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুর: মেঘনার রূপ রস সৌন্দর্যে অনন্য মেঘনা পাড়ের উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। নদী আর প্রকৃতি দুই মিলে লক্ষ্মীপুরের মেঘনার উপকূলকে করে তুলেছে অপরূপ। 

ফলে প্রতিদিন এ জেলার পুরো উপকূল হয়ে উঠছে প্রকৃতি প্রেমী মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। আর ঈদ এলেই লাখ লাখ পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত থাকে গোটা মেঘনা নদীর উপকূল।  

মেঘনা পাড়ের এ জেলায় রয়েছে জেগে ওঠা অনেক চর, ঢেঁউ আর বেলাভূমির মিতালী। রয়েছে ইলিশের দীর্ঘতম অভয়াশ্রম। মেঘনার বুক চিড়ে পণ্যবাহী সারি সারি লাইটারেজ জাহাজ, মাছ শিকারি ছোট, বড় পালতোলা নৌকার দোলা আর নারকেল সুপারির সাজানো বাগান। রয়েছে ৩শ বছরের পুরানো ঐতিহ্য বাহী দালাল বাজারের জমিদার বাড়ি ও খোয়াসাগর দিঘি। 

সয়াবিন ও ধানসহ ফসলের বিস্তৃর্ণ মাঠ। নদীর চরে রয়েছে গরু মহিষ, ভেড়া। তাদের সঙ্গে রাখালের বন্ধুত্ব। মেঘনা নদী ছাড়াও ভূলুয়া নদী এবং ডাকাতিয়া ও রহমতখালী খাল, রহমতখালী খাল পাড়ে রয়েছে মনোরম পৌর শিশু পার্ক। উপকূল জুড়ে এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, তাই অনায়াসেই এখানে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। ঢল নামে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের।   

সদর, রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর উপজেলায় এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবস্থিত। দিন দিন মেঘনার এই উপকূলকে ঘিরে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠছে। 

উপকূলের অন্যতম পর্যটন স্পট চর আলেকজান্ডার। মেঘনার চর আলেকজান্ডারে জোয়ার ভাটার খেলা চলে নিত্য। মেঘনার উঁচু ঢেঁউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলেরা শিকার করেন রূপালী ইলিশ। রামগতি উপজেলায় মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে আলেকজান্ডার পৌর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র একশ গজ দূরত্বে ভাঙনরোধে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। 
বেড়ী বাঁধ এলাকা এখন অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান।

বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্রিক ছুটির দিন গুলোতে এ এলাকায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। দেশের নানান প্রান্ত থেকে আসেন পর্যটকেরা। এছাড়াও লক্ষ্মীপুরের হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটে যান সেখানে। 

আর ঈদ এলে তো প্রতিনিয়ত লোখো দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এই বাঁধে। প্রায় চার কিলোমিটার পাথরের বেড়ী বাঁধ থেকে মেঘনার পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখা যায়। এখান থেকে নদী এবং তীর সংলগ্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপার লীলা উপভোগ করা যায়। এখানে আগত দর্শনার্থীরা এটাকে মিনি কক্সবাজার বলে থাকেন, তাদের ভাষায় এ যেন আরেক কক্সবাজার। ছুটি কিংবা অনন্যা দিন ওই বাঁধে ঢল নামবে সৌন্দর্য পিপাসু হাজার হাজার মানুষের।  

মেঘনা নদীর তীরে রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের তেগাছিয়া বাজার স্লুইস গেট থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। এখানে রয়েছে ৩০ হাজার ঝাউগাছের গভীর বন। ফলে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এটিও অন্যতম একটি বিনোদন স্পট হিসেবে পরিচিত। 

মতিরহাট জেলার আরেক দর্শনীয় স্থান। এটি দেশের সর্ববৃহৎ মাছ ঘাটগুলোর অন্যতম। এখানে রয়েছে মেঘনা নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সমারোহ। প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার ইলিশ কেনা বেচা হয় এ ঘাটে। 

এখানকার চরে রয়েছে শত শত মহিষের পাল। পাওয়া যায় মহিষের দুধের ঐতিহ্যবাহী ছানা ও দই। মতিরহাট রক্ষায় ব্লক দিয়ে বাঁধ দেওয়ায় পলি জমে বেলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে। পাশেই জেগে উঠেছে বিশাল এক নতুন চর। ফলে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ওই চরে ভিড় জমায় ভ্রমণপ্রেমীরা।

জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কি.মি. দূরে মেঘনা নদীর পাড়ে মজুচৌধুরীর হাট। এখানে রয়েছে দুটি স্লুইস গেট। স্লুইস গেট থেকে উপভোগ করা যায় নদীর মনোরম দৃশ্য। প্রতিদিন জেলা শহর থেকে শত শত মানুষ ভিড় করে এখানে। জেলেদের মাছ ধরা আর মানতা সম্প্রদায়ের নৌকার সারি, ঘাটে মাছের বেছা কিনা উপভোগ করেন আগত দর্শনার্থীরা।  

পৌর শহরে অবস্থিত ৩শ বছরের পুরানো ঐতিহ্য বাহী দালাল বাজারের জমিদার বাড়ি। লক্ষ্মীপুরের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা দালাল বাজারের জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়িটি দর্শনার্থীদের দারুন আকর্ষনের জায়গা। সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়িটি দেখলে জমিদারের নান্দনিক রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। 

সাড়ে সাত একর জমির উপর তৈরি বাড়িটির বেতরে চারটি পুকুর, সাতটি ভবন ও একটি বিশাল বাগান রয়েছে। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর এই জমিদার বাড়ির সামনে ২৫ একর জমির উপর রয়েছে খোয়াসাগর দিঘি। জমিদার রাজ ব্রজবল্লব রায় মানুষের পানির চাহিদা মিটাতে দিঘিটি খনন করেন।

এই দিঘি নিয়ে নানান কল্পকাহিনীও প্রচলিত আছে। রহস্যময় এ দিঘিটি এখন বিনোদন কেন্দ্র। প্রায় ২৫ একর বিস্তৃত দিঘিটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত কুয়াশাচ্ছন্ন দেখায়। কুয়াশাকে স্থানীয় ভাষায় ‘খোয়া’ বলা হয়। 

দিঘির পানিও সাগরের মতো মনে হয়। দুই মিলেই দিঘিটির নাম দেওয়া হয় ‘খোয়াসাগর’। সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তায় দিঘিটি বিনোদন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে।

শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দালালবাজার খোয়াসাগর দিঘিটি প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিঘির চারপাশ বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। দিঘির উত্তর ও পশ্চিম পাশে গাইডওয়াল এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বেঞ্চ দিয়ে দর্শনার্থীদের বসার ও সোলার ল্যাম্পপোস্ট দিয়ে রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে দুটি নৌকা। একই সঙ্গে ওয়াকওয়েতে রেলিং দিয়ে শিশুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিঘি এলাকায় বিনোদনের ব্যবস্থা করতে এরই মধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। অন্যদিকে দিঘিকে ঘিরে গড়ে উঠছে বেশ কয়েকটি মিনি চাইনিজ রেস্তোরাঁ। শিশুদের মনোমুগ্ধকর বিনোদনের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে শিল্পাঙ্গন।

এছাড়া জেলা রায়পুর উপজেলায় মেঘনা নদীর পাড়ে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কয়েকটি পর্যটন স্পট। তার মধ্যে অন্যতম আলতাফ মাস্টারের মাছ ঘাট ও সাজু মোল্লার ঘাট।

মেঘনা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা স্থান দুটি পর্যটকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে সল্পসময়ে মধ্যে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটন প্রেমী ছুটে যান স্থান দুটিতে। মেঘনা নদীর মনোরম দৃশ্য ও পর্যটকদের জন্য তৈরী করা রেস্টুরেন্ট গুলোর কারুকার্য সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের নজর কেড়েছে।

রাতের বেলাই রেস্টুরেন্ট গুলো মেঘনা নদীতে যেন ভাসতে থাকে। নানা রকম বাতি ও নদীর পানি একা কার হয়ে এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি হয় সেখানে। বিকেল হলেই প্রশান্তির আশায় মানুষের ঢল নামে এই সব পর্যটন কেন্দ্রে। সম্পাদনা: ইস্রাফিল ফকির 

প্রতিনিধি/আইএফ/জেএ 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়