শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: আইনজীবী পরিচয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তার সহযোগি হিসেবে শ্যালককেও গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার (২৬ মার্চ) রাতে কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (২৭ মার্চ) এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব কুমিল্লার উপপরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন, মো. এহতেশামুল হক ওরপে কথিত এ্যাডভোকেট নোমান (৩৪)। তিনি ঝাউতলা এয়ালাকার মো. শামসুল হকের ছেলে। তার শ্যালক জাহিদ হাসান ভূইয়া (২১)। জাহিদ বুড়িচংয়ের বাহেরচরের মোঃ মহসীন ভূইয়ার ছেলে।
র্যাব কর্মকর্তা সাকিব জানান, ২০০৯ সালে ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইন এ ভর্তি হন নোমান। ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করেন। পড়াশোনায় নিজের অক্ষমতার কারণে সেখান থেকেও ছিটকে পড়েন এবং ২০১৪ সালে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ফারুক নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে আইন বিষয়ে অনার্স উত্তীর্ণ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন।
পরবর্তীতে নোমান তার পরিচিত বন্ধু কাউসারের মাধ্যমে ২০১৫ সালে কুমিল্লা কোর্টের এক আইনজীবীর একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। আইনজীবীর যাবতীয় কাজ করার জন্য একজন লোকের প্রয়োজন হলে তিনি নোমানকে তার নিজের অধীনে নিয়োগ করেন। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে নোমান পায়ের ব্যাথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে ছয় মাস কর্মবিরতিতে থাকে। ছয় মাস পর আইনজীবির কাছে গেলে তিনি নতুন একজনকে নিয়োগ করেছেন বলে নোমানকে জানান।
পরে ২০১৭ সালে নোমান কোর্টেই কর্মরত অন্য এক আইনজীবীর কাজ শুরু করে। ২০১৭ সালে ও ২০২১ সালে সে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভের আশায় বার কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ফেল করেন। এর মাঝে নোমান মুসলিম বিবাহ সম্পাদনসহ অন্যান্য আইনি কার্যক্রম রপ্ত করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, কোর্টের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের পর সে মোটা অংকের টাকা উপার্জনের পথ খুজতে থাকে। সে নিজের নামে একটি ভুয়া এ্যাডভোকেট কার্ড ও মানবাধিকার কার্ড তৈরি করে।
এরপর তার বন্ধু কাউসারের মাধ্যমে পরিচিত হয় মো. রেজাউল করিম খান (৩৩) নামের শিক্ষানবিশ আইনজীবির সাথে। নিজেকে আইনজীবী বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার এমসিকিউ পর্বে পাশ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এবং তার পরিচিত অন্যান্য শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার এমসিকিউ পর্বে পাশ করিয়ে দিতে পারবে বলে টাকা হাতিয়ে নেয়।
মেজর সাকিব আরও জানান, গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, বার কাউন্সিল এমসিকিউ পরীক্ষার উত্তরপত্র, আইন সম্পর্কিত প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র, ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া সার্টিফিকেট, হলফনামা, একটি এটিএম কার্ড, একটি সিটি ব্যাংকের চেকবই, স্ট্যাম্প, কথোপকথনের স্ক্রীনশট, দুইটি পেনড্রাইভ, দুইটি আইনজীবী সম্বলিত মনোগ্রাম, দুইটি কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি, পাঁচটি মোবাইল ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে দুজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। সম্পাদনা: ইস্রাফিল ফকির
প্রতিনিধি/আইএফ/জেএ