সোহাগ হাসান, সিরাজগঞ্জ: ফেলে দেওয়া গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার হাড় সংগ্রহে সিরাজগঞ্জে গড়ে উঠেছে যমুনা বোন মিল কারখানা। এই কারখানার উৎপাদিত হাড়ের গুড়োর সার যাচ্ছে দেশের ওষুধ কোম্পানিতে। এতে প্রতি মাসে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার উৎপাদিত হাড় গুড়া সার খুলনার ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে দিচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীতে।
সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কালিয়া গ্রামে প্রায় তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে হাড়ের গুড়া তৈরির কারখানা। এই কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে ২০জন কাজ করে সংসার চালাচ্ছে।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, টাঙ্গাইল জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ফেলে দেওয়া হাড় সংগ্রহ করে কারখানায় প্রতি কেজি হাড় ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হাড়গুলো পরিস্কার করে মেশিনের সাহায্যে গুড়া করে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় দুই ট্রাক হাড়ের গুড়া খুলনার ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করা হয়।
কারখানায় কাজ করার সময় কথা হয় নারী শ্রমিক চাম্পা ও আহের আলীর সাথে। তারা জানান, আমরা এখানে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করি। এতে প্রতিদিন ৩৫০ টাকা পাই। দুইজনের টাকায় আমার সংসার চলে। স্বামীর আয়ের সাথে আমার আয় সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।
হাড় সংগ্রহকারী সোলায়মান হোসেন জানান, হাড় সংগ্রহের জন্য কয়েকজনের একটি দল রয়েছে। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে। দৈনিক প্রায় গড়ে ২০/২৫ কেজি হাড় সংগ্রহ হয়। এই হাড় বিক্রির টাকায় কোন মতে সংসার চলে। তবে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন কসাইরা আর আগের মতো হার ফেলে না। মাংসের সাথেই বিক্রি করে দেয়। তাই এখন আগের মতো হাড় সংগ্রহ করতে পারছি না।
যমুনা বোন মিল কারখানার মালিক হাফিজুল শেখ জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করি। সারাদেশে ৫-৬টি হাড়ের কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জে একটি। মহিষ ও গরুর হাড় ক্রয় করে সেগুলো গুড়ো করে খুলনার ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। তাদের কাছে শুনেছি এই সব গুড়া দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। অনেক সময় চাহিদা মতো গুড়ো সরবরাহও করতে পারি না। আগের মতো এখন হাড়ও তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আমাদের হাড়ের গুড়া উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েছে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
খুলনার (হাড়ের গুড়ার) ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন মোবাইল ফোনে জানান, এই হাড়ের গুড়া থেকে গবাদি পশুর খাবার, মুরগির খাবার ও ওষুধ কোম্পানিতে ক্যাপসুল তৈরির কভার তৈরি হয়। একারণে বিভিন্ন কোম্পানীর লোকজনেরা এই হাড়ের গুড়ো ক্রয় করেন।
সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, বিষয়টা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে না পড়লেও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ফেলে দেওয়া হাড় গুড়ো করে ওষুধ কোম্পানীর কাছে বিক্রি করছে।
তিনি আরও জানান, হাড়ের গুড়া একটি প্রাকৃতিক জৈব সার, যা প্রানীর হাড় থেকে উৎপাদিত হয়। সাধারণত গরু, ছাগল ও ভেরার হাড়কে নির্দিষ্ট আকারে গুড়ো করে এটি তৈরি করা হয়। হাড়ের গুড়ায় এমন উপাদান রয়েছে যা গাছের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। সম্পাদনা: ইস্রাফিল ফকির
প্রতিনিধি/আইএফ